কোরীয় উপদ্বীপের আকাশে দাপিয়ে যে ভাবে বোমাবর্ষণের মহড়া দিল আমেরিকা, তাকে উত্তর কোরিয়ার প্রতি চূড়ান্ত সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছে আন্তর্জাতিক মহল। ছবি: এএফপি।
বিরল হুঁশিয়ারি আমেরিকার। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানকে সঙ্গে নিয়ে কোরীয় উপদ্বীপে বোমাবর্ষণ করল মার্কিন বাহিনী। গোটা বিশ্বের সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করে ভয়ঙ্কর সামরিক আস্ফালন দেখাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। চলতি মাসেই পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা। তার পরে জাপানের উপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে গোটা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উত্তেজনা লহমায় বাড়িয়ে দিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার এই একতরফা আস্ফালন আর সহ্য করা হবে না, স্পষ্ট বুঝিয়ে দিল আমেরিকা। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের বিমান বহরকে সঙ্গে নিয়ে রবিবার কোরীয় উপদ্বীপের আকাশে উড়ল মার্কিন স্টেল্থ ফাইটার এবং বোমারু বিমান। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তের খুব কাছে বোমাবর্ষণও করা হল। উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণ করতে যে তিন দেশের জোট সম্পূর্ণ প্রস্তুত, তা খোলাখুলিই বুঝিয়ে দিল ওয়াশিংটন।
আজ নয়, গতকালই কোরীয় উপদ্বীপের আকাশে গর্জন করতে দেখা গিয়েছিল মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলিকে। কিন্তু শুধু আকাশে উড়েই যে ক্ষান্ত হয়নি ফাইটার এবং বম্বারগুলি, তা জানা গিয়েছে আজই। দক্ষিণ কোরিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে যে ডিমিলিটারাইজড জোন বা বাহিনী-মুক্ত অঞ্চল রয়েছে, তার খুব কাছেই বোমা হামলার মহড়া চালিয়েছে আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। আসল বোমা ফেলে হামলার মহ়ড়া হয়েছে বলে পেন্টাগন সূত্রের খবর।
গুয়াম থেকে জাপান হয়ে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়েছে ত্রিদেশীয় বিমান বহর। ছবি: এএফপি।
মোট ১৪টি যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছিল রবিবারের মহড়ায়। ৬টি ছিল মার্কিন বিমান। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান আরও ৪টি করে যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছিল। আমেরিকার ৬টি বিমানের মধ্যে দু’টি ছিল বি-১বি বম্বার, সেগুলি উড়েছিল গুয়াম দ্বীপের অ্যান্ডারসেন বিমানঘাঁটি থেকে। আর জাপানের ইওয়াকুনি থেকে উড়েছিল মার্কিন মেরিন কোরের ৪টি এফ-৩৫বি স্টেল্থ ফাইটার। এই বিমানগুলির সঙ্গে ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার চারটি এ-১৫ ফাইটার এবং জাপানের ৪টি এফ-২ ফাইটার।
আরও পড়ুন: মার্কিন চাপের পাল্টা দিতে চায় পাকিস্তান
আরও পড়ুন: পিয়ংইয়ংকে পাক সাহায্য? তদন্তের দাবি সুষমার
জাপানের কিউশু দ্বীপের কাছ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তরতম প্রান্ত অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ার সীমানা পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়েছে ১৪টি যুদ্ধবিমান। কিম জং উনের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র যে অঞ্চলে ত্রাসের সঞ্চার করেছে, ঠিক সেই অঞ্চলের আকাশ জুড়েই গর্জন করেছে তিন দেশের বিমান বহর। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের যে গুয়াম দ্বীপের মার্কিন সামরিক ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন, সেই গুয়াম থেকেই কোরীয় উপদ্বীপের দিকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বোমারু বিমান। তার পর উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের খুব কাছে বোমাবর্ষণের মহড়া হয়েছে। পিয়ংইয়ংকে খুব স্পষ্ট বার্তা দিল ওয়াশিংটন, টোকিও এবং সোল— যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুত তিন দেশের সামরিক জোট। রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি কঠোর সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘‘উত্তর কোরিয়া যদি এই বেপরোয়া আচরণ চালিয়ে যায়, যদি নিজেদের সুরক্ষা এবং সহযোগী দেশগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমেরিকাকে সক্রিয় হতে হয়, তা হলে উত্তর কোরিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।’’