ভোটের পাল্লা কার দিকে? সাইবেরিয়ার চিড়িয়াখানায়। ছবি: রয়টার্স
কয়েক দিন আগেও তাঁর জয়গান গাইছিলেন। আজ ভোট-রঙ্গে তাঁকেই খলনায়ক বানিয়ে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এফবিআই ডিরেক্টর জেমস কোমি। দিন দশেক আগে যিনি ঘোষণা করেছিলেন, প্রাক্তন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের ই-মেল দুর্নীতির ফের তদন্ত শুরু করছে এফবিআই। যে ঘোষণায় যতটা হতাশ হয়েছিল হিলারি শিবির, ততটাই খুশি হয়েছিলেন রিপাবলিকান পদপ্রার্থী। প্রচারের শেষ লগ্নে এসে ভোটে না লড়েও এই কোমি যেন হয়ে উঠেছিলেন হিলারির দ্বিতীয় প্রতিপক্ষ। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় হিলারির সমর্থন কমছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। এক দিন তো হিলারিকে এক পয়েন্ট পিছনে ফেলে এগিয়েই যান মার্কিন ধনকুবের!
এই ‘অসম্ভব’ যে সম্ভব হয়েছিল কোমির কৃপায়, তা একবাক্যে মেনেও নিয়েছিলেন ট্রাম্প। একাধিক জনসভায় হিলারিকে বিঁধতে গিয়ে এফবিআই ডিরেক্টরের হয়ে গলা ফাটাতেও শোনা গিয়েছিল তাঁকে। বলেছিলেন, ‘‘দেশের বিচারবিভাগ আদতে হিলারিকে আড়াল করতেই চেয়েছিল। তা আটকে দিয়ে অসামান্য সাহসের পরিচয় দিয়েছেন কোমি।’’
আর আজ? কালই হিলারিকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছেন এফবিআই ডিরেক্টর জেমস কোমি। বলেছেন, প্রাক্তন বিদেশসচিবের দ্বিতীয় দফার তদন্তেও তাঁর বিরুদ্ধে ‘অপরাধমূলক’ কিছু মেলেনি। যা শুনে পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছেন হিলারির প্রতিপক্ষও। রাজনৈতিক চাপেই এফবিআইকে পিছু হটতে হলো বলে দাবি তাঁর। ভোটের ঠিক দু’দিন আগে তড়িঘড়ি জমা দেওয়া এই তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে উষ্মা জানিয়েছে ট্রাম্প শিবির। ট্রাম্পের প্রশ্ন, ‘‘প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ নতুন ই-মেল। আর এরই মধ্যে সব খুঁটিয়ে দেখা হয়ে গেল?’’
কোমি অবশ্য এই তাড়াহুড়োর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। কংগ্রেসকে লেখা চিঠিতেই তিনি বলেছেন, ‘‘আমার সহকর্মীরা কয়েক দিন ধরে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতেন। তাঁদের চূড়ান্ত পরিশ্রম ছাড়া এত তাড়াতাড়ি তদন্তের ফলপ্রকাশ সম্ভব হতো না।’’
তবে এই ব্যাখ্যায় খুশি নন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, ‘‘সবটাই ষড়যন্ত্র। হিলারি যে কত বড় অপরাধী, এফবিআই তা নিজেও জানে।’’ আজ ফের তিনি হিলারির বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। আজ সারাদিন একাধিক জনসভায় তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক চাপের মুখেই হিলারিকে ক্লিনচিট দিয়েছে এফবিআই। চূড়ান্ত রায় দেবে মার্কিন জনগণই। এবং দুধ আর জল স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও আজ এক জনমত সমীক্ষায় ট্রাম্পের থেকে চার পয়েন্টে এগিয়ে গিয়েছেন হিলারি। গত ১০ দিনে এই প্রথম। হিলারিকে নতুন করে অভিনন্দন জানানোর ঢল নেমেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ট্রাম্প এগিয়ে যাচ্ছেন দেখে মার্কিন শেয়ার বাজারে যে ধস নেমেছিল, তা-ও শুধরেছে বলে খবর। তবু, কোমির ছাড়পত্রে হিলারি শিবিরে হাওয়া বদলের ইঙ্গিত মিললেও ইতিমধ্যে যাঁরা আগাম ভোট দিয়ে বসে আছেন, তাঁদের নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। এই ভোটারের সংখ্যাটা রেকর্ড সাড়ে তিন কোটি! এই বিশাল সংখ্যক মার্কিন নাগরিক তাঁদের মত জানিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত, যে সময়ে জোরদার হাওয়া লেগেছিল ট্রাম্পের পালেই।
সেই হাওয়া ট্রাম্প-তরীকে হোয়াইট হাউসের কূলে ভেড়াতে পারবে কি? অসম্ভব, বলছে হিলারি শিবির। তির্যক হাসি হাসছেন ট্রাম্প-বিরোধী রিপাবলিকানরাও।
‘‘আমি এখনও নট আউট’’— একটুও না দমে বলছেন ডোনাল্ড ‘বিতর্কিত’ ট্রাম্প!