(বাঁ দিক থেকে) নরেন্দ্র মোদী, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং শি জিনপিং। — ফাইল চিত্র।
রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেলশোধক সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আমেরিকা। তার জেরেই ভারত নাকি রাশিয়ার থেকে তেল কেনার পরিমাণ কমিয়েছে, এমনই দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তা-ই নয়, তিনি আশাবাদী, আগামী দিনে চিনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। বেজিঙের সঙ্গে ঝুলে থাকা চুক্তিও চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে ভারত এবং চিনের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হয় ট্রাম্পকে। সেই প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প আবার জানান, মস্কোর জ্বালানি খাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ভারত রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। চিনের বিষয়েও প্রায় একই দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর কথায়, ‘‘চিন ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমাতে শুরু করেছে।’’
চিনের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোন সমীকরণে এগোবে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক, তার আভাসও দেন ট্রাম্প। দিন কয়েকের মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ায় চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা তাঁর। সেই বৈঠক নিয়ে আশাবাদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর দাবি, ওই বৈঠকে রাশিয়ান তেল ক্রয়, কৃষি, বাণিজ্য, ফেন্টাইল সঙ্কট-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। সম্প্রতি শুল্ক এবং বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পের একাধিক সিদ্ধান্তের জেরে আমেরিকা এবং চিনের সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে। ট্রাম্পের মতে, সেই সম্পর্ক মেরামত সম্ভব। জিনপিংকে তিনি বন্ধু মনে করেন। আর দক্ষিণ কোরিয়ার বৈঠকই বেজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নতুন দিশা দেখাবে বলে তাঁর মত!
বর্তমানে আমেরিকার বাজারে চিনা পণ্যের উপর ৫৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, ১ নভেম্বরের মধ্যে চিনের সঙ্গে আমেরিকার কোনও চুক্তি না-হলে বেজিংয়ের উপর ১৫৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ-ও বলেছেন, ‘‘আমাদের (চিন এবং আমেরিকা) মধ্যে যদি কোনও চুক্তি না-হয়, তবে ১ নভেম্বর থেকে সম্ভবত ১৫৫ শতাংশ শুল্ক দেবে তারা।” আমেরিকার ১০০ শতাংশ শুল্কের হুঁশিয়ারির পাল্টা দিয়েছিল বেজিংও। বলা হয়েছিল, এটা আমেরিকার ‘দ্বিচারিতা’র নিদর্শন। যদি ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কের হুমকি কার্যকর করা হয়, তবে পাল্টা পদক্ষেপ করবে চিন। বেজিঙের এই হুঁশিয়ারির পর ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, যদি চিনা পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ হয়ও তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
শুধু বাণিজ্যচুক্তি বা শুল্ক নয়, রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারত এবং চিনের উপর রুষ্ট ট্রাম্প। তিনি বার বার দাবি করেছেন, তেল রফতানি করে যে লাভ করে রাশিয়া, তা ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করে। বস্তুত, বর্তমানে চিন এবং ভারতই সবচেয়ে বেশি তেল ক্রয় করে রাশিয়ার থেকে। তাই ট্রাম্প চান, এই দুই পড়শিই রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করুক! তিনি এ-ও দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নাকি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ভারত ধীরে ধীরে রাশিয়ার থেকে তেল কেনার পরিমাণ কমিয়ে দেবে। যদিও নয়াদিল্লির তরফে ট্রাম্পের এই দাবি নিয়ে সরাসরি কোনও মান্যতা দেওয়া হয়নি। ভারত জানিয়েছে, দেশের স্বার্থে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে নানা পদক্ষেপ করেছেন ট্রাম্প। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও রফাসূত্র বার হয়নি। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে মুখোমুখি বসার কথা ছিল ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। তবে সেই বৈঠক আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তার মাঝেই বৃহস্পতিবার দুই রুশ সংস্থা ‘রসনেফ্ট’ এবং ‘লুকঅয়েল’-এর উপর নিষেধাজ্ঞা চাপায় আমেরিকা। এ বিষয়ে মার্কিন ট্রেজ়ারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের দাবি, ‘‘ইউক্রেনের সঙ্গে অর্থহীন যুদ্ধ বন্ধ করতে অস্বীকার করেছেন পুতিন। সে কারণেই দু’টি রুশ তৈলসংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হল, যারা ক্রেমলিনকে যুদ্ধের মূলধন জোগায়।’’ সেই আবহেই এ বার ভারত এবং চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার কথা বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।