খোশমেজাজ: শিখ ছাত্রের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। বার্মিংহামের একটি স্কুলে। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স।
এক জন শেষ বেলায় কৌশল বদল করে তেড়েফুঁড়ে প্রচারে নেমে জনতার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন নিজেকে। আর সেটা করতে গিয়ে মানুষের ক্ষোভের মুখেও পড়ছেন। তিনি কনজারভেটিভ নেত্রী এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে।
আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন ভোটের আগে নিজেদের ইস্তাহার প্রকাশ করে শেষ লগ্নে জনপ্রিয়তা কুড়োনোর মতো বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ভোটের আগের ব্রিটেন এ ভাবেই জমজমাট।
‘দেশ কয়েক জনের নয়, সবার’— এই মন্ত্রেই এখন এগোচ্ছেন বিরোধী নেতা। টিউশন ফি মকুব, বিনামূল্যে শিশু-সেবা, জাতীয় স্বাস্থ্যে আরও বিনিয়োগ এবং রেল, জল ও ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবা রাষ্ট্রীয়করণ, এমন নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইস্তাহার প্রকাশ করেছে লেবার পার্টি। মঙ্গলবার সকালে ব্র্যাডফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে দলের নেতা করবিন তুমুল হাততালির মধ্যে জানান, ষাটের দশকে তৎকালীন লেবার প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসিন যে ভাবে পাল্টে দিয়েছিলেন ব্রিটেনকে, সে ভাবে তিনিও ২১ শতকে বদলে দেবেন দেশকে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, জনতার মন রাখতে যে সব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন করবিন, তার খরচ কী ভাবে সামলানো হবে? লেবার নেতার বক্তব্য, ‘‘বাড়ানো হবে পুর শুল্ক। আশি হাজার পাউন্ডের উপরে যাঁদের রোজগার, তাঁদের আয়করের পরিমাণও বাড়িয়ে দেওয়া হবে।’’ তা ছাড়া করবিনের সুপারিশ, তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার পাউন্ডের বেশি রোজগেরেদের বিশেষ কর দিতে হবে। কর ফাঁকির ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করা হবে।
করবিন সব চেয়ে হাততালি কুড়িয়েছেন টিউশন ফি মকুবের কথা বলার পরে। ফি মকুব আর বিনামূল্যে শিশু সেবা দিতে গেলে বছরে আড়াই হাজার কোটি পাউন্ড খরচ। লেবার নেতা বলছেন, ব্রিটেনের অর্থনীতির পুনর্ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। করবিনের মতে, এ দেশে যে পরিমাণ অসাম্য রয়েছে, তা দেখে অনেকেই বিস্মিত হন। তিনি সেটা দূর করার দিকে এগিয়ে যাবেন। যদিও অনেকেই করবিনের এই সব প্রস্তাবে ভরসা রাখতে পারছেন না। শুল্ক মন্ত্রী ডেভিড গক বলেছেন, ‘‘ওঁর অর্থনৈতিক ধারণা একেবারেই অবাস্তব।’’
ঘটনা হলো, ভোট-সমীক্ষায় এমনিতে কনজারভেটিভ পার্টির থেকে ২০ শতাংশ পিছিয়ে আছে লেবার পার্টি। কিন্তু ইস্তাহার প্রকাশের পরে লেবারদের জনপ্রিয়তার হার সামান্য হলেও বেড়ে গিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার ইস্তাহার প্রকাশ করবে কনজারভেটিভ পার্টি। তার আগে সোমবার অক্সফোর্ডশায়ারে অ্যাবিংডনে এক প্রতিবন্ধী ভোটারের রোষের মুখে পড়ে যান দলনেত্রী টেরেসা মে। কিছু দিন ধরে অভিযোগ উঠছিল, টেরেসা মানুষের সঙ্গে মেশেন না। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রচার-শিবির কৌশল পাল্টে তাঁকে বলেছে, জনতার সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন। সেই সূত্রেই অ্যাবিংডনে যান তিনি। ক্যাথি মোহান নামে এক মহিলা তাঁকে এক হাত নিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘‘আপনি জানেন আমি কী চাই? আমার প্রতিবন্ধকতার জন্য যে সুবিধা-ভাতা পেতাম, তা ফিরিয়ে আনুন।’’
টেরেসা কোনওমতে তাঁকে শান্ত করতে গিয়ে জানিয়েছেন, মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তাতেও দমানো যায়নি ক্যাথিকে। বিরোধী নেতা করবিনের কানেও পৌঁছেছে এই ঘটনার কথা। তিনি বলেছেন, ‘‘এখন বোঝা যাচ্ছে, টেরেসা মে এত দিন কেন সাধারণ মানুষের থেকে মুখ লুকিয়ে ছিলেন!’’