মানবীবিদ্যা চর্চা বন্ধ হল হাঙ্গেরিতে

বিজ্ঞান নয়, নেহাতই মতাদর্শ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি পড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। এই ‘কারণ’ দেখিয়ে মানবীবিদ্যা চর্চার সব পাঠ্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাঙ্গেরি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বুডাপেস্ট শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৩:১৭
Share:

বিজ্ঞান নয়, নেহাতই মতাদর্শ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি পড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। এই ‘কারণ’ দেখিয়ে মানবীবিদ্যা চর্চার সব পাঠ্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাঙ্গেরি। শিক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘বিষয়টি নিয়ে যাঁরা পড়াশোনা করেন, চাকরির বাজারে তাঁদের বিশেষ দাম নেই।’’ সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে, আন্তর্জাতিক স্তরেও। অনেকেই বলছেন, সরকারের রক্ষণশীল নীতির সমালোচনা করে যে-সব স্বর, এ ভাবেই তাদের দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান।

Advertisement

সেন্ট্রাল ইউরোপীয় ইউনিভার্সিটি (সিইউই) এবং এতোভোস লোরান্দ ইউনিভার্সিটি (ইএলটিই)— হাঙ্গেরিতে শুধু এই দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতকোত্তর স্তরে মানবীবিদ্যা চর্চা পড়ানো হয়। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বছর যাঁরা সেই পাঠ্যক্রমে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন, তাঁরা আগামী বছর শংসাপত্র পাবেন। কিন্তু সামনের বছর থেকে এই পাঠ্যক্রমের জন্য শিক্ষা মন্ত্রক কোনও অনুদানও দেবে না।

এই বিজ্ঞপ্তি পেয়ে সিইউই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে তাঁরা ‘হতবাক’। তবে নিউ ইয়র্কের বার্ড কলেজের সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থাপনায় যে সব পাঠ্যক্রম চালায় সিইউই, সেখানে মানবীবিদ্যায় যে কেউ গবেষণা করতেই পারেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।

Advertisement

পশ্চিমের প্রায় সব দেশেই মানবীবিদ্যা চর্চা একটি জনপ্রিয় বিষয়। ক্রোয়েশিয়া থেকে আয়ারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিটি দেশে অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবীবিদ্যা চর্চা পড়ানো হয়। উত্তর আমেরিকাতেও এই বিষয়টি প্রবল জনপ্রিয়। আমেরিকা ও কানাডায় অন্তত সাড়ে তিনশো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে এই বিষয়টি পড়ানো হয়। এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন নামজাদা প্রতিষ্ঠানেও মানবীবিদ্যা চর্চার পড়ুয়া প্রচুর।

তা হলে হাঙ্গেরি কেন অন্য পথে হাঁটতে চাইছে?

সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘‘মার্কসবাদের মতোই একটা মতাদর্শ এই মানবীবিদ্যাচর্চা।’’ যা শুনে বিশিষ্ট জনদের একটা বড় অংশ বলছেন, এটা প্রধানমন্ত্রী ওর্বানের দমনমূলক নীতির সাম্প্রতিকতম নজির। অত্যন্ত রক্ষণশীল বলে এমনিতেই দুর্নাম রয়েছে ওর্বানের। ইউরোপের প্রায় সব দেশই যখন শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, তখন তাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এই প্রধানমন্ত্রী। যে সব বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সরকারি নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলে, তাদেরও নানা ভাবে চুপ করিয়ে দেয় সরকার। তাই প্রশ্ন উঠছে, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের স্বর তৈরিই না-হয়, মানবীবিদ্যা চর্চা বন্ধ করে কি তার রাস্তাই পাকা করার চেষ্টা করছেন ওর্বান?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন