কোথায় স্বজন, দিশাহারা শহর

বেরনোর পথটায় তখন লন্ডভন্ড অবস্থা। ম্যাঞ্চেস্টার এরিনার এই ‘ফয়ার’ অংশেই হামলাকারী আইএস জঙ্গি আইডি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে নিজেকে। সেটা প্রাথমিক ভাবে বুঝতে পারেননি কেউই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লন্ডন শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ০৪:১৭
Share:

স্মরণ: নিহতদের জন্য। ম্যাঞ্চেস্টারের সেন্ট অ্যান স্কোয়ারে। ছবি :এপি।

বেরনোর পথটায় তখন লন্ডভন্ড অবস্থা। ম্যাঞ্চেস্টার এরিনার এই ‘ফয়ার’ অংশেই হামলাকারী আইএস জঙ্গি আইডি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে নিজেকে। সেটা প্রাথমিক ভাবে বুঝতে পারেননি কেউই। শুধু আতঙ্কে ছুটোছুটি আর হুড়োহুড়ি। পরে বিস্ফোরণস্থল থেকে উদ্ধার হয় নাট, বল্টু, ধাতব টুকরো।

Advertisement

বেরনোর ওই অংশ দিয়ে পথটা এসে পড়ে ভিক্টোরিয়া ট্রেন এবং ট্রাম স্টেশনে। পপ গানের অনুষ্ঠান শেষ হলে বাচ্চাদের নেবেন বলে এই জায়গাতেই অনেক অভিভাবক ভিড় করে ছিলেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই জায়গায় বিক্রি হচ্ছিল আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসাট টি শার্ট আরও স্মারক। বিস্ফোরণ ঘটার পরে সবটাই ছন্নছাড়া হয়ে যায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ম্যাঞ্চেস্টার ভিক্টোরিয়া স্টেশন। বাতিল হয় ট্রেন। ঘটনার পর পর খালি করে দেওয়া হয় এখানকার আর্নডালে শপিং সেন্টার। কিছু ক্ষণ পরে অবশ্য খোলা হয় সেটি।

বিস্ফোরণের পরে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় অন্তত ৬০টি অ্যাম্বুল্যান্স। শহরের আটটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে আহতদের। এর মধ্যে ১২ জনের বয়স ষোলোর নীচে। কেউ কেউ স্বজনকে খুঁজতে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

Advertisement

বিস্ফোরণের প্রথম বলি বছর আঠারোর কলেজ-ছাত্রী জর্জিনা ক্যালান্ডার। ল্যাঙ্কাশায়ারের রানশ কলেজে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা নিয়ে পড়াশোনা করতেন তিনি। আরিয়ানার অন্ধ ভক্ত জর্জিনা ২০১৫ সালে পপ তারকার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। কালকের অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন গত বার আরিয়ানার সঙ্গে তোলা সেলফি। প্রাণ হারিয়েছে আট বছরের স্যাফি রোজ রুসোও। ল্যাঙ্কাশায়ারের টার্লটন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী সে।

আরও পড়ুন:ফের আইএস হানা ব্রিটেনে

১৫ আর ১৭-র দুই সন্তানকে ফেরত নিতে এসেছিলেন এমা জনসন। যেখানে টি শার্ট বিক্রি হচ্ছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন এমা। বিস্ফোরণের ধাক্কায় সেখানে একটা কাচ ভেঙে যায়। গোটা বাড়িটা কেঁপে ওঠে বলে জানাচ্ছেন তিনি। পরে মেয়েদের খুঁজে পান তিনি। কোনও মতে নিজের বোনকে ভিড়ের মধ্যে থেকে খুঁজে পেয়েছে কিশোরী আবিগালি ওয়াকার-ও। ততটা সৌভাগ্য হয়নি শার্লট ক্যাম্পবেলের। কনসার্টের পর থেকে নিজের ১৫ বছরের মেয়ে অলিভিয়াকে খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

মঙ্গলবার ম্যাঞ্চেস্টারে গিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। ঘটনার পর পরই তিনি বলেন, ‘‘যন্ত্রণাদায়ক জঙ্গি হামলা। নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশি আছি।’’ নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধায় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দোষীদের ‘ইভল লুজার’ বলেছেন। সমবেদনা জানিয়েছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও।

ওয়েস্টমিনস্টার হামলার পর থেকে ব্রিটেনে ফের জঙ্গি হামলার একাধিক সতর্কতা ছিল। প্রায় রোজই কেউ না কেউ ধরা পড়ছিল জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত থাকার সন্দেহে। তা সত্ত্বেও এত বড় ঘটনা কী ভাবে ঘটে গেল যা ফিরিয়ে আনছে ২০০৫ সালের ৭ জুলাই লন্ডনে টিউব বিস্ফোরণের স্মৃতি? সেই ঘটনায় প্রাণ হারান ৫২ জন। তার পর থেকে এত বড় মাপের হামলা আর দেখেনি ব্রিটেন। পুলিশের একটা অংশের দাবি, ধারণাটা ছিল যেন ছোট মাপের হামলাই হবে, গাড়ি নিয়ে বা ছুরি নিয়ে। ম্যাঞ্চেস্টারের এই বিস্ফোরণ এ বার তাদের চিন্তা আরও বাড়াল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন