পর্দা উঠল পাঁচশো বছরের পুরনো রহস্যের উপর থেকে। কিংবদন্তি রেনেসাঁস শিল্পী রাফায়েলের আঁকা দু’টি ‘আনকোরা’ ছবির সন্ধান মিলল ভ্যাটিকানের দেওয়ালে।
দু’টি স্ত্রী-মূর্তি। এক জন ন্যায়, অন্য জন বন্ধুত্বের প্রতীক। ভ্যাটিকান মিউজিয়ামের যে বিশাল ঘরটি এখন ‘হল অব কনস্ট্যান্টিন’ নামে পরিচিত, সেটিরই দেওয়ালে বহু শতক ধরে ছবি দু’টি রয়েছে। কিন্তু কেউই বোঝেননি, এগুলো রাফায়েলের আঁকা।
কী ভাবে বোঝা গেল?
শিল্প-অনুরাগী ও বিশেষজ্ঞেরা বহু দিন ধরেই রাফায়েলের মৃত্যুর ঠিক আগে আঁকা কয়েকটি ছবির খোঁজ করে চলেছেন। ১৫০৮ সালে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস তরুণ রাফায়েলকে পোপের বাসভবন ভ্যাটিকানের তিনটি ঘরে আঁকার বরাত দিয়েছিলেন। এখন ‘রাফায়েল রুম’ নামে পরিচিত সেই ঘর তিনটির দেওয়াল ও ছাদ বেশ কয়েক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ফ্রেস্কোতে ভরিয়ে দেন শিল্পী।
তারপর ভ্যাটিকানের সব থেকে বড় ঘরটিতেও আঁকার পরিকল্পনা নেন। কিন্তু তার অল্প কিছু দিন পরেই, ১৫২০ সালে, মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মারা যান রাফায়েল।
কিন্তু সত্যিই কি ওই ঘরে কোনও ছবি আঁকেননি রাফায়েল?
প্রশ্নটা আরও উস্কে দিয়েছিলেন আর এক রেনেসাঁস শিল্পী, স্থপতি ও শিল্পবিশেষজ্ঞ জর্জিও ভাসারি। ১৫৫০ সালে তাঁর লেখা একটি বইয়ে ভাসারি রাফায়েলের ‘নতুন দু’টি ছবি’র উল্লেখ করেছিলেন। বলেছিলেন, ছবি দু’টি ফ্রেস্কো নয়, তেল রংয়ে এঁকেছিলেন রাফায়েল। এই ‘তেল রং’-ই ধাঁধা খোলার ‘ক্লু’ হিসেবে কাজ করেছে।
কিছু দিন আগে ‘হল অব কনস্ট্যান্টিন’ সংস্কার শুরু হয়। তখনই ঘরের প্রতিটি ছবি ফের খুঁটিয়ে দেখা শুরু করেন বিশেষজ্ঞেরা। ব্যবহার করেন অত্যাধুনিক আল্ট্রা ভায়োলেট ও ইনফ্রা রেড ফোটোগ্রাফি পদ্ধতি। তখনই ধরা পড়ে, দু’টি ছবি ঘরের অন্য সব ছবির থেকে আলাদা। কারণ, সেগুলির মাধ্যম তেল রং। তা হলে এই ছবি দু’টিই কি রাফায়েলের অন্যতম শেষ কীর্তি? আরও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছবিতে তুলির টান ঠিক রাফায়েলেরই ধাঁচের। সর্বোপরি, ছবির তলায় কোনও খসড়া স্কেচ নেই। রাফায়েলের যে সব ছাত্র ঘরের বাকি সব ছবি এঁকেছেন, তাঁরা সব সময়ে প্রথমে খসড়া রেখাচিত্র এঁকে নিয়ে তার উপরে রং চাপিয়েছেন। কিন্তু রাফায়েল বা মাইকেলেঞ্জেলোর মতো অত্যন্ত দক্ষ ও বড় মাপের শিল্পীদের রং চাপানোর আগে খসড়া রেখাচিত্র করার কোনও দরকার হত না।
ভ্যাটিকানের প্রধান শিল্প সংস্কারক ফাবিও পিয়াচেন্তিনির কথায়, ‘‘এই ছবি দু’টি মহান শিল্পীর হয়তো একদম শেষ কীর্তি। ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে!’’ ফাবিও মনে করেন, ভ্যাটিকানের দেওয়ালে হয়তো এ রকম আরও অনেক না-জানা সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে। কিন্তু গবেষণা ও সংস্কারের জন্য প্রয়োজন বিপুল টাকা ও বিশাল সময়। রাফায়েলের ছবি দু’টি-সহ ‘হল অব কনস্ট্যান্টিন’-এর সংস্কার শেষ করতে লেগে যাবে আরও পাঁচ বছর। খরচ পড়বে ৩০ লক্ষ ডলার।