ঈশ্বর কাঁদে, সেই সব ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য, যারা যৌন হেনস্থার শিকার... —মার্কিন সফরের শেষ দিন আমেরিকাকে বিদায় জানানোর আগে পেনসিলভেনিয়ার উইনিউডে সেন্ট মার্টিন চ্যাপেলে দাঁড়িয়ে এ কথাই বললেন পোপ ফ্রান্সিস।
আগে থেকেই ঠিক ছিল, আমেরিকা সফরে এসে ‘ফিলাডেলফিয়া যৌন কেলেঙ্কারি’ (১৬৯ বিশপের হাতে অসংখ্য শিশুর নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা ২০০৫ সালে প্রকাশ্যে আসে)-র ঘটনায় নির্যাতিতদের সঙ্গে দেখা করবেন পোপ। কিন্তু তখনই ভ্যাটিকানের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সাক্ষাৎটি গোপন রাখা হবে। সংবাদমাধ্যমের সামনে আনা হবে না।
আজ ভ্যাটিকানের তরফে মুখপাত্র ফেডেরিকো লোমবার্ডি জানান, ছোটবেলায় যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে, এমন পাঁচ জনের সঙ্গে দেখা করেছেন পোপ। প্রায় আধ ঘণ্টা আলাপ-পরিচয় করেছেন তাদের সঙ্গে। তারা অবশ্য সকলেই বিশপদের হাতে অত্যাচারিত হয়েছে, এমন নয়। কেউ শিক্ষকের হাতে, কেউ বা পরিবারেরই কারও হাতে নির্যাতিত হয়েছিল।
সে প্রসঙ্গে পোপ আজ বলেন, ‘‘আমার শুধুই মনে হচ্ছে, আদর-যত্ন-ভালবাসা দিয়ে বড় করার দায়িত্ব ছিল যে মানুষগুলোর উপর ছিল, সেই লোকগুলোই কি না ওদের কষ্ট দিল। বিশ্বাস ভঙ্গ করল...!’’ বলতে থাকেন তিনি। ‘‘এই সব ঘটনা দেখে ঈশ্বর কাঁদে। অপরাধ কখনও চাপা থাকে না। মনপ্রাণ দিয়ে প্রার্থনা করছি, ছোটরা নিরাপদে বাঁচুক। আর দোষীরা যেন কঠিন শাস্তি পায়।’’
বরাবরই ভ্যাটিকানের চিরাচরিত নিয়ম ভেঙে খবরে এসেছেন পোপ। কখনও মহিলাবন্দির পা ধুয়ে দিয়েছেন, তো কখনও জড়িয়ে ধরেছেন ‘কদাকার-দর্শন’ রোগীকে। আবার সরব হয়েছেন সমকামীদের অধিকার নিয়েও। এ বারও তেমনই ব্যতিক্রমী নজির রাখলেন তিনি। এই প্রথম কোনও পোপ রোমের বাইরে এসে আক্রান্তদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।
যদিও এ বারই প্রথম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। এ সপ্তাহের গোড়ায়, মার্কিন বিশপদের একটি সভায় তিনি বলে বসেন, যৌন কেলেঙ্কারি সামলাতে যে সাহসিকতা দেখিয়েছে গির্জা, তা প্রশংসনীয়। আরও জানান, গির্জার সম্পত্তি বিক্রি করে নির্যাতিতদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে খুব একটা ভাল কাজ করা হয়নি। এতে নিশ্চুপেই বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছে মার্কিন মুলুকে। ‘এ সব বলে নির্যাতিতদের গালে চড় মারা হয়েছে’, অভিযোগ তোলেন বারবারা ব্লেন। এক সময় তিনিও যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন। পোপ অবশ্য তড়িঘড়ি ক্ষমা চেয়ে নেন।