ফেব্রুয়ারি মাসে সাত মাসের গর্ভাবস্থায় সি-সেকশনের মাধ্যমে জন্ম হয় শিশুদু’টির।
প্রথম যখন জানতে পেরেছিলেন তিনি মা হতে চলেছেন আনন্দে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলে ব্রাজিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি’সিলভা জাম্পোলি পাডিলহা। শরীরের ভিতরে দু’টি প্রাণের স্পন্দন রোজ একটু একটু করে অনুভব করছিলেন। কিন্তু ২১ বছরের ফ্রাঙ্কলিন জানতেন না এই আনন্দ মাত্র কয়েক দিনের। গর্ভে দু’টি প্রাণ বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ঘনিয়ে আসছে জীবনের চরম সময়ও।
২০১৬ সালের অক্টোবরে সেরিব্রাল হেমারেজ হয়ে মস্তিষ্কের মৃত্যু হয় ফ্রাঙ্কলিনের। গর্ভের যমজ সন্তানের বয়স তখন মাত্র ৯ সপ্তাহ। স্ত্রীকে হারালেও হার মানতে চাননি ফ্রাঙ্কলিনের স্বামী মুরিয়েল পাডিলহা। দুই সন্তান যে তখনও বেড়ে উঠছে গর্ভে। চিকিত্সকদের অনুরোধ করেন মা হতে চলা স্ত্রীকে বাঁচিয়ে রাখতে। তাঁরা বিশেষ আশা না রাখলেও মুরিয়েলকে নিরাশ করেননি। এরপর ১২৩ দিন ধরে মায়ের গর্ভেই বেড়ে চলে শিশুদু’টি। চিকিত্সক ডালটন রিভাবেমের নেতৃত্বে হাসপাতালের নিউরোলজিক্যাল আইসিইউতে চলতে থাকে ফ্রাঙ্কলিনের শুশ্রূষা। ডাক্তার, নার্স, নিউট্রিশনিস্ট, সাইকোথেরাপিস্টরা ভালবাসা, যত্নে আগলে রাখেন বেবি বাম্প। যাতে নিশ্চিন্তে গর্ভে বেড়ে উঠতে পারে শিশুদু’টি।
স্বামীর সঙ্গ ফ্রাঙ্কলিন
ফেব্রুয়ারি মাসে সাত মাসের গর্ভাবস্থায় সি-সেকশনের মাধ্যমে জন্ম হয় শিশুদু’টির। তারপর ভেন্টিলেশন থেকে বের করে ফ্রাঙ্কলিনের হার্ট ও কিডনি দান করা হয়। মে মাসে সুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় শিশুদু’টি। ফ্রাঙ্কলিনের খবর ছড়িয়ে পড়তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা ব্রাজিল। আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি শিশুদের জামা-কাপড়, ন্যাপি দিয়েও সাধ্য মতো সাহায্য করতে থাকেন অনেকেই। পাডিলহা দম্পতির দু’বছরের একটি মেয়েও রয়েছে।
আরও পড়ুন: নারী এখানে নিষিদ্ধ, জাপানি দ্বীপকে ‘হেরিটেজ’ তকমা ইউনেস্কোর
ডেইলি মেলকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে মুরিয়েলের স্মৃতিতে ভেসে উঠেছে ফ্রাঙ্কলিনের জীবনের সেই ভয়াবহ শেষ মুহূর্ত, ‘‘আমি তখন বাগানে কাজে গিয়েছিলাম। ফ্রাঙ্কলিন ফোন করে জানায় ওর মাথা যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। এখনই পড়ে যাবে মনে হচ্ছে। আমি যেন বাড়ি ফিরে আসি। ঘরে ঢুকেই দেখেছিলাম ও প্রচণ্ড কাঁপছে, কাঁদছে, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আর অবিরাম বমি করে চলেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ফ্রাঙ্কলিন আমাকে বলেছিল তৈরি থাকতে। ও আর বাড়ি ফিরবে না হয়তো। এরপরই অজ্ঞান হয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিত্সকরা জানান, মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিন দিন ধরে পরীক্ষা আর স্ক্যান করার পর অবশেষে জানানো হয় আমার স্ত্রী ব্রেন ডেড।’’
এরপরই মুরিয়েলের অনুরোধে আলট্রাসাউন্ড করে চমকে ওঠেন ডাক্তাররা। কী ভাবে তখনও বেঁচে রয়েছে ভ্রুণদুটি! তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শিশুদের বাঁচিয়ে রাখার।