অভিজিত্ রায় ও অনন্তবিজয় দাস
দেশে একের পর এক ব্লগার হত্যায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল অনেক দিন ধরে। শেষ পর্যন্ত অভিজিৎ রায় এবং অনন্তবিজয় দাস— এই দুই ব্লগারের খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক ব্রিটিশ নাগরিক-সহ তিন জনকে আজ গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তাদের দাবি, বছর ৫৮-র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক তৌহিদুর রহমানই এই দুই খুনের চক্রাম্ত করেছিল।
র্যাব-এর মুখপাত্র কম্যান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন, ধৃত তিন জনই আনসারুল্লা বাংলা টিম বা আনসার বাংলার সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশে আল কায়দা গোষ্ঠীর শাখা সংগঠন বলে নিজেদের দাবি করে এটি। তৌহিদুর ২০১১ পর্যন্ত লন্ডনে থাকত। সোমবার রাতে ঢাকার নীলক্ষেত এবং ধানমণ্ডি এলাকা থেকে তৌহিদুর-সহ তিন জনকে ধরা হয়। বাকি দু’জনের নাম সাদেক আলি মিঠু এবং আমিনুল মল্লিক। এদের মধ্যে তৌহিদ আনসার বাংলায় অর্থ জোগাত। আর বাকি দু’জন এই জঙ্গি গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য।
র্যাব জানিয়েছে, তৌহিদুর রহমান এক সময়ে বাংলাদেশ বিমানে চাকরি করত। ১৯৯০ সালে সে ব্রিটেন চলে যায়। আইটি নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ করে। তবে ব্রিটেন যাওয়ার আগেই তার সঙ্গে আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানির পরিচয় হয়। লন্ডন থেকেই আনসার বাংলাকে অর্থসাহায্য করত তৌহিদুর। কাকে হত্যা করা হবে, তা-ও এক সময় ঠিক করতে শুরু করে সে। আইটি বিশেষজ্ঞ হওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় কোথায় কে কী লিখছে, তার খুঁটিনাটি খবর থাকত তার কাছে।
র্যাবের দাবি, সংগঠনের মাথা জসিমুদ্দিন রহমানি গ্রেফতার হওয়ার পরে তৌহিদুর বাংলাদেশে ফিরে আসে। অভিজিৎ রায় এবং অনন্তবিজয়কে খুনের পরিকল্পনা হয় বাংলাদেশে বসেই। র্যাব-এর মুখপাত্র কম্যান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, গাজিপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি জসিমুদ্দিনও এই চক্রান্তে জড়িত। তার ভাই আবুল বাশার জেলে জসিমুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে বাইরে তৌহিদদের তথ্য সরবরাহ করত। এ ভাবেই ব্লগারদের খুনের ছক কষা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল মোট পাঁচ জন। তার মধ্যে আজ এক জন পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। সে-ই সাদেক আলি মিঠু। এই ব্যক্তি জসিমুদ্দিনের বই ছাপানোর কাজ করত।
পর পর ব্লগার খুনে আনসারুল্লা বাংলা টিমের নাম জড়ানোয় এ বছর মে মাসে নিষিদ্ধ করা হয় সংগঠনটিকে। অভিজিৎ-ওয়াশিকুর-অনন্তবিজয়ের পরে মৌলবাদের বিরোধিতা করায় সম্প্রতি একই ভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় আর এক ব্লগার নিলয় নীলকে। গত সপ্তাহে তাঁর খুনে জড়িত সন্দেহে দু’জনকে ধরা হয়েছিল।