প্রায় এক বছর ধরে ছক কষে ইজ়রায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। — ফাইল চিত্র।
ইজ়রায়েলে হামলা করলে, তারা যে ছেড়ে দেবে না, সে কথা জানত হামাস। এর ফল যে ভয়ঙ্কর হতে পারে, যে কোনও সময় গাজ়ায় পাল্টা হামলা চালাতে পারে ইজ়রায়েলি সেনা, তা-ও বুঝতে পেরেছিল। সব জেনেবুঝেই ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে হামলা করেছিল হামাস। এমনটা বলছে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন।
পশ্চিম এশিয়া এবং পশ্চিমি দেশগুলির নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে লেখা হয়েছে প্রতিবেদনটি। তাঁরা মনে করছেন, হামাস চেয়েছিল ইজ়রায়েলের উপর ব্যাপক ‘অনুপাতে’ হামলা করতে। আশা করেছিল, পাল্টা ততোধিক ভয়ঙ্কর হামলা চালাবে ইজ়রায়েল। যার ফলে ওই অঞ্চলে সংঘাত আরও বৃদ্ধি পাবে।
ওয়াশিংটন পোস্ট আরও দাবি করেছে, ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েল লক্ষ্য করে প্রথম ধাপের হামলা সফল হলে, আরও হামলার জন্য তৈরি ছিল হামাস। তাদের সঙ্গে ছিল যথেষ্ট খাবার, অস্ত্র। ইজ়রায়েলের ওফাকিম শহরে ঢুকে পড়েছিল তারা। পণবন্দি করে ২২০ জনকে। হামাস ইজ়রায়েলের আরও ভিতরে ঢুকে পড়ে হামলা চালাতে চেয়েছিল।
৭ অক্টোবর হামাসের ওই হামলায় ইজ়রায়েলে মারা গিয়েছিলেন প্রায় ১,২০০ জন। আহত হন বহু। পাল্টা গাজ়ায় হামলা চালায় ইজ়রায়েল। তাতে এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১০ হাজার জন। এই প্রসঙ্গে ইজ়রায়েল আগে জানিয়েছিল, হামলার জেরে সাধারণ মানুষের মৃত্যু ‘গ্রহণযোগ্য’। হামাসও প্রায় একই কথা বলেছে। হামাস পলিটব্যুরোর সদস্য গাজি হামাদ বেইরুটের একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমাদের কি মূল্য চোকাতে হবে? হ্যাঁ এবং আমরা সে জন্য তৈরি। আমাদের বলা হয় শহিদের দেশ। আমরা শহিদদের বলি দিয়ে গর্বিত।’’
বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এই ‘শহিদ’ হতেই হামাস নিজেদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ইজ়রায়েলে হামলা চালিয়েছে। এক বিশেষজ্ঞ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘‘হামাস আসলে ইতিহাসে নিজেদের স্থান কিনতে চাইছে। জিহাদের ইতিহাসে। আর গাজ়ার মানুষের জীবনের মূল্যে সেটা করছে।’’
সূত্রের খবর, প্রায় এক বছর ধরে ইজ়রায়েলে হামলার পরিকল্পনা করেছে হামাস। সেই পরিকল্পনা যাতে কোনও মতে ফাঁস না হয়, সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করেছে। নিজেদের সদস্যদের একে-৪৭, গ্রেনেড, ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ায় পারদর্শী করেছে। গাজ়া সংলগ্ন ইজ়রায়েলে কোথায় কোথায় ভিড় বেশি হয়, সেগুলিও খতিয়ে দেখেছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, সস্তার ড্রোন উড়িয়ে, রিয়েল এস্টেট সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে ইজ়রায়েলের তথ্য হাতিয়েছে। সেখানে কোথায় জনঘনত্ব বেশি, কোথায় পর পর বাড়ি রয়েছে, সব খবর পেয়েছে। ইজ়রায়েলে দিনের বেলা কাজ করতে ঢোকার অনুমতি পান গাজ়ার কিছু বাসিন্দা। সেই শ্রমিকদের থেকেও তথ্য জোগাড় করেছে।