হিলারির ই-মেল তদন্ত থেকে জলবায়ু, ট্রাম্প আজ অচেনা

ট্রাম্প টাওয়ারে গত কাল প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট সাংবাদিকদের কড়া সুরে বিঁধেছিলেন আগেই। বাদ যায়নি নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মতো কাগজও। দ্বিতীয়টিকে পুরোপুরি ব্রাত্য করলেও সরাসরি নিউ ইয়র্ক টাইমসের কোনও প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাল বসেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১২
Share:

সওয়াল-জবাব। বুধবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের দফতরে প্রসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এপি।

ট্রাম্প টাওয়ারে গত কাল প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট সাংবাদিকদের কড়া সুরে বিঁধেছিলেন আগেই। বাদ যায়নি নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মতো কাগজও। দ্বিতীয়টিকে পুরোপুরি ব্রাত্য করলেও সরাসরি নিউ ইয়র্ক টাইমসের কোনও প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাল বসেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটারে তাঁর দাবি ছিল, ওই দৈনিকের সঙ্গে পরিকল্পিত বৈঠক তিনিই বাতিল করেছেন। কারণ বৈঠকের বিভিন্ন শর্ত শেষ মুহূর্তে মানতে অস্বীকার করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। যদিও সে দাবি উড়িয়ে দেয় দৈনিক। প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট আরও একটি টুইটে জানান, ‘সম্ভবত পরবর্তী কালে ওদের সঙ্গে বৈঠক হবে। কিন্তু ওরা হয়তো এর মধ্যেও আমাকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে যাবে।’

Advertisement

তবে সব ভাল যার শেষ ভাল। শেষ পর্যন্ত ওই মার্কিন দৈনিকের বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে মুখোমুখি বসেছেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কথা বলেছেন। শুরুতে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রশংসা করেও তাদের সমালোচনা করতে ভোলেননি ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমের অনেকেই আক্রমণ করেছে তাঁকে। ট্রাম্পের মতে, ‘তার মধ্যে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর নিউ ইয়র্ক টাইমস!’ কথা হয়েছে হিলারি ক্লিন্টন থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো নানা বিষয় নিয়ে। বস্তুত এই দুই প্রসঙ্গে তিনি আগেকার অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিতও দিয়েছেন এই সাক্ষাৎকারে।

Advertisement

প্রসঙ্গ হিলারি

প্রাক্তন বিদেশসচিবকে নিয়ে কোনও বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট। তিনি বলেছেন, ‘‘কোনও একটা প্রতিবেদনে এক জন লিখেছে, এই বিষয়টি নিয়ে আমি আর আগ্রহী নই। দেখুন, আমি এগিয়ে যেতে চাই, পিছনে হাঁটতে চাই না। ক্লিন্টনদের আঘাত দিতে চাই না। সত্যিই চাই না।’’ এই প্রসঙ্গে ট্রাম্পের মন্তব্য, ‘‘অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে ওঁকে। নানা ভাবে কষ্ট পেয়েছেন। তাই ওঁদের আর আঘাত দিতে চাই না। প্রাইমারিগুলো সাংঘাতিক ছিল। প্রচার পর্বটাও বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। আপনারা হয়তো অনেক কাগজ বেচতে পেরেছেন! কিন্তু এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়।’’

এত কিছু বলার পরেও ট্রাম্পের ফের জানতে চাওয়া হয় ইমেল বা ক্লিন্টন ফাউন্ডেশন নিয়ে কোনও তদন্ত সত্যিই কি হবে না? তাতে ট্রাম্পের জবাব, ‘‘না না, এ সব নিয়ে এখন ভাবছি না। ভাবছি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে। গভীর ভাবে ভাবছি একটা অভিবাসন বিল নিয়ে। গত ৫০ বছর ধরে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে, কিন্তু হয়নি কিছুই।’’

পরিবেশ বাঁচাতে

প্রচারপর্বে তিনি বলেছিলেন, আমেরিকাকে পর্যুদস্ত করতেই বিশ্ব উষ্ণায়নের তত্ত্ব খাড়া করছে চিন। আসলে পুরোটাই নাকি একটা গুজব! কিন্তু এখন ধীরে ধীরে সেই বক্তব্য থেকেই পিছু হটছেন ট্রাম্প।

এখন বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় বিশ্ব উষ্ণায়ন আর মানুষের কাজকর্মের মধ্যে কোথাও একটা যোগ রয়েছে।’’ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তা হলে ট্রাম্প এখন মেনে নিচ্ছেন বিশ্ব উষ্ণায়ন কোনও ‘গুজব’ নয়। এ বছরের ২২ এপ্রিল পরিবেশ রক্ষার্থে প্যারিস চুক্তিতে সই করেছিল একশোরও বেশি দেশ। ছিল আমেরিকাও। সেই চুক্তি অনুসারে, খেয়াল রাখা হবে পৃথিবীর তাপমাত্রা যেন বর্তমানের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে। আরও ভাল হয় যদি উষ্ণায়নকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমায় বেঁধে রাখা যায়। কিন্তু ভোটের ময়দানে ট্রাম্পের হুমকিতে বেশ চিন্তায় পড়েছিলেন পরিবেশবিদরা। কী করবেন ট্রাম্প! বিশ্বের পরিবেশ রক্ষার্থে কি সত্যিই হাত গুটিয়ে নেবেন তিনি?

তবে পরিবেশবিদদের আশ্বস্ত করে প্যারিস চুক্তি সম্পর্কে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘আমি আরও উদার মনে ওই বিষয়ে ভাবব।’’ আমেরিকা যে অতিরিক্ত কার্বনকণা বাতাসে ছেড়েছে, এর ফলে যদি অন্যান্য দেশ মার্কিন পণ্যের উপর কোনও কর বসায়, তখন কী করবেন ট্রাম্প? এ প্রসঙ্গে নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অবশ্য মনে করেন, আদৌ এমন কিছু করবেন না অন্য দেশের নেতারা।

বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কিছু দিন আগেই প্রশান্ত মহাসাগরের মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলদা হেইন বলেছিলেন, ‘‘গত বছরে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এখন যখন নেতৃত্ব দেওয়ার বাস্তব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন তিনি, তখন আশা করছি বুঝতে পারবেন জলবায়ু পরিবর্তন আমেরিকাবাসীদের কাছে এবং আমাদের মতো দেশের নাগরিকদের কাছে একটি বিপদ সঙ্কেত।’’ আর এখন ১৮০ ডিগ্রি উল্টো দিকে ঘুরে ট্রাম্পও বলেছেন, ‘‘বিশ্ব উষ্ণায়ন মার্কিন শিল্পে কতটা প্রভাব ফেলবে এ নিয়ে আমরা ভাবছি।’’ আর সেই আশাতেই এখন বুক বাঁধছেন পরিবেশবিদরা।

শান্তির খোঁজে জামাই

প্রচার পর্বে ট্রাম্প ইজরায়েল-প্রীতি বুঝিয়েছেন বারবার। কিন্তু প্যালেস্তাইনের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কোনও স্পষ্ট নীতির কথা বলেননি। সেই সমস্যা সমাধানে ট্রাম্প ভরসা রাখছেন জামাই জ্যারেড কুশনারের উপরে। তেমনটাই জানিয়েছেন সাক্ষাৎকারে। কূটনীতি সম্পর্কে সে ভাবে কোনও অভিজ্ঞতা নেই জ্যারেডের। কিন্তু ট্রাম্প-কন্যা ইভাঙ্কার ইহুদি স্বামীর দাদু-ঠাকুমা নাৎসি জমানার গণহত্যা-পর্বের সাক্ষী থেকেছেন। অন্তর্বর্তিকালীন দলের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে ওঠা জ্যারেড শ্বশুরমশাইকে আরও নানা বিষয়ে পরামর্শ দেবেন, এটাই স্বাভাবিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন