শাস্তির ভয়ে আত্মঘাতী ফুটবলপ্রেমী তরুণী

স্থানীয় এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েছেন নারী ও পরিবার বিষয়ক দফতরের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাসাওমেহ এবতেকার। 

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

তেহরান শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:০৩
Share:

শাহর খোদায়ারি। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

ছোটবেলা থেকেই ফুটবল-পাগল ছিলেন। সেই ভালবাসার টানে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। ধরা পড়ে কারাদণ্ডের ভয়ে সম্প্রতি গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ইরানের সেই মহিলা ফুটবলপ্রেমী শাহর খোদায়ারি (৩০)।

Advertisement

এই ঘটনায় ইরানের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নিন্দা, প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। চাপের মুখে মঙ্গলবার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে ইরান সরকার। স্থানীয় এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েছেন নারী ও পরিবার বিষয়ক দফতরের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাসাওমেহ এবতেকার।

১৯৮১ সাল থেকে ইরানে আইন করে খেলার মাঠে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ‘পুরুষালী পরিবেশ’ থেকে মহিলাদের দূরে রাখতে তাঁদের উপরে এই ফতোয়া চাপানো হয়েছে। গত বছরও পুরুষ সেজে স্টেডিয়ামে ঢোকার অপরাধে শাহর গ্রেফতার হন। এ বছর ফের একই ভাবে ধরা পড়ে তিনি হাজতবাসের ভয়ে ভুগছিলেন। পরিবারের দাবি, মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে গত সপ্তাহে আদালত চত্বরেই গায়ে আগুন দেন মেয়ে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ইরানের বিচারবিভাগীয় ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, শাহরকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু বিচারক ছুটিতে থাকায় কোনও সাজা ঘোষণা হয়নি। তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সারা শরীরে ব্যান্ডেজ। মৃত্যুর আগে অগ্নিদগ্ধ শাহরের সেই ছবি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। শাহরের প্রিয় ফুটবল দল এস্তেঘলালের নীলরঙা জার্সির সঙ্গে মিলিয়ে তাঁকে ব্লু-গার্ল নামে ডাকছেন নেটিজ়েনরা। আদরের ব্লু-গার্লের মৃত্যুতে ইরানের নারীবিদ্বেষী আইনকে দায়ী করে আর্ন্তজাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে ইরানকে বাদ রাখতে ফিফার কাছে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। ক্ষোভ জমেছে ইরানের অন্দরেও। দেশের খ্যাতনামা ফুটবলার আলি কারিমি তাঁর ৪.৫ লক্ষ ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ারকে দেশের সমস্ত স্টেডিয়াম বর্জনের আর্জি জানিয়েছেন। ফুটবলপ্রেমী এক মহিলার ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘‘আমাদের দেশের মেয়েরা পুরুষের থেকে অনেক ভাল।’’

এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংগঠন ফিফা। স্টেডিয়ামে মহিলাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইরান সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। আর শাহরের প্রিয় দল এস্তেঘলাল জানিয়েছে, ‘‘এই মৃত্যু বিফলে যাবে না। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য ইরানে পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন