ভারতের বাজারে আরও সস্তার অ্যান্ড্রয়েড ফোন আনতে উৎসাহী গুগ্ল। সংস্থা সূত্রে খবর, নতুন ফোন আনতে বেশ কয়েকটি ফোন নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে কথা বলছে তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই সস্তা ফোনগুলির দাম সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কিন্তু, গুগ্ল-এর এই উৎসাহের কারণ কী? তা জানতে হলে একটু পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিতে হয়। ভারতে প্রায় ১১ কোটি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। সংখ্যার নিরিখে যা চিন আর আমেরিকার পরেই। কিন্তু, এই তথ্যটিকে একটু উল্টো করে দেখলে অন্য একটি চমকপ্রদ দিক উঠে আসে। ভারতে মোবাইল ব্যবহারকারীর মাত্র দশ শতাংশের হাতেই আপাতত স্মার্টফোন আছে। স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাগুলির কাছে এ যেন চাঁদ হাতে পাওয়া। কারণ, এই সংখ্যাটি জানায়, ভারতের বাজারে এখনও বিপুল সংখ্যায় স্মার্টফোন বিক্রির সুযোগ রয়েছে। ২০১৪-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের স্মার্টফোন বিক্রির বৃদ্ধির হার প্রায় ৪৫ শতাংশ ছুঁয়েছে। এই বাজারকে ধরার জন্য নিত্য-নতুন কৌশল তৈরি করছে স্মার্টফোনের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলি। যার মধ্যে রয়েছে গুগ্লও।
পৃথিবীর অধিকাংশ স্মার্টফোন গুগ্ল-এর তৈরি অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম-এর উপর নির্ভরশীল। ভারতের এই দ্রুত বেড়ে ওঠা বাজারে আরও প্রভাব বিস্তার করতে আগ্রহী গুগ্ল। তাই বেশ কয়েক দিন আগেই ‘অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান’ নামে ব্যবস্থা চালু করেছে গুগ্ল। ‘মাইক্রোম্যাক্স’, ‘কার্বন’ আর ‘স্পাইস’— এই তিনটি মোবাইল নির্মাতা সংস্থা ‘অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান’-এর মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি ‘লাভা’ও এতে যোগ দিয়েছে। এই চারটি ফোন নির্মাতা সংস্থার বেশ কয়েকটি ফোনে কী কী হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার থাকবে, তা স্থির করে দিচ্ছে গুগ্ল। এর সঙ্গেই এই ফোনগুলিতে খাঁটি অ্যান্ড্রয়েড (স্টক অ্যান্ড্রয়েড) দিচ্ছে গুগ্ল। বেশির ভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আসলে মিশ্র অ্যানড্রয়েড। মূল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম-এর সঙ্গে নিজেদের কিছু সফ্টওয়্যার মিশিয়ে দেওয়া হয়। এতে অসুবিধা হল, অনেক সময়ে অ্যান্ড্রয়েড -এর প্রয়োজনীয় আপডেট পাওয়া যায় না।
কিছু দিন আগেই অ্যান্ড্রয়েড-এর ভিতরে এক মারাত্মক ত্রুটি ধরা পড়েছিল। যার সুযোগ নিয়ে কোনও হ্যাকার ছোট্ট একটি এসএমএস পাঠিয়েই যে কোনও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। ত্রুটিটি সামনে আসার আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই প্রয়োজনীয় ‘প্যাচ’ তৈরি করে ফেলে গুগ্ল। কিন্তু, এখন সেই ‘প্যাচ’ অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড ফোনে পৌঁছয়নি। কারণ, ফোন র্নিমাতা সংস্থাগুলির মর্জির উপরেই নির্ভর করে, এই ‘প্যাচ’ ফোনে আসবে কি না। এমনকী, নতুন কোনও সংস্করণের অ্যান্ড্রয়েড এলেও তা ফোনে আসবে কি না, তা নির্মাতা সংস্থার মর্জির উপরে নির্ভর করে। ‘অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান’ সিস্টেমে ফোন নির্মাতা নয়, ফোনের অপারেটিং সিস্টেম-এর নিয়ন্ত্রণ চলে আসে গুগ্ল-এর হাতে। ফলে চট করে প্রয়োজনীয় আপডেট বা হাতে গরম নতুন সংস্করণ মিলে যায়।
এই ‘অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান’ ব্যবস্থা বেশি করে ছড়িয়ে দিতেই আরও কম দামে ‘অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান’ ফোন আনার পরিকল্পনা করছে গুগ্ল। ২০১৯-এর মধ্যে ভারতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা পৌঁছবে প্রায় ৬৫ কোটিতে। ভারতের মতো আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে এটা বোঝা সহজ যে এই বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীর একটি বড় অংশই সস্তার স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন। ফলে গুগ্ল-এর এই সিদ্ধান্তে ফোন নির্মাতা সংস্থাগুলির ব্যবসা আরও বাড়বে। ব্যবসা বাড়বে গুগ্ল-এরও। তবে সংস্থা সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।