Afghan Taliban

Afghanistan: আমাদের সুরক্ষা এখন কে নিশ্চিত করবে?

ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো ঠিক যেন পঁচিশ বছর আগে ফিরে গিয়েছে। সেই সঙ্গে আমরাও। আমরা, মানে যাঁরা আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ।

Advertisement

ফরিদা নেকজ়াদ

কাবুল শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২১ ০৫:৩৭
Share:

n তালিবানের বিরুদ্ধে লড়তে অস্ত্র তুলে নিয়েছে প্রাক্তন মুজাহিদিন। আফগানিস্তানের হেরাট প্রদেশে। রয়টার্স

ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো ঠিক যেন পঁচিশ বছর আগে ফিরে গিয়েছে। সেই সঙ্গে আমরাও। আমরা, মানে যাঁরা আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ।

Advertisement

খবরের শিরোনাম এখন একটাই। দেশের একের পর এক জেলায় আধিপত্য কায়েম করছে তালিবান। এলাকা দখল করেই ফতোয়া দিচ্ছে, হিজাব আর বোরখা ছাড়া মেয়েরা রাস্তায় বেরোতে পারবেন না। একা একা চিকিৎসকের কাছে যাওয়াও বারণ তাঁদের। মহিলা সাংবাদিক বা মানবাধিকার কর্মীদের তো বাড়ি থেকে বেরোনোই বারণ।

মনে হচ্ছে ২০২১ নয়, ১৯৯৬-এ দাঁড়িয়ে রয়েছি। সে বছরই আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে তালিবান। পাঁচ বছর ধরে, ২০০১ পর্যন্ত, রাজত্ব চালিয়েছিল তারা। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি যেন আগের থেকেও খারাপ হতে চলেছে। যত ভাবছি, শিউরে উঠছি। সংবাদমাধ্যমের বাক্‌স্বাধীনতা থেকে শুরু করে মহিলাদের স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করার অধিকার— কুড়ি বছর ধরে তিল তিল করে দেশটাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি আমরা। মানে অতিসাধারণ আফগান নাগরিকেরা। অনেক আত্মত্যাগের পরে আজকের আফগানিস্তান গড়তে পেরেছিলাম আমরা। মানবাধিকার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে লড়াই পর্যন্ত করেছি। কিন্তু আজ যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি আমাদের সব প্রচেষ্টা এক ধাক্কায় ব্যর্থ হতে চলেছে।

Advertisement

আফগানিস্তানের মাটি থেকে ন্যাটো আর আমেরিকান বাহিনী বিদায় নিতে শুরু করেছে কয়েক মাস হল। এর মধ্যেই চারশো জেলার অন্তত ১৮০টি তালিবানের দখলে চলে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে তালিবান নেতারা আরও অনেক বেশি সংখ্যক জেলা নিজেদের দখলে রাখার দাবি করেছে গত কাল। কিন্তু দেশের বাহিনী বেশ কয়েকটি জেলা পুনরুদ্ধার করেছে বলে খবর।

কিন্তু আমাদের ভয় তাতে এতটুকুও কাটছে না। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি অবশ্য নাগাড়ে বলে চলেছেন তালিবান আফগানিস্তান দখলের দিবাস্বপ্ন দেখছে। তাঁর আশ্বাস, আফগান সরকার কোনও মতেই তালিবানের হাতে বিক্রি হয়ে যাবে না। কিন্তু এক বার যদি কাবুলে ওরা নিজেদের আধিপত্য কায়েম করে ফেলে, তা হলে কী হবে? সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আমাদের সেনাবাহিনীর আরও রক্ত ঝরবে। মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে সাংবাদিক বিশেষত মহিলা কর্মীরা তো বাড়ি থেকে বেরোতে এখনই ভয় পাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে তালিবানকে আলোচনার টেবিলে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা। আমরা আসলে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। দেশের মানুষ শান্তি চায়। চায় সাধারণ মানুষের আর্থিক উন্নয়ন। করোনা থেকে মুক্তি। আমরা চাই সরকার আর তালিবান এমন এক চুক্তিতে আসুক, যেখানে উভয় পক্ষের মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের কথা শুনছে কে?

ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দাবি করে আসছেন, আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষই এখন দেশে বদল আনবেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন কী ভাবে? যে হারে একের পর এক এলাকা তালিবান দখল করছে, আমাদের বিশেষ করে আফগান মেয়েদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা কে দেবে? কুড়ি বছর আগে তালিবানকে উৎখাত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখানে এসেছিল আন্তর্জাতিক বাহিনী। কিন্তু এখন কেন এ ভাবে আমাদের একা ফেলে চলে গেল তারা! আমাদের প্রতি এই অবিচার, তালিবানের এই অত্যাচার এখন কে রুখবে!

(লেখক: সেন্টার ফর দ্য প্রোটেকশান অব আফগান উইমেন জার্নালিস্টস-এর ডিরেক্টর)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন