ফের দেখা মিলল লক্ষ বছর আগে অবলুপ্ত পাখির

এই নিয়ে দ্বিতীয় বার তারা অবলুপ্তির গহ্বর থেকে ফিরে এল। বিশেষজ্ঞদের দাবি, লক্ষ বছর আগের ওই ঘটনার কয়েক হাজার বছর পরে পাখিটি আবার ফিরে এসেছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ভিক্টোরিয়া (সেশেলস) শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০৫:৪৯
Share:

হোয়াইট থ্রোটেড রেল।

ভারত মহাসাগরের উপরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাল দ্বীপ, আলডাবরা। ছবির মতো সাজানো এই দ্বীপেই এক সময় বাস ছিল ‘হোয়াইট থ্রোটেড রেল’-এর। প্রায় ১ লক্ষ ৩৬ হাজার বছর আগে সমুদ্রের তলদেশে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় দ্বীপটি। বাসস্থান খুইয়ে হারিয়ে গিয়েছিল পাখিটিও। কিন্তু প্রকৃতি-বিজ্ঞানীদের দাবি, আবার ফিরে এসেছে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সেই ‘হোয়াইট থ্রোটেড রেল’।

Advertisement

তবে এই ফিরে আসার কাহিনিও বিচিত্র। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার তারা অবলুপ্তির গহ্বর থেকে ফিরে এল। বিশেষজ্ঞদের দাবি, লক্ষ বছর আগের ওই ঘটনার কয়েক হাজার বছর পরে পাখিটি আবার ফিরে এসেছিল। সে সময়ে সমুদ্রের জল নেমে গিয়েছিল। জল নামতেই দ্বীপটি আবার জেগে ওঠে। আর তখনই পাখিটি (আকারে মুরগির মতো) ফের রাজ্যপাট গড়ে তোলে ওই প্রবাল দ্বীপে। এই দুই ঘটনার আগের ও পরের জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে এখন তাঁরা বলছেন, ‘‘আলডাবরা দ্বীপে পাখিটি এখনও রয়েছে।’’

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, একে ‘ইটেরেটিভ ইভোলিউশন’ বলে। অর্থাৎ কি না, কোনও প্রাণীর উত্তরসূরিদের মধ্যে কোনও একটি প্রজাতির একাধিক বিবর্তন ঘটে। এবং ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে ফিরে-ফিরে আসে তারা। অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা গেলেও ‘রেল’ বা মাটিতে বসবাসকারী ছোট বা মাঝারি মাপের পাখিদের মধ্যে এমন নজির এই প্রথম। পাখিদের মধ্যেই এটি বেশ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা ‘লিনিয়ান সোসাইটি’তে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

Advertisement

পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ডেভিড মারটিল বলেন, ‘‘রেল বা কোনও পাখির মধ্যেই আমরা এ ধরনের ঘটনা দেখিনি। এমন কোনও উদাহরণ নেই।’’

অবলুপ্তি ও ফিরে আসার ইতিহাসটা এ রকম: ‘রেল’ পরিবারের পাখিদের পূর্বপুরুষের বাস ছিল পূর্ব আফ্রিকার উপকূল থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগরের ম্যাডাগাস্কার দ্বীপে। এক সময়ে এদের সংখ্যা এত বেড়ে যায়, যে এরা দ্বীপ ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দেয়। কেউ উত্তরের দিকে উড়ে যায়, কেউ দক্ষিণে। কিন্তু এরা কেউই তেমন উড়তে পারত না। ফলে লম্বা রাস্তা পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই ভারত মহাসাগরে ডুবে যায়। যারা পশ্চিমে যায়, তারা আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডে পৌঁছয়। কিন্তু অচেনা অজানা জায়গায় গিয়ে বিপদে পড়ে। প্রাণ হারায় অধিকাংশই। কারও কারও ভাগ্য ভাল ছিল। তারা মরিশাস, রিইউনিয়ন, আলডাবরা পৌঁছয় এবং সেখানে রাজ্যপাট গড়ে তোলে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা ওড়ার ক্ষমতাটাই হারিয়ে ফেলে। কারণ ওই সব দ্বীপে তাদের ওড়ার প্রয়োজন পড়ত না। ফলে দ্বীপেই বন্দি হয়ে পড়ে। তাই দ্বীপ যখন সমুদ্রের তলদেশে ডুবতে থাকে, তারা আর পালানোর সুযোগ পায়নি। তত দিনে তারা আর একটুও উড়তে পারে না। ফলে দ্বীপের সঙ্গেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তারা। ঠিক যা ঘটেছিল, ডোডো পাখিদের ক্ষেত্রে। কিন্তু ডোডো যা পারেনি, তাই করে দেখিয়েছে ‘হোয়াইট-থ্রোটেড রেল’।

মারটিলের কথায়, ‘‘ভারত মহাসাগরের উপরে আলডাবরাই একমাত্র দ্বীপ, যেখানে এমন জীবাশ্ম রয়েছে, যা অবলুপ্তির প্রমাণ দেয় এবং দেখিয়ে দেয় সেখান থেকেও ফিরে আসা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন