রবিবাসরীয় গণভোটের ফল নিয়ে তীব্র সংশয়ে গ্রিস

বাইকবাহিনীর ঘোরাঘুরি নেই। সশস্ত্র রক্ষী নেই। দলীয় কোন্দল নেই। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, প্রার্থীর দেখা নেই। কারচুপির অভিযোগও নেই। তবে ভোট আছে। ভোটকেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন আছে। আর গ্রিসের সেই গণভোট নিয়ে টানটান উত্তেজনাও আছে। ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’-এর ভোট-লড়াই। এই লড়াইয়ের ফলের দিকে শুধু গ্রিস বা ইউরোপ-ই নয়, তাকিয়ে আছে গোটা দুনিয়া। ইউরো-র মতো একমুদ্রা ব্যবস্থা আদৌ যৌক্তিক কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে এই ভোটের পরে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ১৪:০৫
Share:

গণভোটে সামিল গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস। ছবি: রয়টার্স।

বাইকবাহিনীর ঘোরাঘুরি নেই। সশস্ত্র রক্ষী নেই। দলীয় কোন্দল নেই। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, প্রার্থীর দেখা নেই। কারচুপির অভিযোগও নেই। তবে ভোট আছে। ভোটকেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন আছে। আর গ্রিসের সেই গণভোট নিয়ে টানটান উত্তেজনাও আছে। ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’-এর ভোট-লড়াই। এই লড়াইয়ের ফলের দিকে শুধু গ্রিস বা ইউরোপ-ই নয়, তাকিয়ে আছে গোটা দুনিয়া। ইউরো-র মতো একমুদ্রা ব্যবস্থা আদৌ যৌক্তিক কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে এই ভোটের পরে।

Advertisement

রবিবার গ্রিসের আমজনতাকে প্রধানত একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তাঁরা কি আরও কৃচ্ছ্রসাধন মেনে ইউরোতেই থেকে যেতে চান। না কি নিজেদের মুদ্রা ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চান। এ উত্তর দেওয়া বড় কঠিন কাজ। কারণ, দু’দিকেই আশা আর অনিশ্চয়তার সমারোহ। গত পাঁচ বছর ধরে কৃচ্ছ্রসাধন করে গ্রিসের কপালে খুব বেশি সৌভাগ্য জোটেনি। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উত্পাদন ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সঙ্গে তীব্র হয়েছে বেকারত্ব। একের পর এক ব্যবসা লাটে উঠেছে। সব মিলিয়ে চরম কষ্টদায়ক অবস্থা। অন্য দিকে, আবার মুদ্রার অবমূল্যায়ণ, তীব্র মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা উথাল-পাথাল হওয়ার মতো বেশ কিছু আশঙ্কা রয়েছে। আর তাই জনমত সমীক্ষায় মিশ্র ফল পাওয়া গিয়েছে। কোনওটায় এগিয়ে ‘না’। কোনওটায় ‘হ্যাঁ’। তবে দু’পক্ষের ব্যবধান সব সমীক্ষাতেই খুব কম।

এই গণভোটকে ভাল চোখে নিচ্ছেনে ইউরোপের বাকি অংশ। অনেকেই একে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওযার সুচতুর কৌশল বলে মনে করেছেন। সিপ্রাসকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়েছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের চেয়ারম্যান জাঁ ক্লদ ইয়ুঙ্কা। কিন্তু ক্রমাগত কৃচ্ছ্রসাধনের বিরোধিতা করে ক্ষমতায় আসা সরিজা দলের নেতা সিপ্রাসের পক্ষে এ ছাড়া কী-ই বা করার ছিল! ভোট নিয়ে বিরোধিতা হয়েছে গ্রিসের ভিতর থেকেও। মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। গত শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট ভোটের পথ পরিষ্কার করে দিয়েছে। বিরোধিতা করলেও বাকি ইউরোপও কিন্তু ভোটের ফল জানতে উত্সুক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলে যে গ্রিসের আমজনতা নানা সমস্যায় পড়বেন তা ইউরোপের নানা নেতা জানিয়েছেন। এর জন্য শনিবারই গ্রিসের অর্থমন্ত্রী ঋণদাতাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে হুমকি ও ভয় দেখানোর অভিযোগ এনেছেন।

Advertisement

গণভোটের ফল নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে সরিজা দলের ভিতরেও। ‘না’ ভোটের পক্ষে জোরদার প্রচার চালিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস। এমনকী ‘হ্যাঁ’ ভোট জিতলে তিনি সরে যাবেন বলে দাবি করেছেন। কিন্তু, তার পরে কী হবে তা নিয়ে কেউ পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেননি। অন্য দিকে, ভোটের রায়ে না জিতলে কী হবে তা নিয়েও পরিষ্কার ধারণা নেই। কারণ, সিপ্রাস তার পরে আবার নতুন করে ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার পক্ষে। কিন্তু, ঋণদাতারা কি ফের আলোচনায় বসতে আগ্রহী হবেন?

ভোট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই মূলধনের উপরে নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করে সিপ্রাস সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্যাঙ্ক, শেয়ার বাজার-সহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তিপিছু এটিএম থেকে দিনে ৬০ ইউরো তোলার নির্দেশ জারি হয়। সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েন দেশের বয়স্ক নাগরিকেরা। কারণ, বয়স্কদের অনেকেরই ডেবিট কার্ড নেই। ফলে ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন পড়ে যায়। যদিও তাতেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে ওষুধ সংগ্রহ করতে গিয়ে নাকাল হন অনেকেই। গ্রিসের ব্যাঙ্কগুলি জানিয়েছিল তাদের হাতে ১০০ কোটি ইউরো মজুত আছে। তাতে মাথাপিছু দিনে ৬০ ইউরো করে রবিবার পর্যন্ত চালিয়ে দেওযা সম্ভব। কিন্তু সোমবার থেকে ব্যাঙ্ক খুললে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক (ইসিবি) সাহায্য না করলে সাধারণের পক্ষে দিন চালানো কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু, ভোটের ফল ‘না’-এর দিকে গেলে কি ইসিবি সেই সাহায্য করবে। এ রকম নানা দোলাচলে গ্রিসের আমজনতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন