ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। -ফাইল ছবি।
ব্রেক্সিট চুক্তির জেরে আজ আরও বড় পরীক্ষার মুখে দাঁড়িয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র সরকার। হাউস অফ পার্লামেন্টে এ বার তাঁর সরকারকে মুখোমুখি হতে হবে অনাস্থা ভোটের। যে ভোট হবে বুধবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ১২টায়। মঙ্গলবারই পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে খারিজ হয়ে গিয়েছে তাঁর প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি। ওই চুক্তির বিপক্ষে যত ভোট পড়েছে, পক্ষে পড়েছে তার অর্ধেকেরও কম। এমনকী, তাঁর দল কনজারভেটিভ পার্টির শ’খানেক এমপি-ও সমর্থন করেননি প্রধানমন্ত্রী মে-র ‘কঠোর’ প্রস্তাব।
তিন বছর আগে যে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের বেশির ভাগ মানুষের বাহবা কুড়িয়েছিলেন, মঙ্গলবার সেই সিদ্ধান্তেরই বড় খেসারত দিতে হয়েছে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-কে। ব্রেক্সিট নিয়ে হাউস অব পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত চুক্তির বিপক্ষে পড়েছে ৪৩২টি ভোট। পক্ষে ২০২টি।
ভোটের ফলাফলে উৎসাহিত বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন মে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের দাবি জানান। সেই ভোট হবে বুধবার। ২৯ মার্চ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ব্রিটেনের।
প্রধানমন্ত্রী মে-র প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে বিতর্ক চলে হাউসে। মঙ্গলবার ভোটের ঠিক আগে চুক্তির পক্ষে চূড়ান্ত সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগে সকালে সব দলের এমপি-দের উদ্দেশে এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘আপনারা এমন কিছু করবেন না, যাতে ব্রিটেনের মানুষ মুশকিলে পড়েন।’’ কিন্তু মে যা-ই বলুন, শেষ পর্যন্ত শোচনীয় ভাবে হারতে হল মে-কে।
আরও পড়ুন- ঐতিহাসিক ভোটে হার টেরেসা মে-র
আরও পড়ুন- ব্রেক্সিট-ভোটে হার টেরেসার
প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী মে-র এই হারের পরে এ বার কী হবে? ব্রেক্সিট, অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য ব্রিটেনের সামনে এখন যে কয়েকটি পথ রয়েছে সেগুলি হল—
১) চুক্তিহীন ব্রেক্সিট। অর্থাৎ, ইইউ-এর সঙ্গে কোনও সমঝোতা না করেই, ২) ইইউ ছেড়ে যাওয়া, ৩) বিরোধীদের সঙ্গে ফের আলোচনা করে নতুন একটি ব্রেক্সিট চুক্তির প্রস্তাব দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান চুক্তির যে সব অংশ (যেমন আয়ারল্যান্ড সীমান্ত সমস্যা) নিয়ে বিরোধীদের আপত্তি রয়েছে, সেগুলি পাল্টাতে হবে টেরেসাকে, ৪) এমপি-রা যদি তার পরেও টেরেসার প্রস্তাবে রাজি না হন, তা হলে ব্রেক্সিট চুক্তি কী হবে, তা ভোটাভুটি করে ঠিক করতে হবে পার্লামেন্টকেই। ব্রিটিশ রাজনীতির ইতিহাসে যা প্রথম। এখন যে হেতু পার্লামেন্টের হাওয়া ‘নরম ব্রেক্সিট’-এর পক্ষে, তাই পার্লামেন্টের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি টেরেসা-র চুক্তির মতো ‘কঠোর’ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। আর তা হলে ইইউ-এর সঙ্গে ব্রিটেনের সদ্ভাব বজায় থাকার সম্ভাবনাও বেশি, ৫) হাল ছেড়ে দিয়ে টেরেসা মে ইস্তফা দিতে পারেন। তা হলে কনজ়ারভেটিভ দলকে নতুন নেতা নির্বাচন করতে হবে এবং সেই নেতা তখন ঠিক করবেন, কোন ব্রেক্সিট চুক্তি শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে, ৬) পার্লামেন্টে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলে আরও প্যাঁচে পড়বেন টেরেসা। ভোটে হারলে ১৪ দিনের মধ্যে নতুন সরকার গঠন করতে হবে কনজ়ারভেটিভ দলকে। না পারলে সাধারণ নির্বাচন হবে দেশে। মুখে বিশেষ কিছু না বললেও ঠিক এটাই চাইছেন বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। ভোটে হারের পরে সেই হিসেব করেই অনাস্থা চেয়ে সওয়াল করেন তিনি, ৭) আলোচনার জন্য সময় চেয়ে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া তিন মাস পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে ব্রিটিশ সরকার। এর আগে ইউরোপীয় আদালত বলেই দিয়েছে, ব্রেক্সিট কবে হবে বা আদৌ হবে কি না, তা সম্পূর্ণ ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত। ইইউ-এর এ বিষয়ে কিছু বলার এক্তিয়ার নেই, ৮) সরকার যদি শেষ পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে না-ই পৌঁছয়, তা হলে ফের গণভোট হবে ব্রিটেনে। সাধারণ মানুষকে আর এক বার জিজ্ঞাসা করা হবে, তাঁরা কি সত্যিই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চান?
২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রিটেনে যে গণভোট হয়েছিল, তাতে ৫১.৯ শতাংশ ব্রিটিশ বলেছিলেন, তাঁরা ইইউ ছাড়ার পক্ষে। গত আড়াই বছরের টালবাহানায় তাঁদের মনোভাব পাল্টেছে কি না, তা বোঝা যাবে আর এক বার গণভোট হলেই।