মার্কিন সেনা ফিরলে পাক কাঁটাই ভাবনা

সদ্য শেষ হয়েছে তালিবানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাথমিক শান্তি আলোচনা। কিন্তু কাঁটামুক্ত হয়েছে কি শান্তির পথ?  নিঃসন্দেহ নয় দিল্লি।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩০
Share:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি এপির সৌজন্যে।

সদ্য শেষ হয়েছে তালিবানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাথমিক শান্তি আলোচনা। কিন্তু কাঁটামুক্ত হয়েছে কি শান্তির পথ? নিঃসন্দেহ নয় দিল্লি। কূটনীতিকরা অবশ্য একটি বিষয়ে একমত যে, এই পরিস্থিতি একই সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে ভারতকে। তাই দেরি না করে অঙ্ক কষতে শুরু করেছে সাউথ ব্লক।

Advertisement

আমেরিকার সঙ্গে তালিবানের কোনও চুক্তি এখনও হয়নি। যেটা হয়েছে, সেটা হল প্রাথমিক আলোচনা শেষে চুক্তি কাঠামোর খসড়া। তালিবান নেতৃত্ব কথা দিয়েছেন, আফগান ভূখণ্ড আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের (আইএস, আল কায়দা, লস্কর) কাজে ব্যবহার করা হবে না। বিনিময়ে আমেরিকা ধাপে ধাপে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে।

যেটি বলা হচ্ছে না, তা হল আফগানিস্তানে এর পর ভারত ও পাকিস্তানের ভূমিকা কী হবে?

Advertisement

পাকিস্তান বরাবরই বলে এসেছে, আফগানিস্তানে রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা কর্মকাণ্ডে ভারতের কোনও ভূমিকা নেই, থাকতে পারে না। ভারতও আফগানিস্তানের পরিকাঠামো পুনর্গঠন ও মানবিক সাহায্যের দিকেই মূলত নজর দিয়ে এসেছে। মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার পরেও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে আগের মতোই সাহায্য করে যাবে ভারত। কিন্তু তার সঙ্গে আফগানিস্তানে পাক ভূমিকা নিয়েও ঢের বেশি সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে দিল্লিকে। দেখতে হবে, মার্কিন বাহিনী সরে যাওয়ার পরে ইসলামাবাদ যেন ভারতের বিরুদ্ধে কোনও ছক কষতে না পারে সে দেশে। নতুন কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে না পারে দিল্লিকে। কাজটা জটিল ও কঠিন। সাউথ ব্লকের এক কর্তার কথায়, ‘‘পাকিস্তান যদি আফগান সরকারে নিজেদের লোক বসিয়ে দিতে পারে, তবে ১৭ বছর ধরে পরিকাঠামো ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভারত যে ভাবমূর্তি সেখানে তৈরি করেছে তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে।’’

আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা না থাকলে নিজেদের নিরাপত্তার প্রশ্নেও ভারতকে সর্বদা কাঁটার উপরে বসে থাকতে হবে। ইসলামাবাদ যাতে তালিবানকে ভারত-বিরোধিতায় উদ্বুদ্ধ করতে না পারে এবং এ বিষয়ে যাতে তাদের আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে রাখা যায়—সেটাকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে ভারতের বিদেশ নীতিতে।

আর এই সুত্রেই রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ানোরও একটা ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে মনে করছেন কূটনীতি বিশেষজ্ঞরা। মস্কো নিজের নিরাপত্তার কারণেও আফগানিস্তানের দিকে নজর রেখে চলে। আফগানিস্তানে ভারত-বিরোধী ছক কষা রুখতে দিল্লি-মস্কো কাছাকাছি এলে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার একটি মডেল তৈরি করা প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সাংহাই কোঅপারেশনের (এসসিও)-র বহুপাক্ষিক মঞ্চে ভারত প্রবেশ করেছিল রাশিয়ারই পৃষ্ঠপোষকতায়। এতে আফগানিস্তান নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে সাউথ ব্লকের একটি বলার জায়গা তৈরি হয়। কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন ও ইরানের সঙ্গে ভারসাম্য তৈরি করা বা চাপ বাড়ানোর জন্য এমনিতেও মধ্য এশিয়ায় বড় ভূমিকায় ভারতকে দেখতে চাইছে রাশিয়া। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এখনও কাবুল প্রশ্নে ভারতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেনি। মোদী জমানায় রিয়াধ ও আবু ধাবির সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কে যে রকম উন্নতি হয়েছে, তাতে আফগানিস্তানের সুস্থিতির বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচিতে সহজেই নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

তালিবানের সঙ্গে মার্কিন বোঝাপড়া যা-ই হোক না কেন, তালিবানের সঙ্গে সংযোগের ‘চ্যানেল’ পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করতে পারবে না ভারত। তালিবান গোষ্ঠী ভোটে লড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শামিল হতে চাইবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয় যে। তবে সাউথ ব্লকের মতে, এই মুহূর্তে ভারতের লক্ষ্য হবে সতর্ক ভাবে কিছু দেশকে সঙ্গে নিয়ে আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার জন্য ঝাঁপানো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন