সাইকেল চড়া কমলেও সাইকেল বিক্রি কিন্তু বাড়ছে বাংলাদেশের

ঢাকার রাজপথে রিক্সা অদৃশ্য। অলিগলিতে দেখা মেলে। তবে খুব কম। গতি আনতে রিক্সায় যতি। তার জায়গায় সিএনজি, মানে কলকাতার অটোরিক্সা। এখান থেকে সেখান ছুটন্ত সারাক্ষণ। বাস সার্ভিস সামান্য। ট্যাক্সি নেই বললেই চলে। ভরসা সিএনজি। সাইকেলের দিনও শেষ।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৮:০৭
Share:

ঢাকার রাজপথে রিক্সা অদৃশ্য। অলিগলিতে দেখা মেলে। তবে খুব কম। গতি আনতে রিক্সায় যতি। তার জায়গায় সিএনজি, মানে কলকাতার অটোরিক্সা। এখান থেকে সেখান ছুটন্ত সারাক্ষণ। বাস সার্ভিস সামান্য। ট্যাক্সি নেই বললেই চলে। ভরসা সিএনজি। সাইকেলের দিনও শেষ। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মোটরসাইকেল। নৌকাতেও দাঁড় বাইতে হয় না, চলে মোটরে। রিক্সার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া সাইকেল বা দু’চাকার প্যাডেল করে চালানো সাইকেলও লুপ্তপ্রায়। যেটুকু আছে মফঃস্বলে গ্রামেগঞ্জে। অথচ ফেলে দেওয়া এই সাইকেলের দৌলতেই বাংলাদেশের মাথায় নতুন পালক। বিশ্ব রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের কদর বাড়াচ্ছে সাইকেলই। বাংলাদেশের সাইকেলের আদর ইউরোপ-আমেরিকায়, রপ্তানিতে স্থান পঞ্চমে। ন’বছর আগে ছিল নবমে, আস্তে আস্তে ওপরে উঠছে। ঠিকঠাক চললে শীর্ষে পৌঁছতে সময় লাগবে না। প্রধান প্রতিযোগী চিন, তাইওয়ান উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ অনেক কম। পেরে উঠবে কী করে?

Advertisement

বাংলাদেশে একটি সাইকেল তৈরির শ্রমের খরচ মাত্র তিন ডলার। চিনে তার প্রায় পাঁচ গুণ। চীনের সাইকেল শ্রমিকরা মাসে বেতন পায় ৫০০ ডলার। বাংলাদেশে ১০০ ডলার। তাইওয়ানে শ্রমিকদের দিতে হয় মাসে ১২০০ ডলার। চিন-তাইওয়ান চাইছে বাংলাদেশের সাইকেল কিনে বিশ্ববাজারে ছড়াতে, তাতে তাদের লাভ বেশি। উৎপাদনের ঝঞ্ঝাটও কম। বাংলাদেশ তাতে রাজি নয়। তারা চলবে নিজের চালে, বিশ্বে বাংলাদেশের সাইকেলকে এক নম্বরে তুলে আনাই লক্ষ্য। সেই স্বপ্ন বাস্তবের খুব কাছাকাছি। পোশাক শিল্পে সাফল্যের পর সাইকেলে নজর। দুই শিল্পেই মহিলা শ্রমিক বেশি। তাদের নৈপুণ্যে বাংলাদেশে উৎপাদন উৎকৃষ্ট। কাজে শৃঙ্খলার সঙ্গে দক্ষতায় উৎপাদন বাড়ছে, মানও ঊর্ধ্বমুখী।

গাজিপুর, চট্টগ্রামে সাইকেল কারখানায় দিনরাত কাজ, থামলে চলে না। বিরতি মানেই লোকসান। ফাঁকিতে পিছিয়ে পড়া। বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ছে। যোগানে পাল্লা দিতে হবে যে। ঊন্নত দেশগুলোও বুঝছে সাইকেল ছাড়া চলবে না। গতির যুগে বাইসাইকেলের বিশ্ববাজার নিয়ে গ্নোবাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যানালিসিস অ্যান্ড ফোরকাস্ট ২০১০’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাইকেল সস্তা, পরিবেশবান্ধব, সুবহনীয় হওয়ায় বিশ্বব্যাপী সাইকেলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। বর্তমানে সাইকেলের সবচেয়ে বড়ো বাজার এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল। তার পরেই ইউরোপ, উত্তর আমেরিকার বাজার। এশিয়ায় সবচেয়ে বড়ো বাজার চিন, ইউরোপে জার্মানি। আমেরিকার রিসার্চ ব্যুরো রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮’তে সাইকেলের বিশ্ববাজার হবে ৬৪০০ কোটি ডলারের। তার সিংহভাগ দখল করতে চায় বাংলাদেশ। গত বছর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ কোটি ১৫ লক্ষ ডলার। এ বছর সেটা বাড়িয়ে দ্বিগুন করা হয়েছে। নতুন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

পঁচিশ টাকাতেই বাংলাদেশ

নতুন কারখানা মানে আরও কর্মসংস্থান। সাইকেলের যান্ত্রিকতা জটিল নয়, একটু ট্রেনিংয়েই দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা যায়। বাংলাদেশের সাইকেল সব থেকে বেশি যায় যুক্তরাজ্যে। প্রায় ৬৪ শতাংশ জার্মানিতে ১৪ শতাংশ, বেলজিয়ামে ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে সাইকেল আমদানি বাড়াতে চাইছে আমেরিকা। বর্তমানে বিশ্ববাজারে বড় বড় সাইকেল কোম্পানির মধ্যে রয়েছে অ্যাকসেল গ্রুপ, এন ভি অ্যাটলাস সাইকেলস, বেল স্পোর্টস কর্পোরেশন, ক্যানাডাল বাইসাইকেলস কর্পোরেশন, হ্যামিলটন ইন্ডাস্ট্রিজ। বাংলাদেশে আছে মেঘনা গ্রুপ। তারাই ৯০ শতাংশ সাইকেল রপ্তানি করে।

বাংলাদেশের সব থেকে বড় আয় এখন বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের পাঠান রেমিটেন্স থেকে। তার পর পোশাক শিল্প। তিন নম্বরে সাইকেল। সাইকেলকে ঠেলে ওপরে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ছে। জেলায় জেলায় সাইকেল করখানা খোলার প্রস্তুতি চলছে। নিতান্ত শ্লথ যান সাইকেলের ওপর ভর করেই রপ্তানি বাণিজ্য দুর্বার করার ব্যবস্থা হচ্ছে। ভাবনায় ভুল নেই। আয়োজনে ত্রুটি নেই। ঠিকঠাক চললে দশ বছরে বাংলাদেশের সাইকেল বিশ্ব বাজার দখল করবে। চিন, তাইওয়ান এঁটে উঠতে পারবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন