ব্রেক্সিট চুক্তিতে সায় ইইউয়ের ২৭ রাষ্ট্রনেতার

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ ইয়ুঙ্কার ব্রাসেলসের শীর্ষ সম্মেলনে ঢোকার মুখে এই দু’টো শব্দ বলেই নিজের অবস্থান জানিয়ে দিলেন। বিশদে বললেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে গ্রেট ব্রিটেনের মতো একটা দেশের বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত একেবারেই আনন্দের নয়। দুঃখের দিন। এটা একটা ট্র্যাজেডি।’’ 

Advertisement

সংবাদ সংস্থা 

ব্রাসেলস শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০৯
Share:

টেরেসা মে

দুঃখের দিন!

Advertisement

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ ইয়ুঙ্কার ব্রাসেলসের শীর্ষ সম্মেলনে ঢোকার মুখে এই দু’টো শব্দ বলেই নিজের অবস্থান জানিয়ে দিলেন। বিশদে বললেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে গ্রেট ব্রিটেনের মতো একটা দেশের বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত একেবারেই আনন্দের নয়। দুঃখের দিন। এটা একটা ট্র্যাজেডি।’’

এর পরে বৈঠকে বসে ঐতিহাসিক ব্রেক্সিট চুক্তিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সায় দিলেন ইইউ নেতারা। রবিবার তাঁরা একযোগে চুক্তিতে সম্মতি জানানোর পরে বল এ বার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র কোর্টে। তাঁকে এ বার এই চুক্তি নিয়ে আগামী মাসে লড়তে হবে পার্লামেন্টে। হাউস অব কমন্সে প্রবল প্রতিরোধ তৈরির ইঙ্গিত আগে থেকেই দিয়ে রেখেছেন এমপি-রা। তাতেই স্পষ্ট যে লেবার, লিবারাল ডেমোক্র্যাট, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি-সহ শাসক দল কনজারভেটিভ-এরও কয়েক জন এমপি-ও এই চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। ইয়ুঙ্কার অবশ্য বলেছেন, ‘‘ব্রিটিশ সরকার পার্লামেন্টের সমর্থন জোগাড় করতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমিও এই চুক্তির পক্ষেই ভোট দিতাম, কারণ ব্রিটেনের পক্ষে এটাই সেরা চুক্তি।’’ টেরেসা যদি পার্লামেন্টের সায় না পান? এই ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি কমিশনের প্রেসিডেন্ট।

Advertisement

এ দিন আধ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইইউয়ের ২৭ জন রাষ্ট্রনেতা ৬০০ পাতার চুক্তিতে সায় দেন। আগামী বছরের ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরোনোর আগে চুক্তির সব শর্ত মানতে হবে ব্রিটেনকে। সঙ্গে রয়েছে ২৬ পাতার এক ঘোষণাপত্রও, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ করা হবে। ১৮ মাসেরও বেশি সময়ের কঠিন এই চুক্তিতে অর্থনৈতিক বিষয় থেকে শুরু রাখা হয়েছে নাগরিক অধিকার, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং ব্রেক্সিট পরবর্তী ২১ মাসের অন্তর্বর্তিকালীন পর্যায়ের বন্দোবস্ত-সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

প্রাক্তন ফরাসি বিদেশমন্ত্রী মিশেল বাহ্‌নিয়ে (ইইউয়ের তরফে যিনি এই চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী) বলেন, ‘‘আমরা বন্ধু হিসেবেই থাকব।’’ তার পরে তাঁর সংযোজন, ‘‘এ বার সবার দায়িত্ব নেওয়ার সময়।’’ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ বলেছেন, এই চুক্তি দেখিয়ে দিল, ইউরোপের সংস্কার প্রয়োজন। তিনি জোর দিয়ে বলছেন, প্যারিস চায় ব্রিটেন ইইউয়ের শর্ত মেনে এগোক (বিশেষত পরিবেশ সংক্রান্ত)। তার বদলে ব্রিটেনকে ব্যবসার সহজ সুযোগ করে দেবে তাঁর দেশ। মাকরঁর মতে, ব্রিটেন যে পথ বেছেছে, তা নিয়ে আনন্দের কিছু নেই, হা হুতাশ করারও কিছু নেই। ব্রিটেন নিজের পছন্দে হাঁটতে চেয়েছে— সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

টেরেসা যে ভাবে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে লড়েছেন, তার প্রশংসা করেছেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত্তে। তাঁর বিশ্বাস, আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্টে আস্থা অর্জন করতে পারবেন টেরেসা।

কিন্তু বাস্তব চিত্র তা বলছে না। অনেকেরই ধারণা, পার্লামেন্টে সায় না পেলে ব্রিটেন কোনও রকম নয়া বন্দোবস্ত ছাড়াই বিপজ্জনক ভাবে বেরিয়ে যাবে ইইউ থেকে। ফের সাধারণ নির্বাচনের সম্ভাবনাও তৈরি হবে দেশে। লন্ডনের সংবাদমাধ্যমের খবর, পার্লামেন্টের সায় না পেলে বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি রাখতে টেরেসার বেশ কয়েক জন মন্ত্রী ইইউয়ের কূটনীতিকদের সঙ্গে তলে তলে আলোচনা চালাচ্ছেন।

ব্রাসেলস থেকে রবিবার দেশবাসীর উদ্দেশে এক খোলা চিঠিতে টেরেসা বলেছেন, ‘‘এই চুক্তি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন