George Floyd

ফ্লয়েডের সেই তীব্র আর্তনাদ শুনে কেঁদে ফেলেছিলাম

আমরা সবাই অতিমারি পরিস্থিতিতে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। এই নতুন ভাইরাসের আক্রমণের প্রতিকার ও প্রতিরোধের প্রচেষ্টায় সময় কাটছে।

Advertisement

অভিজিৎ হালদার

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ০৪:২০
Share:

ফাইল চিত্র।

কৃষ্ণাঙ্গ নই। তবুও বলছি, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’। একটি শ্বেতাঙ্গ অঞ্চলে হাজারখানেক প্রতিবাদীর সঙ্গে আন্দোলনে যুক্তও হয়েছি। আমার জন্ম ভারতে। গায়ের রং বাদামি। ২০০৮ সাল থেকে নিউ ইয়র্কে রয়েছি। কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর ট্রেভর মার্টিনের খুনিকে ২০১৩ সালে বিচারক বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার পর থেকেই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের শুরু। কিন্তু সেই সময়ে বিষয়টা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাইনি। সম্প্রতি জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে হত্যার সেই পৌনে ন’মিনিটের ভিডিয়ো দেখে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গিয়েছি। পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চির মানুষটিকে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশকর্মী হাঁটু দিয়ে চেপে ধরার পরেই কেঁদে মাকে ডাকা, শেষবারের মতো শ্বাস নেওয়ার আগে তীব্র আর্তনাদ ‘আই কান্ট ব্রিদ’ আমাকে হিমশীতল করেছে। কেঁদে ফেলেছি। দিশাহারা লাগছে।

Advertisement

আমরা সবাই অতিমারি পরিস্থিতিতে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। এই নতুন ভাইরাসের আক্রমণের প্রতিকার ও প্রতিরোধের প্রচেষ্টায় সময় কাটছে। কিন্তু বর্ণবৈষম্য এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের ভাইরাসটি সব সময়েই এড়িয়ে গিয়েছি। যদিও বিশ্বব্যাপী এই অরাজকতা তীব্র ভাবে ছড়িয়ে রয়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তবুও বেশির ভাগ অ-কৃষ্ণাঙ্গ মানুষই বিষয়টিকে গুরত্ব দেন না।

শ্বেত-অনুরাগ এমন একটি মানসিকতা, যা মানুষে-মানুষে ক্রমাগত বিভাজন তৈরি করে চলেছে। যেখানে এক দল মানুষ সুবিধাভোগী আর অন্যেরা নির্যাতিত এবং হিংসার শিকার। শুধু গায়ের রঙের কারণেই যেন এটা ‘নিয়মে’ পরিণত হয়েছে । শ্বেত-অনুরাগ যেন আমাদের আদর্শ ও কাঙ্খিত হয়ে উঠেছে। আমরা অন্ধের মতো তার পিছনে ছুটে চলেছি। সেই কারণেই এখানে অধিকাংশ দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীই চুপ থাকে বা প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলে। আমেরিকায় এই পুলিশি আচরণ দাসদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে ১৭০০ সালে শুরু হয়েছিল। কৃষ্ণাঙ্গ দাসেরা খেতখামার থেকে যাতে পালাতে না-পারে, তার নজরদারিতেই ব্যস্ত থাকতেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশকর্মীরা। সেই রীতি বজায় রয়েছে ২০২০ সালেও।

Advertisement

এক জন বাদামি বর্ণের মানুষ হিসেবে আমিও ব্যক্তিগত ভাবে নানা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছি। ‘স্টপ অ্যান্ড ফ্রিস্ক’ নামে এখানে একটি আইন রয়েছে যা সরাসরি শ্বেতাঙ্গ ছাড়া অন্য সব বর্ণের মানুষকে আঘাত করে। আমিও সেই আইনের শিকার হয়েছি। এমনও হয়েছে, যোগ্যতা ও মেধা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্খিত কাজের সুযোগ পাইনি। অধিকাংশ দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীরই এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে। তা-ও তাঁরা উদাসীন। কৃষ্ণাঙ্গ মুক্তি আন্দোলনের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন না।

‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য সমাজ থেকে মুছে ফেলা। আন্দোলনকারীদের স্বপ্ন, এমন এক পৃথিবী গড়া, যেখানে বর্ণবৈষম্য, অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্য থাকবে না। তাই এই আন্দোলনটি সকল বর্ণের মানুষ, এমনকি প্রান্তিক এলজিবিটিকিউ, প্রতিবন্ধী এবং নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ একটি জীবন্ত প্রতিবাদ। প্রতিটি মানুষের বিপ্লবী হয়ে ওঠার এই তো সময়। নিরাপদ থাকুন, নীরব নয়।

ইতিহাসের কোন পাতায় আছেন আপনি?

(লেখক শিল্পী, ফোটোগ্রাফার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন