Bengali New Year

শাশ্বত বাংলা সংস্কৃতিরই জিত নববর্ষের বাংলাদেশে

এ বার ‘বর্ষবরণ ১৪৩০’-এর অনুষ্ঠানের মর্মবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছিল ‘ধর নির্ভয় গান’। সম্মেলক প্রথম সঙ্গীতটি রবীন্দ্রনাথের, ‘ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর’।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:১৯
Share:

নববর্ষের প্রভাতে রমনার বটমূলে ছায়ানট-এর অনুষ্ঠান। শুক্রবার ঢাকায়। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী।

তখনও নতুন বছরের প্রথম রবিরশ্মি স্পর্শ করেনি বাংলাদেশকে। ঢাকার হৃদয় রমনা পার্কের এক পাশে অবস্থিত বটমূল থেকে আহীর ভৈরবের সুরের ধারা জাগরণের বার্তা দিল বাঙালিকে। বটমূল (আদতে সেটি একটি প্রসারিত-শাখার অশ্বত্থবৃক্ষ)-এ ছায়ানট এ বার ‘বর্ষবরণ ১৪৩০’-এর অনুষ্ঠানের মর্মবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছিল ‘ধর নির্ভয় গান’। সম্মেলক প্রথম সঙ্গীতটি রবীন্দ্রনাথের, ‘ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর’। তার পরে একে একে বাংলার নিজস্ব সুরের সাতরঙা বিচ্ছুরণ। সঙ্গে আবৃত্তিও। সেঁজুতি বড়ুয়া, পার্থপ্রতিম রায়, রেজাউল করিম, খায়রুল আনাম শাকিল, ইফ্ফাত আরা দেওয়ান, খায়রুল ইসলাম,চন্দনা মজুমদার, লাইসা আহমদ লিসার একক সঙ্গীত ছাড়া ছিলছোট ও বড়দের সম্মেলক গান ও যন্ত্রানুসঙ্গও।

Advertisement

আসতে পারেননি ছায়ানট-এর নবতিপর প্রধানা সন‌্জীদা খাতুন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা সংক্ষিপ্ত কথনে বলেন, ‘ধারাবাহিক অগ্রগতি দেশের ভবিষ্যতের পদরেখা হিসাবে আমাদের প্রাণে আশার সঞ্চার করে। অন্য দিকে লোভ, বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্য আমাদের হতাশ করে, সমাজে বি‌ভাজন রেখাকে গভীর ও বিস্তীর্ণ করে আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করে দেয়।... নূতন বছর সর্বজনের জীবনে মঙ্গল বয়ে আনুক।’

বাংলা সংস্কৃতির চিরায়ত এই মঙ্গলবার্তা স্তব্ধ করার জন্য মৌলবাদীরা চোখ রাঙিয়েছে নিত্য। পেতে রাখা বিস্ফোরকে বটমূল উথালপাতাল করে জঙ্গিরা কেড়ে নিয়েছে অজস্র প্রাণ। জাতীয় সঙ্গীতে ছায়ানট-এর অনুষ্ঠান সারা হতে না হতে মানুষ গিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন অদূরে চারুকলা অনুষদ-এর প্রাঙ্গণে। এক মাস ধরে সেখানে প্রস্তুত হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার নানা আঙ্গিক— বাংলার পুতুল, মুখোশ, পটচিত্র। পাকিস্তান আমলে চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি চর্চাকে ধর্মবিরোধী বলে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছিল, রবীন্দ্রসঙ্গীত উচ্চারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রশাসন— তার বিরুদ্ধতায় ছায়ানট-এর নেতৃত্বে সূচনা হয়েছিল বটমূলে বর্ষবরণের সঙ্গীতানুষ্ঠান। আর হুসেইন মহম্মদ এরশাদের সেনাশাহির স্বৈরশাসনে হাঁসফাঁস মানুষ জোট বাঁধার পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মঙ্গল শোভাযাত্রা। জঙ্গি মৌলবাদের চোখরাঙানি এ বারেও পিছু ছাড়েনি এই মঙ্গল শোভাযাত্রার।

Advertisement

এর আগে বিএনপি-জামাতে ইসলামী-র জোট সরকার জঙ্গি হুমকির পরে বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তায় দায়ভার নিতে অস্বীকার করেছিল, কারণ তারা এই সংস্কৃতিকে মনে-প্রাণে ধারণ করে না। এখনকার প্রশাসন কিন্তু সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে লিখিত নির্দেশ দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছে। ফলত শুধু ঢাকা নয়, বাংলাদেশের সর্বত্র ছোট বড় শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছত্রছায়ায় বাঙালি জোট বেঁধেছিলেন মৌলবাদকে উচিত শিক্ষা দিতে। বর্ষবরণে তাঁদের হাতিয়ার ছিল যুগ যুগ ধরে চর্চা করে আসা অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি।

শেষ পর্যন্ত জয় হল শাশ্বত বাংলা সংস্কৃতিরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন