অপহরণের পর ৩৬ ঘণ্টা কেটে গেলেও কোনও খবর নেই কলকাতার মেয়ে জুডিথ ডি’সুজার। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আফগান প্রশাসনের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে জুডিথকে উদ্ধারের সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। আফগান পুলিশ এবং গোয়েন্দারা মনে করছেন, তালিবান বা অন্য কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী নয়, কাবুলে কলকাতার মেয়ের অপহরণের পিছনে সম্ভবত অন্য কোনও দুষ্কৃতী দলের হাত রয়েছে। কাবুলের আশপাশের এলাকায় এমন বেশ কয়েকটি সংগঠিত দুষ্কৃতী দল সক্রিয়, যারা বিদেশীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে। জুডিথ ডি’সুজা তাদের কব্জাতেই রয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসনের সন্দেহ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জুডিথের অপহরণকারীরা পাশতো ভাষায় কথা বলছিল। তাদের কথাবার্তায় শোমালি অঞ্চলের টান ছিল। শোমালি হল আফগানিস্তানের সেই অঞ্চল, যাকে এক সময় সে দেশের সবচেয়ে উর্বর এলাকা বলা হত। কিন্তু দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে চাষ-আবাদ বন্ধ হয়ে সেই অঞ্চলও এখন প্রায় মরুভূমি। সেখানেই তৈরি মাথাচাড়া দিয়েছিল বেশ কয়েকটি মাফিয়া গোষ্ঠী। আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের কাজে অংশ নিতে যে বিদেশি নাগরিকরা সে দেশে কর্মরত, তাঁদের অপহরণ করে লক্ষ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করছিল শোমালি এলাকার মাফিয়ারা। বিত্তশালী আফগান নাগরিকদেরও তারা অপহরণ করত। হাবিব ইসতালিত এবং রইস খুদাইদাদ নামে দুই মাফিয়ার গোষ্ঠী ২০১৪ সাল পর্যন্তও ওই এলাকার ত্রাস ছিল। ২০১৪ থেকে আফগান প্রশাসন এই মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। গত বছর দু’জনকেই নিকেশ করা হয়। তার পর থেকে অপহরণ, খুন, লুঠতরাজের ঘটনা কমে গিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে কাবুলের আশপাশের এলাকায় সে সব আবার বাড়তে শুরু করে।
কাবুলের তৈমানি এলাকায় থাকতেন কলকাতার মেয়ে জুডিথ। তার কাছেই কালা-এ-ফাতুল্লা রোড থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়। মাসখানেক আগেই ওই রাস্তায় আরও একটি অপহরণের চেষ্টা হয়েছিল। একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীর গাড়ি আক্রান্ত হয়েছিল সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের হাতে। তবে অপহরণের চেষ্টা সে বার সফল হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীকে অপহরণ করা ওই দুষ্কৃতীদের উদ্দেশ্য ছিল না, গাড়িটা ছিনতাই করাই ছিল আসল লক্ষ্য। সেই ঘটনার পরই কাবুলের মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি প্রকাশ করে আফগান প্রশাসনকে সতর্ক করে। এলাকায় খুন, অপহরণ, লুঠতরাজের চেষ্টা আবার বাড়ছে বলে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে। ভারতীয় দূতাবাসও সতর্কবার্তা জারি করে। সে দেশে কর্মরত ভারতীয়দের সতর্ক করে বলা হয়, খুন এবং অপহরণের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
সে দিনের আতঙ্ক তাড়া করে আজও
বৃহস্পতিবার রাতে অপহৃত হয়েছেন জুডিথ। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে শুক্রবার সকালেই বৈঠকে বসেন কাবুলে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার মনপ্রীত ভোহরা। আফগান প্রশাসন জুডিথকে উদ্ধারের জন্য বড়সড় অভিযানে নেমেছে। ইতিমধ্যেই দু’জন সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, জুডিথকে উদ্ধারের জন্য সব রকমের চেষ্টা শুরু করেছে ভারত সরকার। জুডিথ যে সংস্থার হয়ে আফগানিস্তানে কাজ করছিলেন, সেই আগা খান ফাউন্ডেশনও যে কোনও মূল্যে জুডিথ ডি’সুজার মুক্তি নিশ্চিত করতে তৎপর। তবে কাবুলে কর্মরত এক ভারতীয় কূটনীতিক বলেছেন, ‘‘বিষয়টা নিয়ে হইচই যত কম হবে, জুডিথকে মুক্ত করা আমাদের পক্ষে ততটাই সহজ হবে।’’