'আমি পাকিস্তানি, কিন্তু যুদ্ধ চাই না', অভিনন্দনের মুক্তি চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে তরুণী

আমার মতো পাকিস্তানের বহু যুদ্ধবিরোধী মানুষ সেই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন। এই প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিলেন এই দেশের বহু মানবাধিকার ও সমাজকর্মী এবং শিল্পীরা।

Advertisement

সেহর মির্জা

লাহৌর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০১:৩৫
Share:

লাহৌর প্রেস ক্লাবের সামনে সেহর মির্জা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেওয়া।

সম্প্রতি ভারত এবং পাকিস্তানে যে যুদ্ধোন্মাদনা শুরু হয়েছে, এ দিন তার প্রতিবাদে লাহৌরের নাগরিক সমাজ এখানকার প্রেস ক্লাবের সামনে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে। আমার মতো পাকিস্তানের বহু যুদ্ধবিরোধী মানুষ সেই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন। এই প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিলেন এই দেশের বহু মানবাধিকার ও সমাজকর্মী এবং শিল্পীরা। ছিলেন ফৈয়জ় আহমেদ ফৈয়জ়ের কন্যা সালিমা হাসমি, আসমা জাহাঙ্গিরের মেয়ে মুনিজ়া জাহাঙ্গির, চিত্রপরিচালক আম্মর আজ়িজ়, নাট্যকার ও সাংবাদিক সৈয়দ আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী মরিয়ম সৈয়দ, সমাজকর্মী মুসরত মির্জ়া। প্রায় দু’শো জন এই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। ভূখণ্ডে ঘটে চলা হিংসা ও নাশকতার বিরুদ্ধে স্লোগান দিই আমরা।

Advertisement

আমাদের আরও দাবি ছিল, ভারতের অভিনন্দন বর্তমানকে তাঁর দেশে ফিরিয়ে দিতে হবে। পরে জানতে পারলাম, আমরা যখন প্রেস ক্লাবের সামনে এই দাবি তুলছিলাম, সেই সময়েই অভিনন্দনের মুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। দারুণ এই খবরটা পেয়ে সত্যিই আমরা খুব খুশি হয়েছি।

পুলওয়ামা হামলার পরে সোশ্যাল মিডিয়া হিংসাত্মক মন্তব্যে ভরে গিয়েছিল। সীমান্তের ও-পারের মানুষ জন তখন রাগে-যন্ত্রণায় ফুঁসছেন। অথচ, সীমান্তের এ-পারে তখন অদ্ভুত এক নীরবতা। আমার মনে হয়েছিল এই সময়ে ভারতের বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সহমর্মিতা দেখানো উচিত। সেই ভাবনা থেকেই, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের মানুষগুলির জন্য ভালবাসা, সহানুভূতির বার্তা দেওয়ার জন্য, আমি #অ্যান্টিহেটচ্যালেঞ্জ প্রচার শুরু করি। আমার দেশের বহু মানুষ পুলওয়ামা কাণ্ডের বিরোধিতা করে, শান্তির বার্তা দিতে এই উদ্যোগে শামিল হন। বর্তমানে আমরা যখন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানতে পারছি যে, আমাদের দেশ এবং ভারতের কূটনীতি এখন এমন এক বিন্দুতে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে যে কোনও মুহূর্তে একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে, আমার মনে হয় আবার মুখ খোলা উচিত। আমি আবারও বলতে চাই, যুদ্ধ মানবতাকে ধ্বংস করে। আর কিছুই পাওয়া যায় না এর থেকে। আবারও এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, যুদ্ধবিরোধী কবি সাহির লুধিয়ানভির কথাটি ‘‘ওয়ার ইটসেল্ফ ইজ় আ প্রবলেম. হাউ উড ওয়ার রিজ়লভ প্রবলেমস?’’

Advertisement

আরও পড়ুন: যুদ্ধ কোনও সমাধান নয়, ফের বললেন ইমরান

পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ভারতের সঙ্গে মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। মৌলবাদ ভূখণ্ডের শান্তি বিঘ্নিত করে এবং এই সমস্যা আমাদের দুই দেশেরই। আমাদের একসঙ্গে এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। এক ইসঙ্গে বলব, দুই দেশেরই উচিত প্রতিরক্ষা বাজেটে ব্যয়বরাদ্দ কমিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অসাম্য, মহিলাদের উপর হিংসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাবের মতো দেশের সাধারণ অথচ জরুরি সমস্যাগুলির দিকে নজর দিক।

আরও পড়ুন: ফের রাষ্ট্রপুঞ্জে মাসুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণার আর্জি

আমার মনে হয় সেটাই একমাত্র শান্তি আনতে পারে এবং ভালবাসাই পারে হিংসাকে জয় করতে।

(লেখক পাকিস্তানি সাংবাদিক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন