প্রাক্তন শীর্ষ নেতা মোল্লা ওমরের ছেলে ইয়াকুব খুন হওয়ার দাবিতে আরও জটিল হল আফগান তালিবানের অন্তর্দ্বন্দ্ব। ইয়াকুবের খুন নিয়ে সরাসরি পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছেন আফগান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার জাহির কাদির। তবে তাঁর দাবি মানতে রাজি নয় তালিবান।
মোল্লা ওমরের মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পরেই প্রকাশ্যে এসেছে তালিবানি দ্বন্দ্ব। ওমরের ছেলে ও ভাই-সহ বেশ কয়েক জন শীর্ষ নেতা তাঁর ঘোষিত উত্তরসূরি আখতার মনসুরের নেতৃত্ব মানতে নারাজ। পাকিস্তানের কোয়েটায় থাকা তালিবানি পরিচালন পরিষদ (শুরা) মনসুরের নেতৃত্বের কথা ঘোষণা করেছিল। তাই ওই ঘোষণার পিছনে পাকিস্তানের সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। নেতৃত্ব নিয়ে সংঘর্ষে রবিবারই পশ্চিম হেরাটে ৯ জন তালিবান জঙ্গি নিহত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আজ তালিবান-বিরোধী নেতা ও ডেপুটি স্পিকার জাহির কাদির দাবি করেছেন, ইয়াকুব মোল্লা ওমরের স্থান দখল করার চেষ্টা করছিলেন। তাই তাঁকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনার পিছনে পাক মদত আছে। তালিবানের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ইয়াকুব খুন হওয়ার খবর পুরোপুরি মিথ্যে। আফগান সরকার তথা তালিবান-বিরোধীদের পক্ষ থেকে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে।
তবে পাকিস্তান যতই মধ্যস্থতা করুক, এই দ্বন্দ্বে যে আশরফ ঘানি সরকার ও তালিবানের শান্তি প্রক্রিয়া ধাক্কা খেতে পারে তারও ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে আজ। শান্তি প্রক্রিয়া চালানোর জন্য কাতারে একটি দফতর খুলেছিল তালিবান। আজ সেই দফতরের অধিকর্তা ও মোল্লা ওমর-ঘনিষ্ঠ নেতা সৈয়দ মহম্মদ তায়েব আগা ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর মতে, মোল্লা ওমরের মৃত্যুর খবর লুকিয়ে রাখা ‘ঐতিহাসিক ভুল’। তার পরে আফগানিস্তানের বাইরে থেকে নয়া নেতা ঘোষণা করা আরও বড় ভুল।
কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, মৃত মোল্লা ওমরই এখনও তালিবানকে চালাচ্ছেন, এই ধারণাকে জিইয়ে রাখা পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তা ছাড়া ঘানি সরকার-তালিবান শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ইসলামাবাদকে চাপ দিচ্ছে আমেরিকা ও চিন। তাই ওমরের মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করে তালিবানকে নয়া চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করছে আইএসআই। কিন্তু মনসুর আখতারের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকায় সমস্যা বেড়েছে।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, পাকিস্তান আরও ‘গ্রহণযোগ্য’ তালিবান তৈরি করছে বলে আপাতত মেনে নিয়েছে পশ্চিম দুনিয়া ও চিনের প্রভাবশালী শিবির। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা প্রমাণ করছে, আফগানিস্তানে, এমনকী তালিবানের অন্দরেই অনেকে সে কথা বিশ্বাস করেন না।
এই দ্বন্দ্ব আফগানিস্তানকে ফের গৃহযুদ্ধের পথে টেনে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রতিবেশী অনেক দেশেরই।