Joe Biden

Joe Biden: আফগানিস্তান প্রশ্নে আমেরিকার ওপর সন্দেহ বাড়ছে বন্ধু দেশগুলির, প্রশ্ন নেতৃত্ব নিয়েও

গত কাল জি৭-এর ভার্চুয়াল বৈঠকে রাষ্ট্রনেতারা ‘বন্ধু’ বাইডেনের কাছে ৩১ অগস্টের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২১ ০৬:৫১
Share:

ফাইল চিত্র।

আচমকাই কাবুলের পতন, প্রায় সম্পূর্ণ আফগানিস্তান তালিবানের হাতে চলে যাওয়া, দেশের নাগরিকদের সরানোর আগেই আফগান মাটি থেকে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার— একের পর এক ঘটনাপ্রবাহে সন্দিহান আমেরিকার মিত্র দেশগুলি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে তাদের সর্বশেষ অনুরোধ ছিল, ৩১ অগস্টের পরেও কিছু দিন আফগানিস্তানের মাটিতে সেনা থাকুক। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় বাইডেন। জানিয়ে দিয়েছেন, ৩১-এর মধ্যেই আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার করা হবে। এর ফলে বিশ্বমঞ্চে আমেরিকার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

Advertisement

গত কাল জি৭-এর ভার্চুয়াল বৈঠকে রাষ্ট্রনেতারা ‘বন্ধু’ বাইডেনের কাছে ৩১ অগস্টের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সকলের হয়ে বাইডেনের কাছে আবেদন জানান, আফগানিস্তানে আটকে থাকা বিদেশিদের উদ্ধারকাজ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত কাবুলে থাকুক আমেরিকান বাহিনী। তিনি আরও বলেন, এমন বহু আফগান রয়েছেন, যাঁরা এত দিন নেটোকে সাহায্য করেছে, প্রাণ সংশয়ে থাকা সেই মানুষগুলোকে নিরাপদে বার করা আনা জরুরি। কিন্তু এর পরেও বাইডেন তাঁর কথা থেকে নড়চড় করতে রাজি নন।

আমেরিকার অন্যতম মিত্রশক্তি ইউরোপের চোখে বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত স্রেফ পালিয়ে যাওয়া এবং সমস্যা থেকে হাত ধুয়ে ফেলা, যে সমস্যা কি না একপ্রকার তারাই তৈরি করেছে। এক শীর্ষস্থানীয় ইউরোপিয়ান নেতা ক্ষোভ, ‘‘সিরিয়া থেকে যখন আমেরিকা সেনা সরিয়েছিল, তার ফল ভুগতে হয়েছিল ইউরোপকে। আমেরিকার কিন্তু কিছু হয়নি।’’

Advertisement

আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত তার বন্ধু-দেশগুলির পক্ষে মেনে নেওয়া আরও কঠিন কারণ এই সব দেশের, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলির বিদেশ নীতি অনেকটাই আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। ইউরোপের দেশগুলি ধরেই নিয়েছিল যে, পশ্চিমি শাসন-ব্যবস্থার প্রতি আমেরিকার যে দায়বদ্ধতা, তা তারা নেটো এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের মাধ্যমে বজায় রাখবে।

আমেরিকার উপর ইউরোপের এই বিশ্বাস নতুন কিছু নয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় ইউরোপীয় কূটনীতিকরা বারবারই জানিয়েছিলেন, তাঁরা ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ চান। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে বিষয়টা ধরলে এমন— যখন আমেরিকা সেনা সরাবে, বাকিরাও সরিয়ে নেবে। কিন্তু সকলের সম্মিলিত ইচ্ছের অভাবে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৪৯ সালে যখন ২৮টি ইউরোপীয় দেশ ও উত্তর আমেরিকার দুই দেশকে নিয়ে নেটো অর্থাৎ ‘নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন’ তৈরি হয়। চুক্তি হয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ মেনে চলবে সব পক্ষ এবং সব দেশের সরকার সকলকে নিয়ে শান্তিতে থাকবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদে লেখা আছে: রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্দেশ্যই হল বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। যদি কোনও ভাবে বিশ্ব-শান্তি বিঘ্নিত হয়, সে ক্ষেত্রে তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে। সমালোচকদের বক্তব্য, বাইডেনের আচরণ তাদের অঙ্গীকার ভাঙছে। প্রশ্ন তুলছে, তারা কি আদৌ বিশ্ব মঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় রয়েছে?

বাইডেনের যদিও বক্তব্য, এক দশক আগে আল কায়দা নেতা ওসামা বিন-লাদেনকে যে দিন হত্যা করা হয়েছিল, সে দিনই আফগানিস্তানের সন্ত্রাস-দমন অভিযান শেষ করেছিল আমেরিকা। জি৭ বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সকলেরই শরণার্থীদের, যাঁরা আফগানিস্তান ছেড়ে পালাচ্ছেন, তাঁদের সাহায্য করা উচিত। এ সব ক্ষেত্রে আমেরিকা নেতার ভূমিকাতেই থাকবে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি ও আমাদের বন্ধু দেশগুলি একই কাজ করবে।’’ বাইডেনের কথায়, ‘‘গত বিশ বছরে যে ভাবে আমরা লড়েছি, সে ভাবেই সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আফগানিস্তানের পরিস্থিতির সঙ্গে লড়ব। এ বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি।’’

বাইডেনের যুক্তি মানতে রাজি নয় অনেকেই। ‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’-এর ডিরেক্টর মার্ক লিয়োনার্ড বলেন, ‘‘আমার কাছে... বিষয়টি একটি ভূরাজনৈতিক অধ্যায়ের শেষ। নতুন একটি অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। যাতে আমেরিকা বনাম চিন প্রতিযোগিতা চলবে।’’ অনেকের এ-ও মতামত, আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার এই ভাবে প্রস্থান, সে দেশে শত্রুপক্ষের প্রভাব বাড়াবে। ব্রিটিশ কর্তা ও প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী ডেভিড লিডিংটনের কথায়, ‘‘পশ্চিমের আত্মবিশ্বাসের অভাবেই আফগানিস্তানে এই হার। যা রাশিয়া ও চিনের জন্য খুবই সুবিধাজনক হবে।’’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য এখনও বলছেন, তালিবান যদি দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক আফগানদের ৩১ অগস্টের পরেও বেরোতে দেন, তা হলেই আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোয় সম্মত হবে জি৭।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন