সৌদিতে ভোটযুদ্ধে জয়ী সতেরো মহিলা

পথটা একেবারেই মসৃণ ছিল না। পদে পদে ছিল বহু কাঁটা। তবু স্বপ্নটা দেখতে ভোলেননি সৌদি আরবের রাজা আবদুল্লা। মৃত্যুর আগেই দেশের মেয়েদের সামনে সেই পথটা খুলে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

রিয়াধ শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৪৫
Share:

পথটা একেবারেই মসৃণ ছিল না। পদে পদে ছিল বহু কাঁটা। তবু স্বপ্নটা দেখতে ভোলেননি সৌদি আরবের রাজা আবদুল্লা। মৃত্যুর আগেই দেশের মেয়েদের সামনে সেই পথটা খুলে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। গত কাল পুরভোটে কেবল নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ নয়, পুরুষের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইও করেছেন সৌদি মহিলারা। আর সেই ভোটে জয়ীদের তালিকায় রয়েছেন অন্তত ১৭ জন মহিলা। প্রথম বারেই যে মহিলারা এমন সাফল্য পাবেন, তা ভাবতে পারেননি কেউই।

Advertisement

আজ সৌদি সংবাদমাধ্যম প্রথমে জানায়, মক্কার প্রথম মহিলা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সালমা বিন্ত হিজাব আল-ওতেইবি নামে এক মহিলা প্রার্থী। এর পর সময় যত এগিয়েছে, জয়ী মহিলা প্রার্থীদের সংখ্যাটাও ক্রমশ বেড়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে ভোটের যে ফল প্রকাশ হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সালমা-সহ অন্তত ১৭ জন মহিলা প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। সালমা ছাড়া জয়ীদের মধ্যে রয়েছেন ইহসা, দু’জন জেড্ডা, দু’জন তোবুক এবং এক জন আল-জউফ এলাকার।

সৌদি নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, মক্কা প্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম মাদ্রাকা থেকে জয়ী হয়েছেন সালমা। ওই আসনে সাত জন পুরুষ এবং দু’জন মহিলা প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করেছেন তিনি। আবার, জয়ী প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন লামা আল-সুলেমানও। সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, জেড্ডায় আসন পেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, জেড্ডায় আসন পেয়েছেন রাশা হুফাইথি নামে আর এক মহিলা প্রার্থীও। আল-জউফে জয়ী হয়েছেন হানৌফ আল-হাজিমি। ওই আসনে তিনি ১৩ জন পুরুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তোবুকের কাউন্সিল আবার পেয়েছে দুই মহিলা কাউন্সিলরকে। সেখানে জয়ী হয়েছেন মোনা এল-এমারি এবং ফাধিলা আল-আত্তাওয়ি। আর ইহসায় জিতেছেন সানা আল-হাম্মাম এবং মাসুমা আবদেলরেদা।

Advertisement

সালমা বা লামা— এঁদের লড়াইটা সহজ ছিল না। এর জন্য পেরোতে হয়েছে বাধা বিপত্তি। কারণ সৌদি আরবের মতো দেশে যে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অধিকারটুকুও নেই। এমনকী কোথাও যেতে গেলেও পুরুষ অভিভাবকদের অনুমতি নিতে হয়। চাকরি করলেও মেলে না স্বাধীনতা। পুরুষদের মতো সহজেই বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন না মহিলারা। অথচ তেল সমৃদ্ধ এই দেশ অন্যান্য বিষয়ে বেশ এগিয়ে। ঝাঁ চকচকে সড়ক থেকে শুরু করে আকাশছোঁয়া বহুতল— সর্বত্র উন্নত পরিকাঠামোর ছাপ। তবু এমন দেশে মহিলাদের প্রতি সমাজ অতিরক্ষণশীল।

এর পরেও কী ভাবে এল এই সাফল্য? জানুয়ারি মাসে মারা গিয়েছিলেন রাজা আবদুল্লা। রাজা থাকাকালীনই তিনি মেয়েদের ভোট দেওয়ার অধিকার দিয়েছিলেন। ক্যাবিনেটের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে ‘শুরা কাউন্সিল’। সেই সংগঠনে আবদুল্লাই প্রথম ৩০ জন মহিলাকে নিয়োগ করেন।

তার পরেও কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। দেশে এই নিয়ে তৃতীয় বার ভোট হল। আর সেই ভোটে প্রথমবার ভোট দিলেন মহিলারা। সঙ্গে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ীও হলেন। তবে এই ভোটের প্রচারে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে মহিলা প্রার্থীদের। পুরুষ ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে কথা বলতে পারেননি মহিলা প্রার্থীরা। আর মহিলা ভোটারদের ক্ষেত্রেও ছিল প্রায় একই রকম নিষেধাজ্ঞা। কারণ একা নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দানের অনুমতিও ছিল না। ভোট দিতে যাওয়ার জন্য নির্ভর করতে হয়েছে সেই পুরুষ অভিভাবকদের উপর।

প্রথম ভোট নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপও সহ্য করতে হয়েছে মহিলাদের। বহু জায়গায় ভোট নিয়ে অভিযোগও এসেছে। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, প্রথম বার স্বাধীন মতপ্রকাশ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত মহিলারাও। আর মহিলাদের জন্যই মহিলা প্রার্থীদের প্রথম প্রতিশ্রুতি, দেশে আরও নার্সারি বানানো হবে। কর্মরতা মহিলারা যেখানে নিশ্চিন্তে রেখে যেতে পারবেন সন্তানদের। দেশের যুবসমাজের জন্যও প্রতিশ্রুতি দিতে ভোলেননি মহিলারা। জানান, দেশে ক্রীড়া এবং সংস্কৃতির পরিবেশ তৈরি করতে তৈরি হবে আরও যুবকেন্দ্র। এ ছাড়া রয়েছে দেশটাকে সুন্দর ভাবে সাজানোর প্রতিশ্রুতিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন