Kabul

তালিবান সন্দেহে হত সাধারণ মানুষ, ব্রিটিশ দৈনিকের তদন্তে দাবি, তৎপর সেনা

সে দিন বিলালের মুখে গুলি লেগেছিল, ইমরানের তলপেটে। আজও শরীরে সেই দাগ বহন করে চলেছে ১১ ও ১৩ বছরের কিশোর দু’টি। ঠাকুরদা আবদুল আজ়িজ়ের সঙ্গেই থাকে তারা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাবুল শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৩৬
Share:

বিলাল এবং ইমরান। ছবি সংগৃহীত।

৬ অগস্টের সেই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আবদুল আজ়িজ় ভাবেননি, ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাঁর পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। শিকারি বাজের ক্ষিপ্রতায় হামলা চালাবে ব্রিটিশ স্পেশাল এয়ার সার্ভিস। প্রাণ হারাবেন তাঁর পুত্র হুসেন ও পুত্রবধূ রুকিয়া। আর শরীরে ও মনে সারা জীবনের মতো ক্ষত বয়ে বেড়াবে তাঁর দুই নাতি— ইমরান ও বিলাল।

Advertisement

সালটা ২০১২। আফগানিস্তানের নিমরোজ প্রদেশের শিষ আবা গ্রামে সপরিবার আপাত শান্তির জীবন কাটাতেন আজ়িজ়। এক দশকেরও বেশি সময় জুড়ে তখন তালিবান-বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে পশ্চিমের দেশের সেনা জোট। নেতৃত্বে আমেরিকা। করা হচ্ছে একাধিক সশস্ত্র পদক্ষেপ। এরকমই এক পদক্ষেপের নাম ‘ডেলিবারেট ডিটেনশন অপারেশনস’, সহজ ভাষায়— ‘কিল/ক্যাপচার মিশন’। অর্থাৎ, তালিবানের সঙ্গে যোগ রয়েছে এই সন্দেহে হামলা ও সম্ভব হলে নিকেশ করা। এই অভিযান চালানো হত রাতে। ব্রিটিশ সেনার তরফে স্পেশাল এয়ার সার্ভিস (এসএএস) বা স্পেশাল বোট সার্ভিস (এসবিএস) চালাতো এই অভিযান। আবদুল আজ়িজ়ের বাড়িতে চালানো হয়েছিল এমনই অভিযান। সম্প্রতি একটি ব্রিটিশ দৈনিকের তদন্তে উঠে এসেছে এই তথ্য।

আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনের মতোই ছিল ৬ অগস্টের দিন। তফাত, সূর্যাস্তের পরে দু’জনের আগন্তুক এসে আশ্রয় চেয়েছিলেন। আফগানিস্তানে হঠাৎ অতিথি আসার বিষয়টি বেশ স্বাভাবিক, তাই অবাক হননি আজ়িজ়। তবে, আগন্তুকদের আচরণ সুবিধার মনে হয়নি তাঁর। রাত দশটায় বিদায় নেন ওই দুই আগন্তুক। শেষ রাতে গুলির শব্দে ঘুম ভাঙলে আজ়িজ় দেখেন, তাঁর হাতে হাতকড়া, চোখ কাপড়ে বাঁধা। বাইরে থেকে চিৎকার ভেসে আসছে তাঁর পরিজনের। ব্রিটিশ সেনা তাঁকে মারধর করে জানতে চায়, আগন্তুক দু’জন কে ছিল। এক সময় গুলি ও কান্নার শব্দ থেমে যায়, বাড়ি জুড়ে নেমে আসে শ্মশানের নৈঃশব্দ। ভোরবেলা বাইরে বেরিয়ে আজ়িজ় দেখেন, রক্তে ভেজা বিছানার উপর পড়ে রয়েছেন হুসেন ও রুকিয়া। তাঁদের মাথায় গুলি করা হয়েছে। ইমরান ও বিলাল নেই কোথাও। একই ভবিতব্য হয় প্রতিবেশী লাল মহম্মদেরও। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান তাঁর দুই ছেলে মহম্মদ ওয়ালি (২৬) ও মহম্মদ জুমা (২৮)। সব মিলিয়ে ৭ অগস্টের ‘শিষ আবা অভিযানে’ খুন হয়েছিলেন ছ’জন। বিলাল ও ইমরানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেনা ছাউনিতে।

Advertisement

স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে সে দিন স্থানীয় গভর্নর এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, বিদেশি শক্তির হাতে ছ’জন প্রাণ হারিয়েছেন। ব্রিটিশ রয়্যাল মিলিটারি পুলিশের এক প্রাক্তন তদন্তকারী এ বিষয়ে ব্রিটিশ দৈনিককে জানান, অভিযানটির এই পরিণতির কথা স্পেশাল ফোর্সের অবশ্যই মিলিটারি পুলিশকে জানানো উচিত ছিল। তবে, ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কথা মতো, মিলিটারি পুলিশকে বিষয়টা জানায়নি স্পেশাল ফোর্স। মন্ত্রক এ-ও জানিয়েছে, কোনও সেনা অভিযানে যদি সাধারণ নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলে সেনার তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

আজ়িজ়ের ছেলে হুসেন শিষ আবা গ্রামে দোকান চালাতেন, লাল মহম্মদের ছেলেরা ছিলেন কৃষক। ব্রিটিশ সেনা ধর্তব্যের মধ্যে আনেনি সেই তথ্য। সে দিন বিলালের মুখে গুলি লেগেছিল, ইমরানের তলপেটে। আজও শরীরে সেই দাগ বহন করে চলেছে ১১ ও ১৩ বছরের কিশোর দু’টি। ঠাকুরদা আবদুল আজ়িজ়ের সঙ্গেই থাকে তারা। সেনার তরফে আজ়িজ়কে ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তা নিতে রাজি হননি তিনি। ব্রিটিশ দৈনিকের তদন্তে এত তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ রয়্যাল মিলিটারি পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন