Black History Month

ভুললে চলবে না, মনে করিয়ে দিল ‘কালো’ ফেব্রুয়ারি

শিক্ষার্থীদের বয়স অনুযায়ী দেখানো হয় বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র, এই বিষয়ে লেখা নানা প্রবন্ধ বা আত্মজীবনীরঅংশ পড়া ও আলোচনা করা হয়।

Advertisement

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

বস্টন শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫৭
Share:

গত তিপ্পান্ন বছর ধরে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি জুড়ে পালন করা হয় ‘ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থ।’ ফাইল ছবি।

শেষ হল কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাসের মাস। গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও আমেরিকার বিভিন্ন স্কুলে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই মাসটিকে বিশেষ স্মরণীয় করে তোলা হয়েছিল।

Advertisement

আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের ইতিহাস, তাঁদের উপরে হওয়া নির্মম অত্যাচার ও শোষণ এবং প্রচণ্ড প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তাঁদের সংগ্রামের ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের কৃতিত্ব ও অবদানকে মনে রেখে গত তিপ্পান্ন বছর ধরে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি জুড়ে পালন করা হয় ‘ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থ।’ এই উদ্‌যাপনের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে স্কুলে-স্কুলে নানা ধরনের অনুষ্ঠান। এ দেশের মিডল স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে দেখেছি, কী রকম নিষ্ঠাভরে স্কুল পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরা হয় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানকারী কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের কথা। শিক্ষার্থীদের বয়স অনুযায়ী দেখানো হয় বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র, এই বিষয়ে লেখা নানা প্রবন্ধ বা আত্মজীবনীরঅংশ পড়া ও আলোচনা করা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ কবিদের কবিতাও পাঠ করা হয়। ফেব্রুয়ারি জুড়ে স্কুল-পাঠ্যক্রমে এ ভাবেই ঢুকে পড়েন কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী, লেখক, বিজ্ঞানী, খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদ-সহ হরেককিসিমের মানুষ।

আমার মিডল স্কুলের বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন বাচ্চাদের ক্লাসেও পৌঁছে যায় এই উদ্‌যাপনের আলো। সহজ-সরল ভাষায় ছোটদের জন্য লেখা প্রবন্ধ পাঠ করা হয়, দেখানো হয় নানা ভিডিয়ো— যা থেকে বাচ্চারা জানতে পারে এমন সব কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের কথা যাঁরা অসম্ভবকেসম্ভব করেছেন।

Advertisement

তেমনই এক জন মানুষ জেসিকা ওয়াটকিনস। নাসার মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে আমেরিকার পঞ্চম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর, ছ’মাস কাটিয়ে এসেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাসের এই বিশেষ মাসে হিউস্টনের ‘ইয়েস প্রেপ নর্থওয়েস্ট সেকেন্ডারি স্কুল’-এ বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী জেসিকা। এই স্কুলে তখন দেখানো হল মহাকাশ কেন্দ্রে জেসিকার একটি ভিডিয়ো, যিনি সেখানে অন্যান্য মহাকাশচারীর জন্যআনাজ ফলাচ্ছেন, আবার নিজের জন্মদিন পালনও করছেন। পড়ুয়াদের জেসিকা জানান, কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় থাকলে অসম্ভব স্বপ্নও বাস্তব হয়।

আমেরিকায় বিজ্ঞান, কারিগরিবিদ্যা ও অঙ্ক, এই তিনটি ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মোট পড়ুয়ার মাত্র ৯ শতাংশ। তার মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ৫ শতাংশ। তাই জেসিকার মতো এক জন চরিত্র আর পাঁচটি কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েকে আশা জোগায়, নতুন করে স্বপ্ন দেখার উৎসাহ দেয়। ২০২৫ সালে আবার চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনাকরছে নাসা। অভিযানের নাম ‘আর্টেমিস’। এই অভিযানে জেসিকার অংশ নেওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সে বিষয়ে স্কুলপড়ুয়ারা জেসিকাকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, শুধু চাঁদ নয়, তাঁর স্বপ্ন আরও সুদূরে পাড়ি দিতে চায়। কারণ, তিনিমঙ্গলের মাটিতে পৌঁছনোর স্বপ্ন দেখেন। আর আশা করেন, তাঁর স্বপ্ন সংক্রমিত হোক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেয়েদের মধ্যেও।

আমেরিকার বেশ কিছু প্রদেশ ও কাউন্টিতে অতি দক্ষিণপন্থী প্রাদেশিক প্রশাসনের প্রভাবে আমূল বদলে ফেলা হচ্ছে সেখানকার স্কুলের পাঠ্যক্রম। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের উপরে কী ধরনের নির্মম অত্যাচার হত, তার ইতিহাস জানলে নতুন প্রজন্ম মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে, এই কারণ দর্শিয়ে বহু পাঠ্য বই থেকে কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস কার্যত মুছে ফেলা হচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি জুড়ে জেসিকার মতো নানাউত্তরণের কাহিনি আমাদের মনে করিয়ে দিল— সব কিছু ভুলে গেলে চলবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন