প্রকাশ্য উদ্দেশ্য কৃষি ও অন্য কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য যে অন্য কিছু তা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারাই। চিনকে নিয়ে মাথাব্যথার জেরে দক্ষিণ ভিয়েতনামে উপগ্রহ নজরদারি কেন্দ্র গড়তে চলেছে ভারত। যাতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানাচ্ছে সরকারি সূত্র।
গত কয়েক বছর ধরে জলপথে ভারতকে ঘিরতে বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশে নিজেদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে চিন। রণকৌশলের ভাষায় বেজিংয়ের এই কৌশলের নাম ‘মুক্তোর মালা’ (স্ট্রিং অব পার্লস)। তার মোকাবিলায় ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাল্টা চাল দিতে উদ্যোগী হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ভিয়েতনামে উপগ্রহ নজরদারি কেন্দ্র তারই অঙ্গ বলে দাবি বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের।
সরকারি ভাবে অবশ্য এই কেন্দ্র থেকে অসামরিক উপগ্রহের উপরে নজর রাখা হবে। ভারতের উপগ্রহ থেকে আসা চিত্র একসঙ্গে বিশ্লেষণ করবেন দু’দেশের বিশেষজ্ঞেরা। তাতে কৃষি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগোনো সহজ হবে। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, এখন উন্নত মানের অসামরিক উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য অনায়াসে সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। একই উদ্বেগ রয়েছে ভিয়েতনামের মতো দেশগুলির। ভারত মহাসাগরে দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে ভিয়েতনামের সঙ্গে চিনের বিরোধ আছে। আবার দক্ষিণ চিন সাগরে তৈলখনির বরাত পেলেও চিনা বাধায় ফাঁপরে পড়েছে দিল্লি। তাই চিনের সঙ্গে টক্কর দিতে ভারত এবং ভিয়েতনাম-সহ ওই অঞ্চলের দেশগুলির কাছাকাছি আসা স্বাভাবিক বলেই মত বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, হো চি মিন সিটিতে ভারতের উপগ্রহ নজরদারি কেন্দ্রে তথ্য সরাসরি ব্যবহার করবে ভিয়েতনামও। উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণের বিষয়ে ভারতের কাছে প্রশিক্ষণও নিতে পারেন ভিয়েতনামের কর্মীরা। ইতিমধ্যেই সে দেশের সামরিক ডুবোজাহাজের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে ভারতীয় নৌসেনা। ভবিষ্যতে ভিয়েতনামে নৌঘাঁটি তৈরি করতে চায় ভারত। সে দেশের নাত্র্যাং বন্দর থেকে ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ চিন সাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় নজরদারি করতে পারবে ভারতীয় নৌসেনা। ইতিমধ্যেই ভারতীয় নৌসেনার জাহাজ ওই এলাকায় টহল দিয়েছে। তাতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ বেজিং। ভিয়েতনামকে টহলদারি নৌকো কিনতে ঋণও দিচ্ছে দিল্লি।
সরকারি ভাবে চিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, ভিয়েতনামে ভারতের উপগ্রহ নজরদারি কেন্দ্রের কোনও সামরিক তাৎপর্য নেই।