বিপর্যস্ত: হিথরো বিমানবন্দরে আটকে পড়া যাত্রীরা। শনিবার লন্ডনে। ছবি: এএফপি।
লুফৎহানসা, এয়ার ফ্রান্সের পরে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। তথ্যপ্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য আজ ইংল্যান্ডের দু’টি সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ত বিমানবন্দরে বহু উড়ান বাতিল করতে বাধ্য হল ব্রিটিশ বিমান সংস্থাটি। বিশ্বের নানা প্রান্তে চরম দুর্ভোগে পড়লেন অসংখ্য যাত্রী।
আজ সকাল থেকেই হিথরো এবং গ্যাটউইক বিমানবন্দরে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কর্মীদের ভোগাতে শুরু করে কম্পিউটারের গোলমাল। বিভিন্ন কাউন্টারে তখন যাত্রীদের লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে। যাত্রী তুলেও রানওয়েতে আটকে রয়েছে একের পর এক বিমান। হিথরো-গ্যাটউইকে নামতে চেয়ে স্রেফ আকাশে চক্কর কেটে ফিরে যেতে হয়েছে বহু বিমানকে। আর বিমানবন্দরের লাউঞ্জে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বহু যাত্রী। কোন উড়ান কতটা দেরিতে চলছে, কিংবা কোন কোন উড়ান বাতিল হয়েছে, সেই তথ্যটুকুও তখন দিতে পারছেন না কর্মীরা। সাদা বোর্ডে হাতে লিখে কিছু তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে, কিন্তু উড়ান আর যাত্রী সংখ্যার নিরিখে তা নগণ্য! প্রাথমিক ভাবে সাইবার হানার আশঙ্কা করা হলেও পরে বিমান সংস্থা সূত্রে জানানো হয় যে, তেমন কোনও প্রমাণ তাদের হাতে আসেনি। তবে খুব দ্রুত সমস্যার সমাধানেরও চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীদের ক্ষোভ থামানো যায়নি।
হিথরো-গ্যাটউইকে প্রতি শনিবারই সপ্তাহান্তের ভিড় থাকে। তার মধ্যে আগামী সোমবারও ছুটি হওয়ায় যাত্রীর চাপ প্রায় দ্বিগুণ ছিল আজ। স্কুলে-স্কুলে ছুটিও চলছে। ফলে অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে কার্যত দিশাহারা অবস্থা হয় বিমান সংস্থার কর্মীদের। শেষমেশ বেগতিক দেখে আজ সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত হিথরো আর গ্যাটউইকের সমস্ত উড়ান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের জানানো শুরু হয়, সন্ধে ছ’টার মধ্যে উড়ান থাকলে তাঁরা যেন বিমানবন্দরেই না-আসেন। কারণ দু’টি বিমানন্দরেরই লাউঞ্জ ‘যাত্রীদের ভিড়ে ঠাসা’। বাতিল হওয়া উড়ানের যাত্রীদের টিকিটের অর্থ ফেরত বা অন্য দিনের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা অবশ্য ঘোষণা করেছে বিমান সংস্থাটি।
গত মাসে জার্মান বিমান সংস্থা লুফৎহানসা এবং এয়ার ফ্রান্সকে ভুগিয়েছিল প্রায় একই রকম সমস্যা। আজ শুধু হিথরো বা গ্যাটউইক নয়, অন্যান্য দেশের নানা বিমানবন্দর— রোম, প্রাগ, স্টকহলমেও আটকে পড়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমান। রোম থেকে লন্ডনে ফেরার কথা ছিল সাংবাদিক ফিলিপ নর্টনের। ‘ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে তিনি টুইট করেন, ‘কর্মীরা জানাতেই পারছেন না, উড়ান কত ক্ষণে ছাড়বে। শুধু বলা হচ্ছে তাঁদের সমস্ত উড়ান বাতিল।’ মার্টিন কেন্ট নামে আর এক সাংবাদিক টুইটারে লেখেন, ‘হিথরোয় একটি বিমানে চার ঘণ্টারও বেশি সময় বসে আছি। ক্যাপ্টেন কিছুই বলতে পারছেন না।’ ডেভিড রেইন নামে আর এক যাত্রী টুইট করেছেন, ‘হিথরো থেকে ভেগাস যেতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’ ছোট ছেলেকে নিয়ে একা লন্ডন থেকে বাহরাইন যাওয়ার কথা রোশনি বার্টের। বললেন, ‘‘বিমানবন্দরের সর্বত্র শুধু ক্ষুব্ধ, হতাশ মুখের ভিড়।’’