বাহার জালালি।
চলতি মাসের গোড়ায় কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কালো পোশাকে ঢাকা আফগান মেয়েদের দেখে চমকে উঠেছিলেন তিনি। তালিবান শাসনের সমর্থনে শ’তিনেক আফগান মহিলা সে দিন জড়ো হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁদের সকলের হাতে তালিবানের পতাকা। বছর ছাপান্নর অধ্যাপিকা বাহার জালালি তখনই ঠিক করে ফেলেছিলেন, কিছু একটা করতেই হবে। তাঁর মনে হয়েছিল, আফগান মেয়েদের পোশাক নিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।
তার পরেই টুইটারে ঝলমলে রঙিন পোশাক পরে নিজের ছবি পোস্ট করেন বাহার। হ্যাশট্যাগে লেখেন ‘ডুনটটাচমাইক্লোদস’। উদ্দেশ্য একটাই, তালিবানের পোশাক ফতোয়ার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেওয়া। সেটা ১২ সেপ্টেম্বর। প্রবল জনপ্রিয় হয় বাহারের সেই পোস্ট। তাঁর দেখাদেখি অন্য আফগান মহিলারাও মুখ না ঢেকে রঙিন পোশাক পরে নিজেদের ছবি পোস্ট করতে শুরু করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বরাবরই নারী স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করা বাহার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কেন তিনি টুইটারে এই ভাবে ‘পোশাক বিপ্লব’ শুরু করেছিলেন। তাঁর বয়স যখন সাত, আফগানিস্তান ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিল বাহারের পরিবার। এখন তিনি ওয়াশিংটনের কাছে মেরিল্যান্ডের গ্লেনউডে থাকেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আফগান মহিলারা হিজাব পরেন না। আমরা শিফনের এক ধরনের স্কার্ফ পরি, যেখানে চুল দেখা যায় স্পষ্ট। আফগানিস্তানের ইতিহাস, ঐতিহ্য যাঁরা জাননে, তাঁরা বুঝবেন, সে দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা যে পোশাক পরে এসেছিল, তা আফগানিস্তানের সংস্কৃতি নয়। আফগানিস্তানের মেয়েরা ও ভাবে পোশাক পরেন না। তাঁরা রঙিন পোশাক পরতে ভালবাসেন। গোটা বিশ্বকে তা বোঝানো দরকার।’’
মাঝখানে একটা দীর্ঘ সময় আফগানিস্তানে থেকেছেন বাহার। ২০০৯ সাল থেকে সাড়ে আট বছর কাবুলে একটি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে জেন্ডার স্টাডিজ় পরাতেন। তার পরে ফের আমেরিকায় ফিরে আসেন। জানালেন, ছোটবেলায় ধর্মনিরপেক্ষ আফগানিস্তান দেখেছেন তিনি। আফগান মেয়েরা সেই সময়ে কাবুলের রাস্তায় ছোট স্কার্ট আর স্লিভলেস টপ পরে ঘুরতেন। এখন মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অজস্র শর্ত চাপিয়েছেন তালিবান নেতৃত্ব। বাহারের কথায়, ‘‘এখনকার তরুণ আফগান প্রজন্ম তালিবানি শাসন দেখেনি। এই অন্ধকার যুগের সঙ্গে কী ভাবে ওরা মানিয়ে চলবে, আমি সত্যিই বুঝে উঠতে পারছি না।’’