যে কোনও দিন শেষ হয়ে যাব, বলত শাহ

এএফপির অফিসের খুব কাছেই ঘটেছিল বিস্ফোরণ। তছনছ হয়ে গিয়েছিল গোটা অফিস। খুব চিন্তা নিয়ে ফোন করেছিলাম ওকে। কথা বলতে বলতে বুঝেছিলাম, খুব ভয় পেয়েছে। ভয়টা কেমন, পেশার সূত্রে খানিকটা আমার জানা। অজানা মৃত্যুভয় সারাক্ষণ তাড়া করে ফেরে।

Advertisement

দেশকল্যাণ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ০৪:০৮
Share:

গত বছর ৩১ মার্চ কাবুলে বিস্ফোরণের পরে এএফপি-র দফতরে পড়া মর্টারের অংশ হাতে শাহ মারাই। ছবি: ফেসবুক

এক বছর আগে ৩১ মার্চ রাতে শোনা কথাটা বার বার মনে পড়ছে। ‘যে কোনওদিন শেষ হয়ে যাব’! ফোনে বলেছিল আমার বন্ধু, প্রাক্তন সহকর্মী, এএফপি-র চিত্রসাংবাদিক শাহ মারাই। সে দিনও কাবুলে একাধিক বিস্ফোরণ। এএফপির অফিসের খুব কাছেই ঘটেছিল বিস্ফোরণ। তছনছ হয়ে গিয়েছিল গোটা অফিস। খুব চিন্তা নিয়ে ফোন করেছিলাম ওকে। কথা বলতে বলতে বুঝেছিলাম, খুব ভয় পেয়েছে। ভয়টা কেমন, পেশার সূত্রে খানিকটা আমার জানা। অজানা মৃত্যুভয় সারাক্ষণ তাড়া করে ফেরে।

Advertisement

সোমবার সকালে টেলিভিশনে কাবুলে বিস্ফোরণের খবর পেয়েই এএফপি-র আর এক বন্ধুকে ফোন করলাম। মুহূর্তের জন্য সব অন্ধকার মনে হল। শাহ আর নেই। ঠিক এই ভয়টাই তো ও পেত। বিস্ফোরণ কভার করতে গিয়ে মৃত্যু হল সেই বিস্ফোরণেই। ঘরে ছয় ছেলে-মেয়ে। মনে পড়লেই চোখ ভিজে যাচ্ছে। ২০১০-এ শেষবার কাবুল ছাড়ার সময় জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘একবার কলকাতায় গিয়ে রসগোল্লা খাব’। আমিও কথা দিয়েছিলাম, খাওয়াব।

সে বার আমার ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ ছিল ডাচ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ওমর আবদুল্লার গ্রাম উরুজগান প্রদেশে যাওয়ার। জায়গাটা সুবিধের নয়। গাড়িতে ওঠার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে শাহের সরল আকুতি, ‘‘আই ওয়ান্ট টু সি ইউ ব্যাক ইন ওয়ান পিস।’’ কথাটা যে কত গভীর, তা ওখানে না গেলে বোঝা দায়।

Advertisement

২০০১ সালের জুলাইয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে শাহের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। তখনও মূলত ড্রাইভার। লম্বা ছিপছিপে চেহারার হাসিখুশি ছেলে। কয়েক দিনের মধ্যেই এমন ভাব হয়ে গেল যেন বহু দিনের আপনজন। আমার ভার পড়ল মারাইকে ডিএসএলআর (ডিজিটাল সিঙ্গল লেন্স রিফ্লেক্স) ক্যামেরার খুঁটিনাটি বোঝানো। আর ও আমাকে কাবুলের রাস্তায় লেফট হ্যান্ড ড্রাইভিংয়ের কায়দা শেখাতে শুরু করল। প্রায় দু’মাস ছিলাম একসঙ্গে। পরে এএফপি-র কাবুল ব্যুরোর মুখ্য চিত্র সাংবাদিক হয়েছিল শাহ।

এখন সবই অতীত। বার বার শুধু মনে পড়ছে ফোনে শেষ কথাগুলো। কোথাও একটা বিষাদ, ভয় লেগে ছিল শাহের কথা। কাবুল শহরেও যেখানে জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফেরা সৌভাগ্যের কথা, সেখানে একজন চিত্রসাংবাদিকের জীবন তো খুব সুখের হওয়ার কথা নয়। হলও না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন