অভ্যর্থনা। শুক্রবার বাকিংহাম প্রাসাদে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।
গত কাল ব্রিটিশ সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে দাবি করেছিলেন, অসহিষ্ণুতার ঘটনা বরদাস্ত করবে না তাঁর সরকার। এই ধরনের যে কোনও ঘটনাতেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আজ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের জনসভায় সরাসরি অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ না-খুললেও নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘‘ভারত বৈচিত্রে ভরা একটি দেশ। আর এই বৈচিত্রই তার গর্ব, তার শক্তি।’’ কিন্তু একই সঙ্গে সুফি ঐতিহ্যের কথা বলতে গিয়ে এ দিন পরোক্ষে ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসকে জুড়ে দিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘ইসলাম যদি সুফি মতবাদকে
গ্রহণ করতো, তা হলে বন্দুক হাতে তুলে নিত না।’’
ব্রিটেনের মাটিতে পা-রাখা ইস্তক বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন মোদী। অসহিষ্ণুতা, গুজরাত দাঙ্গায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজপথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার জানিয়েছেন বিশিষ্টরা। কলম ধরেছেন শিল্পী অনীশ কপূর। মোদীকে সামনে পেয়ে কড়া ভাষায় সরাসরি তাঁর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। সেই চাপের মুখে গত কাল অসহিষ্ণুতা সহ্য না-করার কথা বলেছিলেন মোদী। আজ শোনালেন বৈচিত্রের ঐতিহ্য।
কূটনীতিকরা কিন্তু বলছেন, ক্ষতি যা হওয়ার হয়েই গিয়েছে। অসহিষ্ণুতা নিয়ে দেশে মুখ বন্ধ করে রেখে বিদেশের মাটিতে বেইজ্জত হওয়ার পথ খুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টায় অবশ্য ত্রুটি রাখেননি মোদী। তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ডেভিড ক্যামেরনও। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, সৌদি আরবের মতো এখানেও মোদীর জনসভার জন্য বিপুল আয়োজন ছিল। ৬০ হাজার দর্শকে ঠাসা ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম লাগাতার মোদীর নামে জয়ধবনি করে গিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ক্যামেরন বলেছেন, ‘‘মোদী আশ্বাস দিয়েছেন, অচ্ছে দিন আনেওয়ালে হ্যায়। আমি ওঁর কর্মশক্তি দেখে এক ধাপ এগিয়ে বলছি, অচ্ছে দিন জরুর আয়েগা।’’
মোদীও তাঁর গত কালের আশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বৈচিত্রের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। এ দিনও তিনি টেনে আনেন বুদ্ধ ও গাঁধীর কথা। বলেন, ‘‘এতগুলি ধর্ম, ১০০টি ভাষা, ১৫০০ আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে ১২৫ কোটি মানুষ কী ভাবে শান্তিতে একত্রে বসবাস করে, সেটা বিশ্বের বিস্ময়।’’ এর পরই ভারতের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কবীর ও রহিমের কথা তুলে ধরে মোদী বলেন, ‘‘সুফি ঐতিহ্য সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক।’’
ওয়েম্বলিতে এ দিন সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন ক্যামেরনও। কিন্তু তিনি কোনও বিশেষ ধর্মের সঙ্গে তার সম্পর্কের প্রসঙ্গ টানেননি। যা টেনেছেন মোদী। আর তাতেই নতুন করে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। মোদীর বক্তৃতার পরে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে করা টুইটে সন্ত্রাস দমনে সুফি ঐতিহ্যের সম্ভাবনার কথা বলা হলেও ইসলামের সুফি মতবাদ গ্রহণ না-করে বন্দুক তুলে নেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়নি।
এ দিন ওয়েম্বলিতে ব্রিটেনের শিখ নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের উল্লখে করে মোদী বলেন, ‘‘আমি ওঁদের বেদনা বুঝি।’’ যা শুনে অনেকেরই ধারণা, পরোক্ষে ১৯৮৪-র শিখ বিরোধী দাঙ্গার কথা বলতে চেয়েছেন মোদী। তা হলে গুজরাত দাঙ্গা বা দাদরি প্রসঙ্গ এল না কেন, প্রশ্ন তাঁদের।
ওয়েম্বলির বক্তৃতার আগে গত কাল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রয়্যাল গ্যালারির বক্তৃতাতেও সন্ত্রাস দমনের কথা বলেছিলেন মোদী। নাম না-করে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন পাকিস্তানকে। মোদীর কথায়, ‘‘যারা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেয়, তাদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে।’’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ পরে বলেন, ‘‘আল কায়দা, লস্কর-ই-তইবা, হিজবুল মুজাহিদিন এবং তাদের সহযোগী জঙ্গি সংগঠনগুলি যাতে কোনও রকম আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সাহায্য না পায়, সেই ব্যাপারে ভারত ও ব্রিটেন এক সঙ্গে কাজ করবে।’’
মোদীর সফরে প্রায় ৯২০ কোটি পাউন্ডের বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ। চুক্তির মেয়াদ তিন বছর হলেও ক্যামেরন এ দিন ঘোষণা করেন, তার পরেও চলবে এই সহযোগিতা। ব্রিটেনে আসার আগেই মোদী জানিয়েছিলেন, লগ্নি টানাই তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
লন্ডনে রেলওয়ে রুপি বন্ডও চালু করেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিকে সমর্থন করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।