প্রয়াত প্রাক্তন মহাসচিব, নোবেল শান্তিজয়ী কোফি আন্নান

১৯৩৮ সালের এপ্রিলে ঘানার কুমাসির এক অভিজাত পরিবারে জন্ম কোফি আট্টা আন্নানের। বাবা ছিলেন প্রাদেশিক গভর্নর। এক যমজ বোনও ছিল তাঁর। আকান ভাষায় মধ্যনাম আট্টার অর্থও তা-ই, যমজ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

জেনিভা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০২:২৯
Share:

কোফি আন্নান

টানা দু’বার বিশ্বের সর্বোচ্চ কূটনৈতিক পদের ভার সামলেছেন তিনি। তাঁর আগে কোনও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এই দায়িত্ব সামলানোর কৃতিত্ব অর্জন করেননি। রাষ্ট্রপুঞ্জের সেই প্রাক্তন মহাসচিব, নোবেল শান্তিজয়ী কোফি আন্নান আজ মারা গেলেন। বয়স হয়েছিল ৮০। তাঁর সংগঠন, কোফি আন্নান ফাউন্ডেশন এবং পরিবারের তরফে এ খবর জানানো হয়েছে।

Advertisement

সুইৎজ়ারল্যান্ডের বার্নের একটি হাসপাতালে গত কয়েক দিন ভর্তি ছিলেন আন্নান। সেখানেই আজ ভোরে মারা যান তিনি।

১৯৩৮ সালের এপ্রিলে ঘানার কুমাসির এক অভিজাত পরিবারে জন্ম কোফি আট্টা আন্নানের। বাবা ছিলেন প্রাদেশিক গভর্নর। এক যমজ বোনও ছিল তাঁর। আকান ভাষায় মধ্যনাম আট্টার অর্থও তা-ই, যমজ। প্রথমে মিনেসোটার কলেজে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা। পরে জেনিভায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়েন। তারও পরে ম্যাসাচুসেটসের ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা। ফরাসি, ইংরেজি-সহ অনেকগুলি ভাষায় দক্ষ ছিলেন আন্নান। ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জে যোগ দেন তিনি, ওয়ার্ল্ড হেল্‌থ অর্গানাইজ়েশনে। ১৯৬৫ সালে প্রথম বিয়ে। নাইজিরিয়ার টিটি আলাকিজার সঙ্গে সম্পর্ক টিঁকেছিল ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। বিচ্ছেদের পরে ১৯৮৪ সালে সুইডিশ আইনজীবী নেন ল্যাগেরগ্রেনকে বিয়ে করেন। দুই পক্ষের তিন সন্তান রয়েছে আন্নানের।

Advertisement

১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৬, একটানা রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের পদে ছিলেন আন্নান। অংশ নিয়েছেন অজস্র শান্তিরক্ষা অভিযানে। এক দিকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেন বা ইরাকে শান্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। অন্য দিকে, আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশগুলির খিদে মেটানোর দায়িত্বও নিজে হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ২০০১ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গেই যৌথ ভাবে নোবেল শান্তির পুরস্কার পান। তবে বিশ্ব রাজনীতি তোলপাড় করা বহু অস্থির সময় দেখেছেন তিনি। আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে লড়াই চালানোটা ছিল তাঁর অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে নিজের মুখেই স্বীকার করে গিয়েছেন, ইরাক যুদ্ধ ছিল তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। বছর পাঁচেক আগে এক আন্তর্জাতিক পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে আন্নান বলেছিলেন, ‘‘আমার জীবনের অন্ধকারতম মুহূর্ত হল ইরাক যুদ্ধ। অনেক চেষ্টা করেছিলাম ওটা আটকানোর। নিরাপত্তা পরিষদ চায়নি আমেরিকা ওই যুদ্ধে যাক। তবে প্রেসিডেন্ট বুশ সে কথা শোনেননি।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে অবসরের পরেও বিশ্বশান্তি রক্ষায় নানা কাজ করে গিয়েছেন আন্নান। তাঁর কূটনৈতিক ক্যারিশ্মার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকার প্রাক্তন দূত রিচার্ড হলব্রুক তাঁকে ‘ইন্টারন্যাশনাল রকস্টার অব ডিপ্লোমেসি’ বলে ডাকতেন। অথচ নিজের স্মৃতিচারণায় নিজেরই পদকে মজা করে রাষ্ট্রপুঞ্জের সেক্রেটারি জেনারেল (এসজি) অর্থে স্কেপগোট বলতেও দ্বিধা করেননি কোফি।

বিশ্বশান্তিতে তাঁর ভূমিকা স্মরণ করে শোকবার্তা জানিয়েছেন আন্নানের উত্তরসূরি, রাষ্ট্রপুঞ্জের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জ।’’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আজ টুইটারে স্মরণ করেছেন প্রয়াত নোবেলজয়ীকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন