International News

ছেলের খুনিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন বাবা! কেন জানেন?

ক্ষমায় জুড়ে গেল পৃথিবীর দুই গোলার্ধের দু’টি পরিবার।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কেনটাকি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ১৪:২৬
Share:

সেই আবদুল-মুনিম সোমবাত জিতমউদ

রায় দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন বিচারক। সকলেই জানেন, মৃত্যুদণ্ডই দেওয়া হবে। বা যাবজ্জীবন। থমথম করছে গোটা আদালত কক্ষ।

Advertisement

সেই সময় সাক্ষীর স্ট্যান্ড থেকে বিচারকের দিকে তাকিয়ে করজোড়ে ৬৬ বছরের আবদুল-মুনিম সোমবাত জিতমউদ বলে উঠলেন, ‘‘অল্প বয়সের ছেলে। ওকে ক্ষমা করে দিলাম। ইসলাম ধর্ম ক্ষমার কথাই বলে।’’ জিতমউদের কাছে ক্ষমা চাইল অভিযুক্ত। জিতমউদ জড়িয়ে ধরলেন আসামির স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো ট্রে আলেকজান্ডার রেলফোর্ডকে।

চোখের পাতা ভিজে উঠল কেনটাকির ফেয়েতে কাউন্টি সার্কিট জজ কিমবার্লি বানেলেরও। কিছু ক্ষণের জন্য আদালত মুলতুবি ঘোষণা করে তাঁর নিজের ঘরে চলে গেলেন বিচারক বানেল।

Advertisement

আরও পড়ুন- কুকুর কিনে টার্গেট প্র্যাকটিস করত টেক্সাসের গণঘাতক!​

আরও পড়ুন- ভারত-পাকিস্তানের খাবারে দুর্গন্ধ! ভাড়াটে রাখতে চান না ব্রিটেনের ব্যক্তি​

গোটা আদালত কক্ষে যেন তখন পিন পড়লেও শব্দ শোনা যাবে! পিৎজা খেতে গিয়ে আড়াই বছর আগে জিতমউদের ছেলে সালাউদ্দিনকেই তো ছুরি মেরে খুন করার অভিযোগ রয়েছে ২৪ বছর বয়সী অভিযুক্ত রেলফোর্ডের বিরুদ্ধে। রয়েছে পিৎজার দোকানে ডাকাতি, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ। তদন্ত, তথ্যাদিতে তা প্রমাণিতও হয়েছে আদালতে। এত কিছুর পরেও বাবা হয়ে কী ভাবেই বা তাকে বেমালুম ক্ষমা করে দিলেন জিতমউদ! আইনজীবী থেকে শুরু করে আদালত কক্ষে হাজির সকলেই মুখ চাওয়াচায়ি করতে থাকলেন।

বিস্ময়ের আরও কিছু বাকি ছিল গত মঙ্গলবার কেনটাকির ফেয়েতে কাউন্টি সার্কিট আদালতের ওই কক্ষে হাজির সকলেরই। বিচারক, আইনজীবীরা দেখলেন, রেলফোর্ডকে ক্ষমা করে সাক্ষীর স্ট্যান্ড থেকে আসামীর স্ট্যান্ডে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেই থেমে থাকলেন না জিতমউদ, আবেগে বুকে জড়িয়ে ধরে রেলফোর্ডের কানে কানে সালাউদ্দিনের বাবা বললেন, ‘‘কোনও চিন্তা কোর না। ইসলামকে স্মরণ করবে সব সময়।’’

রেলফোর্ডের বিরুদ্ধে যে যে ধারায় অভিযোগ ছিল, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয় মৃত্যুদণ্ড, না হলে ৩১ বছরের কারাদণ্ড। জিতমউদের বক্তব্য শুনে কিছু ক্ষণ পর আদালতে ফিরে এসে বিচারক বানেল ৭ বছরের কারাদণ্ড দিলেন রেলফোর্ডের।

তার পর আসামীর স্ট্যান্ডে গিয়ে রেলফোর্ডকে আরও এক বার আবেগে জড়িয়ে ধরলেন জিতমউদ। তার পাশে গিয়ে বললেন, ‘‘ভাবছ কেন? সময়টা দেখতে দেখতে কেটে যাবে। এর পর তোমার জীবনটা আবার নতুন করে শুরু হবে। একেবারে অন্য ভাবে এ বার গড়ে তোল জীবনটাকে। শুধু ভাল ভাল কাজ করবে এ বার, আর সকলকে ভাল কাজ করতে উৎসাহ জোগাবে। সঠিক পথে চলবে সব সময়। ইসলামকে স্মরণ করে চলার মাধ্যমে সেটা তুমি জেল থেকেই শুরু করে দাও না। এই করতে করতে ৭ বছর পর তোমার ৩১ বছর বয়সে যখন তুমি জেল থেকে বেরিয়ে আসবে তখন জীবনটাকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার জন্য নিজেকে তৈরি রাখতে পারবে।’’

শুনে চোখে জল এসে গেল আসামী রেলফোর্ডের। জিতমউদ তখনও তাকে ধরে রয়েছেন বুকে। চোখের জল মুছতে লাগল রেলফোর্ড।

জিতমউদ তাঁর পরিবার পরিজন নিয়ে এখন থাকেন তাইল্যান্ডে। আগে অবশ্য তিনি বহু বছর কাটিয়েছেন মার্কিন মুলুকে। আমেরিকার বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। প্রধান ছিলেন লেক্সিংটন ইউনিভার্সাল অ্যাকাডেমিরও।

এই লেক্সিংটনেই একটা পিৎজার দোকান ছিল জিতমউদের ছেলে সালাউদ্দিনের। সেখানে ২২ বছর বয়সী সালাউদ্দিনকে ছুরি মেরে খুন করেছিল রেলফোর্ড। তার পর তার দোকান লুঠপাট করে ক্যাশবাক্স ভাঙচুর করেছিল, আড়াই বছর আগে।

বিচারক রেলফোর্ডকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার পর তাকে জড়িয়ে ধরে জিতমউদ বলেছেন, ‘‘আমি তোমাকে দোষ দিই না। দোষ সেই শয়তানটার।যে তোমাকে ওই জঘন্য অপরাধ করতে প্ররোচনা দিয়েছিল। সেই শয়তানটা আমাদের সকলের মধ্যেই আছে। আমরা কেউ কেউ তাকে বাড়াবাড়ি করতে দিই, কেউ দিই না।’’

রায় দেওয়ার আগে বিচারক রেলফোর্ডের মা গেল কুট বার্ডের সাক্ষ্যও শুনেছেন। রেলফোর্ডের মা বলেছেন, জিতমউদ যে তাঁর ছেলেকে ক্ষমা করে দেবেন, তিনি তা ভাবতেও পারেননি। তিনি অভিভূত। ছেলে রেলফোর্ড যে ছোটবেলা থেকেই মাদকাসক্ত, আদালতে সে কথাও কবুল করেন তার মা কুট বার্ড।

জিতমউদ জানিয়েছেন, আদালত কক্ষে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি রেলফোর্ডের মা-ও। জিতমউদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য তাঁর ই-মেল অ্যাড্রেস নিয়েছেন রেলফোর্ডের মা। আর ইসলাম সম্পর্কে তিনি আরও জানতে চেয়েছেন জিতমউদের কাছে। কথা দিয়েছেন, তিনি নিয়মিত মেল পাঠাবেন জিতমউদকে, ইসলামের আদর্শ জানতে, বুঝতে।

৭ বছরের জন্য জেলে গেল রেলফোর্ড। তাইল্যান্ডে ফিরে যাচ্ছেন জিতমউদও।

আর জিতমউদ ও রেলফোর্ডের পরিবার পরিজনদের কাছে থেকে গেল আদালত কক্ষের বাইরে দুই পরিবারের গ্রুপ ফোটোগ্রাফ।

ক্ষমায় জুড়ে গেল পৃথিবীর দুই গোলার্ধের দু’টি পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন