দুঃখ, হতাশা গোপন রাখলেন না হিলারি

হাততালির কানফাটা শব্দে প্রথম কয়েক মিনিট কথাই বলতে পারলেন না তিনি। বুধবার সকাল সাড়ে দশটা। নিউ ইয়র্কের হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে উপচে পড়া ভিড়। আসনে যাঁরা বসে, বেশির ভাগই কেঁদে ভাসাচ্ছেন। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছছেন অথবা একে অপরকে জড়িয়ে রয়েছেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

নিউ ইয়র্কের হোটেলে। ছবি: রয়টার্স।

হাততালির কানফাটা শব্দে প্রথম কয়েক মিনিট কথাই বলতে পারলেন না তিনি। বুধবার সকাল সাড়ে দশটা। নিউ ইয়র্কের হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে উপচে পড়া ভিড়। আসনে যাঁরা বসে, বেশির ভাগই কেঁদে ভাসাচ্ছেন। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছছেন অথবা একে অপরকে জড়িয়ে রয়েছেন।

Advertisement

কালো কোট পরে হাত নাড়তে নাড়তে মঞ্চে উঠলেন তিনি। পরাজিত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন।

গ্র্যান্ড বলরুমের এত শোরগোল কাল রাতে কিন্তু উধাও হয়ে গিয়েছিল। রাত আড়াইটে থেকেই ছবিটা পরিষ্কার হতে শুরু করে। ম্যানহাটানের ‘জেকব জাভিটস কনভেনশন সেন্টার’-এর বিশাল টিভিটায় তখন একের পর এক আসনের ফল ঘোষণা করে চলেছেন চ্যানেলের উপস্থাপক। জাভিটস সেন্টার তত ক্ষণে বুঝে গিয়েছে, আর কিচ্ছু করার নেই। শুধু অপেক্ষা, যাঁর জয় উদ্‌যাপন করতে আসা, তিনি যদি নিজে হাজির হন, কিছু বলেন। কিন্তু সেই আশাতেও জল ঢাললেন জন পোডেস্টা। ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর প্রচার ম্যানেজার বললেন, ‘‘সবার এখন বাড়ি যাওয়া উচিত। একটু ঘুমোন। কাল অনেক কিছু বলার থাকবে।’’

Advertisement

ক্লিন্টন যে পারছেন না, সেই ইঙ্গিতটা অবশ্য তারও খানিক আগে থেকে ঘোরাফেরা করছিল। বিয়ারের মগ আর কেটি পেরির গান দিয়ে ‘বিজয় উৎসব’ শুরু হয়েছিল। ব্রুকলিনে হিলারি শিবিরের সদর দফতরেও শুরু থেকে সেই উৎসবের মেজাজটাই ছিল। ম্যানহাটনেরই পেনিনসুলা হোটেলে মঙ্গলবার রাতে সপরিবার হাজির ছিলেন হিলারি। কিন্তু ট্রাম্প যখন নর্থ ক্যারোলাইনা জিতে যান, সুরটা কাটতে শুরু করেছিল তখনই। ওহায়ো, ফ্লোরিডাও একে একে গেল। হিলারির প্রচার টিমের কর্মীরা তখনও একে অপরকে জড়িয়ে। এই পরাজয়কে যেন বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।

ওঁরা খুশি নন

নতুন আগুন জ্বলবে।
আমরা হাল ছাড়ব না। মাথা নোয়াব না।

ম্যাডোনা

ট্রাম্পকে যাঁরা ভোট দেবেন, সবাই জাতিবিদ্বেষী নন।
তবে জাতিবিদ্বেষী সকলেই ওঁকে ভোট দেবেন।


হুপি গোল্ডবার্গ

বসে থেকে, কেঁদে লাভ নেই।
দেশের ভাগ্যকে ঘৃণার হাতে ছেড়ে দিও না।


কেটি পেরি

আমাদের গলা শোনা যাবেই।
কেউ থামাতে পারবে না। লভ ট্রাম্পস হেট।

লেডি গাগা

আমেরিকা,
মনে রেখো এর চেয়েও
খারাপ তোমার দেখা আছে।

মার্গারেট অ্যাটউড

ভাল কথা একটাই। জাতিবিদ্বেষ,
লিঙ্গবিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকার
ভানটা আর চলবে না।

জেসিকা চ্যাস্টেন

আমাদের একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে।
দুর্বলদের জন্য একজোট হতে হবে।

জে কে রোলিং

আট বছরের খুদে কন্যাকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নিউ ইয়র্ক এসেছিলেন সুসি শ্যানন। বললেন, ‘‘এই রাতটার সাক্ষী থাকতে চেয়েছিলাম। এটা কী করে হলো? উনি যদি নিজে এসে কিছু বলতেন, খুব ভাল লাগত।’’ মেয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে কেঁদেই ফেললেন সুসি।

সকাল হতেই অপেক্ষা, কখন আসেন হিলারি! এই এলেন, এই এলেন— ছটফটানি যেন শেষ হতে চায় না। শেষ পর্যন্ত এলেন বটে। হাততালি থামতে চাইছিল না। মুখে হাসি ধরে রেখে হিলারি ধন্যবাদ জানালেন সকলকে। সৌজন্য বজায় রেখে বললেন, ‘‘আমার বিশ্বাস ট্রাম্প এক জন অসাধারণ প্রেসিডেন্ট হবেন।’’ কিন্তু মনের কষ্ট আর হতাশা গোপন করলেন না তাই বলে। খোলাখুলি স্বীকারই করলেন, এই ফল আশা করেননি। ‘‘আপনাদের মন যতটা ভেঙেছে, আমারও ততটাই।’’ দেশের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। হল না। সখেদে হিলারি বললেন, ‘‘কাচের ছাদটা আর ভাঙা হল না। তবে আমার বিশ্বাস, কোনও না কোনও দিন কেউ ভাঙবেনই।’’ পরাজয় স্বীকার করে নিয়েও মনে করিয়ে দিলেন, মূল্যবোধের লড়াই যেন জারি থাকে! খানিকটা প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরেই তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আমেরিকার স্বপ্ন অনেক বড় স্বপ্ন। সেখানে সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব লিঙ্গের, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের, প্রতিবন্ধীদের সকলের সমান অধিকার।’’

ট্রাম্পের প্রশংসার পাশাপাশিই গোটা বিশ্বকে মনে করিয়ে দিলেন আমেরিকা কীসে বিশ্বাস করে, কীসে নয়। বুঝিয়েছেন এ বার হোয়াইট হাউস ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া হলেও তাঁরা ফের লড়াইয়ে ফিরবেন।

ট্রাম্পের প্রচার টিমের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, হিলারি নিজে ফোন করেছিলেন বিজয়ী প্রেসিডেন্টকে। জবাবে ট্রাম্প নাকি তাঁকে বলেছেন, ‘‘আপনি এক জন স্মার্ট এবং দৃঢ় মহিলা। প্রচারও অসাধারণ ছিল। আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন