International News

জলসীমায় তিন বৃহৎ শক্তি ঘিরে ফেলেছে চিনকে, উদ্বেগ বাড়ছে বেজিং-এর

ক্রমশ ঘেরাও হয়ে পড়ছে চিন। দক্ষিণ চিন সাগরে নিজেদের ‘সার্বভৌমত্ব’ প্রতিষ্ঠা করতে যত সুর চড়াচ্ছে বেজিং, ততই বাড়ছে চাপ। আন্তর্জাতিক মহলে অসীম সমীহ আদায় করে এমন তিনটি দেশের নৌসেনা অত্যন্ত নীরবে নিজেদের মধ্যে বাড়িয়ে তুলেছে সমন্বয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৭ ২০:৫২
Share:

—ফাইল চিত্র।

ক্রমশ ঘেরাও হয়ে পড়ছে চিন। দক্ষিণ চিন সাগরে নিজেদের ‘সার্বভৌমত্ব’ প্রতিষ্ঠা করতে যত সুর চড়াচ্ছে বেজিং, ততই বাড়ছে চাপ। আন্তর্জাতিক মহলে অসীম সমীহ আদায় করে এমন তিনটি দেশের নৌসেনা অত্যন্ত নীরবে নিজেদের মধ্যে বাড়িয়ে তুলেছে সমন্বয়। ভারত-জাপান-আমেরিকাকে নিয়ে গঠিত সেই মহাশক্তিধর অক্ষ সব দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে চিনা জলসীমাকে।

Advertisement

গোটা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে আমেরিকা, ভারত এবং জাপানের নৌসেনা পরস্পরের মধ্যে নিবিড় সমন্বয় রেখে কাজ করছে এখন। ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের এই বিস্তীর্ণ বিস্তার গোটা পৃথিবীর কাছেই এখন কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে অতলান্তিক মহাসাগর তার গুরুত্ব অনেকটাই হারিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ উত্তর পরিস্থিতিতে শক্তির ভারসাম্য ধীরে ধীরে সরে এসেছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। এই এশিয়া-প্যাসিফিকের প্রায় মধ্যস্থলে অবস্থিত দক্ষিণ চিন সাগরকে ঘিরে ক্ষমতার লড়াই তীব্র হয়েছে বড় শক্তিগুলির মধ্যে। ওই অঞ্চল এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জলভাগ হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু চিনের দাবি, দক্ষিণ চিন সাগর আন্তর্জাতিক জলভাগ নয়। ওই সমুদ্রের ৯০ শতাংশই চিনের নিজস্ব জলসীমা বলে বেজিং-এর দাবি। আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমী দেশ এই তত্ত্বের ঘোর বিরোধী। দক্ষিণ চিন সাগরের চারপাশে অবস্থিত ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপিন্স, তাইওয়ানও এই তত্ত্বের বিরোধী। কারণ ওই সব দেশ যে অঞ্চলকে নিজেদের জলসীমা বলে দাবি করে, তার অনেকটাকেই চিন নিজেদের বলে দাবি করে।

জাপানের নৌবাহিনী এখন প্রবল তৎপর দক্ষিণ চিন সাগরে। ছবি: রয়টার্স।

Advertisement

আন্তর্জাতিক আদালত এই লড়াইয়ে চিনের বিপক্ষে রায় দিয়েছে। তা সত্ত্বেও চিন দক্ষিণ চিন সাগরের বুকে কৃত্রিম দ্বীপ গড়ে তোলার পথ থেকে পিছিয়ে আসেনি। তাই পাল্টা তৎপরতাও শুরু হয়ে গিয়েছে। চিনের সঙ্গে সংঘাত রয়েছে যে ক’টি বড় শক্তির, তাদের নৌসেনাগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিয়েছে আমেরিকা।

ভারতের সঙ্গে চিনের সীমান্ত বিবাদ বহু বছরের। এলাকা বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চিন কতটা আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে, তা ভারতের অজানা নয়। তাই দক্ষিণ চিন সাগর বিতর্কে ভারত কোনও দিনই চিনের পাশে দাঁড়ায়নি। তা ছাড়া দক্ষিণ চিন সাগর হয়ে প্রতি বছর যে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক ব্যবসা হয়, তাতে ভারতেরও অংশীদারিত্ব রয়েছে। তাই ওই জলপথকে চিনের এলাকা হিসেবে ভারতও স্বীকৃতি দেয়নি।

জাপান হল চিনের আর এক মাথাব্যথার কারণ। জলসীমা এবং কয়েকটি দ্বীপের দখল নিয়ে জাপানের সঙ্গে চিনের সংঘাত রয়েছে। তা নিয়ে পরিস্থিতি বহু বার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তাই দক্ষিণ চিন সাগরের ৯০ শতাংশ এলাকাকে চিনের সম্পত্তি হিসেবে মেনে নিতে জাপানও একেবারেই রাজি নয়।

আরও পড়ুন: সংঘাতের ফল ভাল হবে না, আমেরিকাকে হুঁশিয়ারি এ বার চিনা প্রধানমন্ত্রীর

ভারত এবং জাপান, এই দুই শক্তিকেই কাছে টেনেছে আমেরিকা। দুই দেশের সঙ্গেই আমেরিকার সামরিক চুক্তি হয়েছে। এই ঘনিষ্ঠতা চিনের অস্বস্তি ক্রমশ বাড়িয়েই চলেছে। মার্কিন নৌসেনার সক্ষমতা যে পৃথিবীর অন্য যে কোনও নৌসেনার চেয়ে যোজন এগিয়ে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। ভারত এবং জাপানের নৌসেনাও বহু বছর ধরে বিশ্বের সেরা দশ নৌসেনার অন্যতম। এই তিন বৃহৎ শক্তি গোটা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে সারা বছর যে ভাবে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে চলছে, যে ভাবে যৌথ মহড়া দিচ্ছে এবং যে ভাবে জোটবদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজ করছে, তাতে চিনা নেতাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ক্রমশ বাড়ছে।

বেজিং এবং ইসলামাবাদের তরফ থেকে মাঝেমধ্যেই ভারতের দিকে ভাসিয়ে দেওয়া হয় হুঁশিয়ারির সুর। চিন এবং পাকিস্তান, দুই সীমান্তে যদি একসঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় ভারতকে, যুঝতে পারবে তো দিল্লি? এমন প্রশ্ন ভাসিয়ে দেওয়া হয় মাঝেমধ্যেই। কিন্তু নিজেদের জলসীমায় যে তিনটি বৃহৎ শক্তির হাতে অচিরেই ঘেরাও হয়ে পড়তে হবে চিনকে, বেজিং সম্ভবত আগে সে আশঙ্কা করেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন