স্বস্তিতে সরকার

বাংলাদেশে জামাত নেতার ফাঁসি রদ

জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদির প্রাণদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। একাত্তরে খুন, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুঠপাট ও ধর্মান্তরের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি সাইদিকে প্রাণদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিলেন জামাতের এই নায়েবে আমির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৮
Share:

জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদির প্রাণদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। একাত্তরে খুন, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুঠপাট ও ধর্মান্তরের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি সাইদিকে প্রাণদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিলেন জামাতের এই নায়েবে আমির। এ দিন সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায়ে সেই সাজা বদল করল।

Advertisement

সরকার এই রায়কে সর্বোচ্চ আদালতের স্বাধীন মতামত বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু সাইদির ফাঁসির দাবিতে কাল থেকে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে অবস্থান শুরু করা গণজাগরণ মঞ্চের সদস্যরা এই রায়কে ‘সরকার-মৌলবাদী আঁতাঁতের রায়’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ সরকারকে দোষারোপ না-করে ব্যর্থতার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরকে দায়ী করেছেন। কমিটির আহ্বায়ক শাহরিয়ার কবির বলেন, “যুদ্ধাপরাধ আদালতে সাইদির বিরুদ্ধে মামলায় যে সব আইনজীবী আপ্রাণ পরিশ্রম করে জয় আদায় করেছিলেন, আপিল মামলায় তাঁদের ডাকা তো দূরের কথা, পরামর্শটুকু নেয়নি এজি অফিস। অথচ আন্তর্জাতিক আইনকানুনে সরকারি আইনজীবীরা আদৌ অভ্যস্থ নন। তার ফলেই সাইদির মতো এক জন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ফাঁসি থেকে পার পেয়ে গেল।” কবিরের কথায়, আমৃত্যু কারাবাস খুবই বড় শাস্তি। কিন্তু সাইদির বিরুদ্ধে যে সব অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে, তাতে তাঁর প্রাণদণ্ড প্রাপ্য ছিল বলেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মনে করেন। প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, শেখ হাসিনার সরকার এই রায়ে ঘরে-বাইরে বেশ খানিকটা স্বস্তিতেই থাকবে। ধর্মীয় নেতা হিসেবে দেলোয়ার হোসেন সাইদির সমর্থন জামাতে ইসলামির চৌহদ্দি ছাড়িয়ে অন্য দলের মানুষের মধ্যেও কম নেই। তাঁর ফাঁসি অনেকেই হয়তো মেনে নিতে পারতেন না। তা ছাড়া, যৌথ বাহিনীর একের পর এক অভিযানে জামাতের সংগঠন এখন অনেকটাই কোণঠাসা। সুপ্রিম কোর্ট সাইদির ফাঁসির রায় বহাল রাখলে নাশকতার মাধ্যমে তারা ফের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেত। আন্তর্জাতিক মহলেও জামাত নেতাদের ফাঁসির বিরুদ্ধে একটা জনমত গড়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা ও কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ধর্মীয় নেতাদের ফাঁসির বিরোধিতা করেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ইইউ। সরকারের এক কর্তার কথায় এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট যে সরকারকে অস্বস্তি থেকে বাঁচাল, শেখ হাসিনা তার জন্য বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন।

এই রায় উপলক্ষে কাল বিকেল থেকেই গোটা বাংলাদেশের নিরাপত্তা কঠোর করা হয়েছিল। ঢাকায় পুলিশের বিশেষ পাহারা ও টহলদারি চোখে পড়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ছিল সীমান্তরক্ষী বাহিনীও। খানাতল্লাশির পরে আইনজীবী-সহ সবাইকে আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেওয়া হয়। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি মহম্মদ মোজাম্মেল ও অন্য চার বিচারপতি আদালত কক্ষে আসেন। মাত্র তিন মিনিটে তাঁরা রায়ের সারাংশ পাঠ করে আদালত মুলতবি করে দেন। আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার পরে এই নিয়ে দ্বিতীয় যুদ্ধাপরাধের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হল। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ও কার্যকর করেছে সরকার। রায় ঘোষণার পরে দুপুরেই সরকারি জোটের ১৪ দল বৈঠকে বসে। পরিস্থিতি পর্য়ালোচনার পরে রায়কে স্বাগত জানায় তারা। তবে জামাত রায়কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করে কাল ও রবিবার দু’দফায় ৪৮ ঘণ্টা করে হরতালের ডাক দিয়েছে। সরকার তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, হরতালে নাশকতা ও সন্ত্রাসের চেষ্টা হলে কঠোর হাতে মোকাবিলা করা হবে।

Advertisement

আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, পছন্দ হোক বা না-হোক, সর্বোচ্চ আদালতের রায় মানতেই হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, প্রাণদণ্ড বহাল থাকবে বলেই তিনি আশাবাদী ছিলেন। এই রায় রিভিউয়ের সুযোগ থাকলে সরকার নিশ্চয়ই তা গ্রহণ করবে। শরিক নেতা বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, মানুষ ফাঁসির রায় চেয়েছিলেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে নিতেই হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন