ওবরের মানচিত্রে গোটা কাশ্মীর-অরুণাচলকে ভারতের অংশ বলে মেনে নিল চিন

কূটনৈতিক শিবির বলছে, এটা ভবিষ্যৎ সরকারের প্রতি বার্তা। এমন ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা যে, ইরানের থেকে তেল আমদানি নিয়ে চিন এবং ভারত উভয়েই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সামনে।

Advertisement

অগ্নি রায় 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৪৬
Share:

একমঞ্চে: চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শুক্রবার বেজিংয়ে। রয়টার্স

পাঁচ বছরে সম্পর্কে বহু ঝড়ঝাপটা গিয়েছে। এ বার ভারতে নতুন সরকার গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হতেই ইতিবাচক বার্তা এল বেজিংয়ের তরফ থেকে। গোটা জম্মু ও কাশ্মীর এবং অরুণাচলকে ভারতের মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত করে দেখাল বেজিং। সেই সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেলে জানানো হল, মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্নে তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে।

Advertisement

কূটনৈতিক শিবির বলছে, এটা ভবিষ্যৎ সরকারের প্রতি বার্তা। এমন ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা যে, ইরানের থেকে তেল আমদানি নিয়ে চিন এবং ভারত উভয়েই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সামনে। এই অবস্থায় ভারতকে কাছে টানা চিনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। অনেক এমনটাও মনে করছেন, যে ভাবে হোক ভারতকে তাদের ওবর মহাযোগাযোগ প্রকল্পে সামিল করাতে বদ্ধপরিকর চিন কিছুটা ছাড় দিতেও প্রস্তুত।

গত কাল থেকে বেজিংয়ে শুরু হয়েছে ওবর প্রকল্পের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। যথারীতি প্রথম বারের মতো এ বারেও তাতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে ভারত। নয়াদিল্লির আপত্তির মূল কারণ, ওবরের অধীন প্রস্তাবিত চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) গিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে। এ দিকে ইতিমধ্যেই এই সিপিইসি-র পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করে ফেলেছে বেজিং। ভারত যদি অসহযোগিতার মাত্রা চড়ায়, তা হলে এই প্রকল্প নিয়ে প্রতি পদে সমস্যায় পড়বে চিন।

Advertisement

ওবর সম্মেলনে তাই ভারতের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার কৌশল নিয়েছে বেজিং, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ওই সম্মেলনে ওবরের যে মানচিত্র দেখানো হয়েছে, সেখানে গোটা জম্মু ও কাশ্মীর এবং অরুণাচলকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে! যা এর আগে কখনও ঘটেনি। অরুণাচলের একাংশকে দক্ষিণ তিব্বত এবং কাশ্মীরের একাংশকে পাক শাসিত কাশ্মীর বলেই মানচিত্র তুলে ধরাটা চিনের বরাবরের দস্তুর।

ওবরের প্রস্তাবিত রুটম্যাপ।

এই ঘটনার পরই কূটনৈতিক শিবিরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। শুধু মাত্র মানচিত্রে অরুণাচল বা কাশ্মীরকে স্বীকৃতি দেওয়াই নয়। সূত্রের খবর, মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার জন্য ভারতের দীর্ঘ অনুরোধ-উপরোধের পর এ বার নড়েচড়ে বসেছে বেজিং। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, জুন মাসে এ ব্যাপারে তাদের চূড়ান্ত মতামত জানিয়ে দেওয়া হবে রাষ্ট্রপুঞ্জকে। সম্প্রতি বিদেশসচিব বিজয় গোখলে বেজিংয়ে গিয়ে সে দেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। সেখানে আজহারের সন্ত্রাসবাদী ভূমিকা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ও নথি চিনকে দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে চিনা নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ভারতের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। এ নিয়ে আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশগুলির চাপ তৈরি করারও প্রয়োজন নেই। মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় আনার আগে সমস্ত শর্তগুলি খতিয়ে দেখার জন্যই সময় নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভারতের নতুন সরকার গঠনের এক পক্ষকালের মধ্যে চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নির্ধারিত হয়ে রয়েছে। জানুয়ারি মাসে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠক। সেখানে উপস্থিত থাকবেন চিন, পাকিস্তান এবং ভারতের রাষ্ট্রনেতারা। একদিকে ভারতের বিপুল বাজারে আরও প্রবেশাধিকার এবং ওবর-এ সংযুক্ত হতে নতুন সরকারকে রাজি করানোটা চিনের দক্ষিণ এশিয়া নীতির অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ছে। তাই কিছুটা পিছনের পায়ে গিয়ে ভারতকে এই নরম সংকেত পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন