Durga Puja 2023

ঢাকের আওয়াজে মনে হয় কলকাতা বাজছে বুকে

প্রতিমা আসেন প্রতিবার একই স্নিগ্ধ ছাঁচে গড়া হয়ে। নীল পদ্মের ব্যবস্থা করা হয় শ্রীলঙ্কা থেকে। পুজোর বাড়ির রমরমা, কাজের মানুষের গুনগুন আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধুময়তা মিলে মিশে এক।

Advertisement

শ্রেয়স সরকার

প্যারিস শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

এখানে বাঙালি শরতের মধ্যে হেমন্তের এক অবিস্মরণীয় ব্যাপ্তি। কে যেন হেমন্তের পত্রবাহক এখানে; ডালে ডালে, কত কত বার্তা বিভ্রান্ত। জীর্ণ পত্রপুঞ্জের মধ্যেও কার জন্য যেন প্রতীক্ষা। মৃন্ময়ী কি অবশেষে এখানেও এলেন, জগতের সমস্ত লাবণ্য নিয়ে? জানি না। প্যারিসের আকাশে, ছিন্ন মেঘ দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, পুজো এসে গেল।

Advertisement

এখানে অক্টোবর মাস মানে শিরশিরে হাওয়া। ঝরে পড়া পাতাদের অভিমান আর ঝুপ্ করে নামা সন্ধ্যা। তার মধ্যেই দেবীর উপাসনা। গত সাত বছর ধরে এখানে পুজো কেটেছে আমার। ‘সিতে ইউনিভার্সিতে র মেসন দে ল্য অন্দে’ সম্মেলনী আয়োজিত পুজোয় আমার যাতায়াত। নতুন পাঞ্জাবির তলায় গরম পোশাক পরতে অস্বস্তি হয় না আর, বরং ফরাসি স্টেশনে বাংলায় বন্ধুবান্ধবদের ডাকাডাকি করে ট্রেনে ওঠার মজাটাই আলাদা! অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে নবমীর ভোজ, পুরোটাই একটি যাত্রা। এখানে দেবীর আরাধনার পৌরহিত্য করেন যে সমাহিত মানুষটি, তিনি ফরাসি। তাঁর পাওয়া নাম, স্বামী বীতামোহানন্দ মহারাজ। গ্রেট্জর ‘সেন্টার বেদান্তিক রামকৃষ্ণ’ র কর্ণধার। দেবীকে আবাহন করেন অবশ্য তান্ত্রিক মতে।

প্রতিমা আসেন প্রতিবার একই স্নিগ্ধ ছাঁচে গড়া হয়ে। নীল পদ্মের ব্যবস্থা করা হয় শ্রীলঙ্কা থেকে। পুজোর বাড়ির রমরমা, কাজের মানুষের গুনগুন আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধুময়তা মিলে মিশে এক। এখানে নাটক হয়, গান আর শৈশবকে উদ্‌যাপন করার জন্য এক পাল কিশোর-কিশোরদের নৃত্য-গীত-বাদ্য। অষ্টমীর অঞ্জলির সময়ে, অন্বেষণ করি বাগবাজারের সেই মূ্র্তিময়তাকে আর সমুদ্র পেরিয়ে আসা ভাইদের ঢাকের আওয়াজে মনে হয় কলকাতা বাজছে বুকে। আমি অবশ্য আমার ফরাসি বন্ধুদের টানতে টানতে নিয়ে যাই। তারা এক বছরে অনুরাগী হয়ে উঠেছে; বুঝে গিয়েছে, বাঙালিদের উৎসবের ব্যাপারটাই পৃথক। আমার বান্ধবী এলোইস্ তো প্রতিবার শাড়ী পড়তে পেরে গদগদ। এ বারও বেশ উদ্দীপিত।

Advertisement

বাঙালির পুজো এলাহি ভোজের সঙ্গে ওতপ্রোত। তাই গবেষণাগারের কাজ শেষ করে, আমার কিছু পারিবারিক বন্ধুদের সঙ্গে অষ্টমী-নবমীতে প্রতিমা দেখেই বেরিয়ে পড়ি আমার প্রিয় জাপানি রেস্তরাঁ হিগুমা বা ইতালীয় খানার দোকানে। মনে হয়, বোসপুকুর-একডালিয়া-মুদিয়ালি-সুরুচি পার করে এক দল ক্ষুধার্ত ঢুকে পড়েছি কলকাতার কোনও রেস্তরাঁয়। আমাকে তো রেস্তরাঁর এক উৎসুক পরিচারক জিজ্ঞাসা করেই ফেললেন এক বার, ‘মঁসিয়ে, আপনাদের উৎসবের পোশাক এ? ভারী মনোরম।’

এখানে আমাদের ও-পার বাংলার বন্ধুরাও পুজো করেন, ববিনিতে। সেখানে পেয়েছি এক স্বতন্ত্র আন্তরিকতার স্পর্শ। সবশেষে,
ক্লান্ত ও আনন্দে সর্বস্বান্ত মন নিয়ে প্যারিসের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, ঝরা পাতার এক-একটি কবিতা দিয়েই হোক প্রতিমা নিরঞ্জন; ততক্ষণ বাতাসে ভাসুক, ‘যস্যাঃ প্রণশ্যতে পুষ্পং গর্ভো বা পততে
যদি। ম্রিয়ন্তে বালকা যস্যাঃ কাকবন্ধ্যা চ যা ভবেৎ।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন