Taliban regime

Afghanistan Crisis: ‘প্রাণপণ দৌড়েও বাঁচাতে পারলাম না মেয়েটাকে’

কাবুল বিমানবন্দরের কাঁটাতার দেওয়া প্রাচীরের বাইরে বেশ চওড়া করে পরিখা কাটা। কাল বিস্ফোরণের পরে এখানেই পড়ে ছিল ডজন ডজন দেহ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাবুল শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২১ ০৬:০৭
Share:

আব্দুল রহমান আল-লোগারি নামে এই আত্মঘাতী জঙ্গির ছবিই প্রকাশ করেছে আইএস-কে।

সকাল থেকেই সমাজমাধ্যমে ঘুরছিল ছবিটা। প্রতিদিনের মতো আজও সকালে অনেকে ভিড় করেছিলেন কাবুলের হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাইরে। মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখে কে বলবে মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে এখানেই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা! যার জেরে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে দেড়শো পেরিয়েছে। দিন ফুরোলে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। শুধু তাই নয়, আরও হামলা হতে পারে বলে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশ ছাড়তে মানুষ কতটা মরিয়া হলে এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আর চূড়ান্ত সতর্কতা উপেক্ষা করে ফের একই জায়গায় ভিড় জমাতে পারে? যদিও রাতের দিকে আফগান একটি সংবাদ সংস্থা দাবি করে, ওই সব ছবি ভুয়ো। পাল্টা ভিডিয়ো পোস্ট করে তারা দাবি করে, বিমানবন্দরে পৌঁছনোর সমস্ত রাস্তা আজ বন্ধ রেখেছে তালিবান বাহিনী। ওই চত্বর এ দিন খালি ছিল।

Advertisement

কাবুল বিমানবন্দরের কাঁটাতার দেওয়া প্রাচীরের বাইরে বেশ চওড়া করে পরিখা কাটা। কাল বিস্ফোরণের পরে এখানেই পড়ে ছিল ডজন ডজন দেহ। সবগুলো চেনাও যাচ্ছিল না। ইতিউতি ছড়িয়ে পড়েছিল তাল পাকানো মাংসের দলা, চাপ চাপ রক্ত, কারও হাত, কারও পা বা বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। পরিচয় গোপন রেখে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন, বিমানবন্দরের অ্যাবি গেটের বাইরে প্রথম বিস্ফোরণের পরে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন মানুষ। হুড়োহুড়ি থামাতে গুলি চালাতে শুরু করে তালিবান বাহিনী। তাতে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়তে থাকে। তিনি বললেন, ‘‘এক জনকে দেখলাম, রক্তাক্ত এক শিশুকে কোলে নিয়ে দৌড়চ্ছেন। আমেরিকার বিমানে ঠাঁই পাওয়ার আশা নিয়ে কাল আমিও স্ত্রী এবং তিন সন্তানের সঙ্গে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু ওই হট্টগোলের মধ্যে কাগজপত্র সব হারিয়ে ফের ঘরে ফিরতে বাধ্য হলাম।’’

আমেরিকার বাহিনীর হয়ে দোভাষীর কাজ করতেন এমন এক আফগান যুবক বিস্ফোরণের সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন। রক্তাক্ত এক বালিকাকে উদ্ধার করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচাতে পারেননি। তিনি বললেন, ‘‘বাচ্চাটাকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে মাথায় কিছু আসছিল না। ওকে কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে দৌড়লাম। কিন্তু যেতে যেতেই মেয়েটা মারা গেল। প্রাণপণে দৌড়েও বাঁচাতে পারলাম না মেয়েটাকে।’’ কাবুলের বড় বড় সব হাসপাতালে এখন উপচে পড়া ভিড়। অক্সিজেন, শয্যা, চিকিৎসক— সব নিয়েই টানাটানি চলছে।

Advertisement

ভিড়ে স্থানীয় আফগানদের সঙ্গে ছিলেন আমেরিকার বিশেষ অভিবাসন দফতরের এক কর্মী। গত কালের ঘটনার পরে উড়ান ধরা হয়নি তাঁরও। ওই কর্মীর কথায়, “মনে হচ্ছিল যেন কানের পর্দা ফেটে রক্ত বেরিয়ে এসেছে।” বিস্ফোরণের অভিঘাতে কয়েক ফুট দূরে ছিটকে পড়েছিলেন তিনি। তবে বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর সেই সৌভাগ্য হয়নি। যাঁদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে বিমানবন্দরে ঢোকার অপেক্ষা করছিলেন, পর মুহূর্তে সেই মানুষগুলোকে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে দেখে জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ওই কর্মী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন