ধোঁয়ায় ভরেছে আকাশ। অ্যালবার্টার ফোর্ট ম্যাকমুর শহরের কাছে। ছবি: এএফপি।
উত্তরপূর্ব কানাডার অ্যালবার্টার জঙ্গলে আগুন জ্বলছিল রবিবার থেকেই। মঙ্গলবার সেই আগুন জঙ্গল লাগোয়া ফোর্ট ম্যাকমুরে শহরে ঢুকে পড়ায় অন্তত ৮০ হাজার মানুষকে দক্ষিণের শহরগুলিতে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দ্রুত আগুন ছড়ানোয় আশ্রয়ের খোঁজে কিছু মানুষ উত্তরের দিকে পালিয়ে যান। শহরের প্রত্যন্ত কিছু এলাকাতেও আটকে পড়েন বেশ কয়েক হাজার মানুষ। শুক্রবার আকাশপথে আটকে পড়া এমন ৮ হাজার জনকে উদ্ধার করল প্রশাসন। দমকল কর্মীদের এক নাগাড়ে চেষ্টা সত্ত্বেও আগুন এখনও আয়ত্তে আনা যায়নি।
ফোর্ট ম্যাকমুরে এখন অভিশপ্ত নগরী। প্রায় ৮৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে জ্বলছে আগুন। পুড়ে ছাই ১৬০০ ঘরবাড়ি। পুড়ে গিয়েছে স্কুল, হাসপাতাল এমনকী রাস্তাও। শহর সংলগ্ন হাইওয়েতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী-স্বরূপ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে শুধু কিছু পোড়া ল্যাম্পপোস্ট। শহরের বাসিন্দা বছর সাতাশের তরুণ ক্যামেরন স্প্রিং বলছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। জানালেন, হাতে ছিল মাত্র আধ ঘণ্টা! তার মধ্যেই কয়েকটা জামাকাপড়, দৈনন্দিন টুকিটাকি, ফোন-ল্যাপটপ, পাসপোর্ট আর ব্রাজিলিয়ান যুযুৎসু বেল্টটা নিয়ে গাড়ির দিকে দৌড়লাম। এক নাগাড়ে কয়েকশো কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে পৌঁছলাম এডমন্টনে। শেষ বারের মতো নিজের শহরটাকে দেখতে গিয়ে চোখ পড়ল গাড়ির রেয়ার-ভিউ কাচে। দেখলাম শহরটা জ্বলছে। হয়তো আমার বাড়িটাও...। আর পিছন ফিরে তাকাইনি।
রবিবার প্রথম অ্যালবার্টার জঙ্গলে আগুন লাগার খবর আসে। এই জঙ্গলের কাছেই রয়েছে বেশ কিছু তেলের খনি। ঝোড়ো হাওয়ায় দাপটে মঙ্গলবারের মধ্যেই খনি এলাকা ও নিকটবর্তী ফোর্ট ম্যাকমুরে শহরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শহরবাসীদের সঙ্গে খনি কর্মীদেরও নিরাপদ দূরত্বে সরানো হয়। খনি থেকে তেল তোলার কাজও তাই আপাতত বন্ধ। দেশের মোট খনিজ তেলের তিন ভাগের দুই ভাগের জোগান আসে এই এলাকা থেকে। যার প্রায় পুরোটাই আমেরিকায় রফতানি করে কানাডা। কিন্তু বেশি দিন খনির কাজ বন্ধ থাকলে দেশের অর্থনীতির উপরেও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন আধিকারিকরা। পরিবেশবিদদের মতে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম থাকায় আকাশপথে জল ছড়িয়েও আগুন আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না। বৃষ্টি নামলেই নিভবে আগুন। দক্ষিণের ক্যালগেরি, এডমন্টনের মতো শহরে তাই রাতারাতি আশ্রয় নেওয়া ঘরছাড়া হাজার হাজার মানুষ এখন বৃষ্টির অপেক্ষায়।