ফি শনিবার ঘড়ি বন্ধক রেখে রুটি কিনতে হত অ্যালিসকে

দিনের পর দিন সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর প্রশ্ন না-শোনার ভান করতেন প্রেসিডেন্ট আইজ়েনহাওয়ার। তবু হাল ছাড়েননি তরুণী সাংবাদিক। আশা রাখতেন, দিন বদলাবে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

দিশারি: হোয়াইট হাউসের সামনে অ্যালিসের এই ছবির আদলেই তৈরি হয়েছে ব্রোঞ্জ মূর্তি (ডান দিকে)।

দিনের পর দিন সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর প্রশ্ন না-শোনার ভান করতেন প্রেসিডেন্ট আইজ়েনহাওয়ার। তবু হাল ছাড়েননি তরুণী সাংবাদিক। আশা রাখতেন, দিন বদলাবে। দেশের কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের হাতে ধীরে ধীরে অধিকার উঠে আসবে। আর সসম্মান সাংবাদিকতা করার সুযোগ পাবেন তিনি।

Advertisement

অ্যালিস ডানিগান। আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হোয়াইট হাউস রিপোর্টার। ওয়াশিংটনের সংবাদ-সংগ্রহশালা ‘নিউজ়িয়াম’-এ অ্যালিসের ব্রোঞ্জ মূর্তি বসছে এই সপ্তাহেই।

সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরের কথা। তখন যে সব সাংবাদিক হোয়াইট হাউসে গিয়ে খবর সংগ্রহ করতেন, তাঁদের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ বা মহিলা সাংবাদিক প্রায় ছিলেন না বললেই চলে। ব্যতিক্রম অ্যালিস। ‘অ্যাসোসিয়েটেড নিগ্রো প্রেস’-এর ওয়াশিংটন ব্যুরো চিফ হিসেবে প্রতিদিন হোয়াইট হাউসে যেতেন অ্যালিস। উপস্থিত থাকতেন প্রেসিডেন্টের সাংবাদিক বৈঠকে। কিন্তু তিনি যে রয়েছেন, তা যেন খেয়ালই করতেন না তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইজ়েনহাওয়ার। ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট’, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট’ করে বিস্তর চেঁচাতেন অ্যালিস। ফিরেও তাকাতেন না প্রেসিডেন্ট। ‘‘অত্যন্ত অপমানজনক ছিল সেই দিনগুলো,’’ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন অ্যালিস। ‘‘তবু হাল ছাড়িনি। পরের দিন ফের যেতাম। একই রকম ভাবে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতাম।’’

Advertisement

আইজ়েনহাওয়ারের আগে প্রেসি়ডেন্ট ট্রুম্যানের আমলেও হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকতা করেছেন অ্যালিস। ট্রুম্যানের সফরসঙ্গী হিসেবেই জীবনের প্রথম বড় ‘স্কুপ’ পেয়েছিলেন অ্যালিস। প্রেসিডেন্ট যাচ্ছিলেন ওয়েস্ট কোস্ট সফরে। ‘‘আমিও সঙ্গে যেতে চাই,’’ তাঁর বসকে বলেন অ্যালিস। ‘‘মেয়েরা এ ধরনের সফরে যায় না,’’ বলে এক কথায় সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন ‘অ্যাসোসিয়েটেড নিগ্রো প্রেস’-এর মালিক তথা প্রধান সম্পাদক ক্লড বার্নেট। তবু হাল ছাড়েননি অ্যালিস। নিজেই খরচাপাতি জোগাড় করে চেপে বসেন প্রেসিডেন্টের ট্রেনে। মাঝরাত্তিরে ট্রেন থেমেছে মন্টানার মিসৌলাতে। প্ল্যাটফর্মে হাজির শ’য়ে শ’য়ে কৃষ্ণাঙ্গ পড়ুয়া। প্রেসিডেন্টকে সকলের একটাই প্রশ্ন— ‘কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার নিয়ে কিছু বলুন’। রাতপোশাকে ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান বলেছিলেন— ‘‘আমি চাই, এ দেশের প্রতিটি মানুষ নাগরিক অধিকার পান।’’ সাংবাদিক হিসেবে সেই ঘটনার একমাত্র সাক্ষী ছিলেন অ্যালিস। পরের দিন তাঁর কাগজে খবর বার হয়, ‘মাঝরাত্তিরে নাগরিক অধিকারের সমর্থনে কথা বললেন পাজামা পরা প্রেসিডেন্ট’!

তিন-তিন জন প্রেসিডেন্টেকে হোয়াইট হাউসে পেয়েছেন অ্যালিস। আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে সব থেকে পছন্দের ছিলেন প্রেসিডেন্ট কেনেডি। যখনই কোনও প্রশ্ন করার জন্য হাত তুলতেন অ্যালিস, প্রেসিডেন্ট কেনেডি তাঁকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতেন।

লড়াই শুধু অসাম্যের সঙ্গে নয়। কেরিয়ারের প্রথম জীবনে তাঁর লড়াই ছিল দারিদ্রের সঙ্গেও। প্রতি সোমবার মাইনে পেতেন। কিন্তু তা এতটাই কম যে, শনিবার পুরোদস্তুর ফাঁকা হয়ে যেত পকেট। তাই প্রতি শনিবার অফিস থেকে বেরিয়ে নিজের হাতঘড়ি বাঁধা রাখতে যেতেন অ্যালিস। বন্ধক-দোকানি তাঁকে দিতেন মাত্র পাঁচ ডলার, যা দিয়ে শুধু রবিবারের রুটিটুকুই কেনা যেত।

সোমবার সেই ঘড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে হাঁটা দিতেন হোয়াইট হাউসের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন