গত বছর অগস্ট থেকে সুর চড়িয়ে রেখেছিলেন তিনি। নয়া আগানিস্তান নীতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানকে এক হাত নিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সন্ত্রাস দমনে উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেখাতে না পারলে ইসলামাবাদকে দেওয়া কয়েকশো কোটি ডলারের অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকিও দিয়েছিলেন। এ বার খাতায়-কলমে সেই কাজটিই করে দেখালেন তিনি। গত কাল একটি মার্কিন টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানালেন, পাক সরকারকে প্রতি বছর প্রায় একশো তিরিশ কোটি ডলারের অনুদান দেওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘পাকিস্তান তো এত বছর ধরে আমাদের জন্য কিছুই করেনি।’’
এটাই প্রথম বার নয়। এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পাকিস্তানকে দেওয়া তিরিশ কোটি ডলারের সামরিক অনুদানও বন্ধ করে দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখনই জানিয়েছিলেন, এক বছর পেরিয়ে গেলেও সন্ত্রাস দমনে (ট্রাম্পের ভাষায় ‘ওয়ার অন টেরর’) উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই করে দেখাতে পারেনি ইসলামাবাদ। এ বারও সাক্ষাৎকারে একই কথা বলেছেন তিনি। উল্টে আল-কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে তাদের দেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য পাক সরকারকে এক হাত নিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানকে বছরে একশো তিরিশ কোটি ডলার আমরা দিতাম। আর বিন লাদেন সেই পাকিস্তানেই এক বিশাল ম্যানসনে দিব্যি থাকছিল! আমরা পাকিস্তানকে সাহায্য করতাম। যেটা এখন আর আমরা করছি না। আমি এটা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার কারণ আমাদের জন্য ওরা কিছুই করেনি।’’ আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর হয়ে কাজ করা মার্কিন সেনাদের উপরে জঙ্গি হামলার দায়ও পাক সরকারের মদতপুষ্ট জঙ্গিদের উপরেই চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্পের এ হেন আচরণে বেজায় ক্ষুব্ধ ইসলামাবাদ। আজই ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাক সরকারের একাধিক মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একের পর এক টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, ইমরান জানিয়েছেন, সন্ত্রাস দমনে পাক সরকার এত দিন ঠিক কী কী করেছে, তার খতিয়ান তিনি ট্রাম্পের সামনে হাজির করবেন। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি আরও জানিয়েছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রায় ৭৫ হাজার পাক সেনা হয় নিহত হয়েছেন, নয়তো গুরুতর আহত। পাক প্রধানমন্ত্রীর আরও দাবি, জঙ্গি দমন অভিযানে বারো হাজার কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করে ফেলেছে পাক সরকার।
পাক প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মানবাধিকার মন্ত্রী শিরিন মাজারি টুইটারে সরাসরিই বলেছেন, ‘‘ঐতিহাসিক স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘মার্কিন ড্রোন হামলায় একের পর এক নিরীহ পাক নাগরিকের মৃত্যুর কথা বোধহয় ভুলে গিয়েছেন ট্রাম্প।’’ তাঁরাও যে দেশের নানা প্রান্তে একের পর এক জঙ্গি হামলার শিকার, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন শিরিন। মুখ খুলেছেন প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী খাজা আসিফও। তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকার ঋণ আমরা রক্ত দিয়ে চুকিয়েছি, চোকাচ্ছি।’’ আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘বিশ্বাসঘাতকতা আর নিষেধাজ্ঞার বোঝা’ বলেও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।