সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের দাবি, উহান সংলাপের পরে ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক সহজ হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে আস্থাও বেড়েছে।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এই দাবির সারবত্তা প্রাথমিক ভাবে প্রমাণ হতে চলেছে আগামী সপ্তাহে। নয়াদিল্লি আসছেন চিনের স্টেট কাউন্সিলার তথা নিরাপত্তা বিভাগীয় মন্ত্রী ঝাও কেঝি। উদ্দেশ্য, গত তিন বছর ধরে ঝুলে থাকা দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তি সই। সাউথ ব্লক চেষ্টা করছে, উহানের উষ্ণতা ফিকে হওয়ার আগেই নিজেদের সুবিধাজনক শর্তে ওই চুক্তি সারতে। সাউথ ব্লকের মূল উদ্দেশ্য, চিনের সঙ্গে সম্পর্কের লোহা গরম থাকতে থাকতে এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া।
২০১৫ সালে বেজিং গিয়ে এই দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তিটি সই করার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। ২০১৬ সালে এই ক্ষেত্রে আরও একটি বিফল চেষ্টা হয়। গত বছর ডোকলাম কাণ্ডের আগে ভারতের কাছে খসড়াটি চেয়ে চিন জানায়, তারা চুক্তিতে কিছু বদল চায়। গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, মাদক চোরাচালান, মানুষ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে একটি সামগ্রিক চুক্তি না করে (যেটি নাকি ছিল ভারতের প্রস্তাব) প্রতিটি ক্ষেত্র ধরে ধরে পৃথক পৃথক চুক্তির কথা বলে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি চিনের প্রস্তাবে ভারত রাজি হয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতার প্রশ্নে তারা চিনকে আরও কঠোর এবং কার্যকরী ভূমিকায় দেখতে চাইছে। এই সূত্রেই চিন-মায়ানমার সীমান্তে লুকিয়ে থাকা আলফা নেতা পরেশ বড়ুয়াকেও পেতে চাইছে সাউথ ব্লক।
তবে ‘কঠোর ভূমিকার’ প্রশ্নটি পাক খাচ্ছে পাকিস্তানকে নিয়েই। নয়াদিল্লির আশা, চিনের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে জইশ ই মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এক ধাপ এগোনো যাবে। এখনও পর্যন্ত মাসুদ চিনের রক্ষাকবচ পাচ্ছে। পাকিস্তানের মাটিতে ভারত বিরোধী সন্ত্রাস নিয়েও চিনের কাছে বহু বার অভিযোগ জানিয়েছে নয়াদিল্লি। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা দেখতে চাইছেন, উহান-উষ্ণতা ইসলামাবাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ রুখতে এ বার সহায়ক হয় কিনা। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছিল, লস্কর প্রধান হাফিজ সইদকে পশ্চিম এশিয়ায় পাচার করে দিয়েছে বেজিং। চিন অবশ্য এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
২০১৭ সালে জিয়ামেন-এ ব্রিকস সম্মেলনে লস্কর বা জইশের মতো পাক জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চিন। নয়াদিল্লির আশা বাড়িয়ে এ বছর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস-পুঁজি রুখতে গঠিত এফএটিএফ (ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স)-এর বৈঠকেও ওই অবস্থানেই অটল থেকেছে তারা। কিন্তু চিনের ক্ষেত্রে না আঁচালে বিশ্বাস নেই, বলেই মনে করছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা।