India-Russia

মস্কোয় উষ্ণ বার্তা দিয়ে নীতি-নথিতে স্বাক্ষর জয়শঙ্করের

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, জয়শঙ্কর সাউথ ব্লকের স্বভাবসিদ্ধ নীতি অনুযায়ী ভারসাম্যের নীতিকেই সামনে নিয়ে আসতে চেয়েছেন আলোচনায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩০
Share:

বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।

যুদ্ধের জেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক গত দু’বছর ঘটেনি। কিন্তু নয়াদিল্লি-মস্কোর যূথবদ্ধতা যে তাতে আদৌ ক্ষুণ্ণ হয়নি, বছরের শেষে শীতার্ত মস্কোর মাটি থেকে সেই উষ্ণ বার্তাই দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আজ রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁর বক্তব্য, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী এবং সুস্থির। বিশেষ কৌশলগত সহযোগী দুই দেশের যে রকমটা হওয়া উচিত সে রকমই। বহুপাক্ষিকতা, বহুমেরু বিশ্ব, দক্ষিণের গরিব দেশগুলির সামনে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে আমাদের।”

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, “রাষ্ট্রপুঞ্জ, এসসিও এবং ব্রিকস-এ আমাদের নেওয়া অবস্থান ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ককে আরও পোক্ত করেছে। ভারত এবং রাশিয়া চায়, উদার এবং ন্যায্য এক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা।” এর সঙ্গে লাভরভ জুড়েছেন, “ভারত ও রাশিয়া সম্পর্কের ভিত্তি হল পারস্পরিক সম্মান যা রাজনৈতিক ওঠাপড়ার সঙ্গে বদলায় না।”

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, জয়শঙ্কর আজ সাউথ ব্লকের স্বভাবসিদ্ধ নীতি অনুযায়ী ভারসাম্যের নীতিকেই সামনে নিয়ে আসতে চেয়েছেন আলোচনায়। সংলাপ এবং কূটনীতিই যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে থামাতে পারে সে কথা এক দিকে বলেছেন তিনি। অন্য দিকে, মস্কোর সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, মহাকাশ এবং পরমাণু ক্ষেত্রগুলিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য যথেষ্ট উদ্যোগী হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা ও ইউরোপের রক্তচক্ষু তথা নিষেধাজ্ঞাকে আপাতত আমল দেননি তিনি। আগামী চার বছর দ্বিপাক্ষিক নীতি কোন অভিমুখে যাবে, তার জন্য কূটনৈতিক আলোচনার একটি নথিতে উভয়ে সই করেছেন। আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ সংযোগ করিডর-এর ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো, পারস্পরিক বিনিয়োগের সুরক্ষায় আইনি কাঠামো তৈরি করার মতো বিষয়গুলিতে ঐকমত্য হয়েছেন জয়শঙ্কর এবং লাভরভ।

Advertisement

বৈঠকের পরে সাংবাদিক বৈঠকে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীকে নয়াদিল্লি সম্পর্কে উদার মনোভাব নিতেই দেখা গিয়েছে। পশ্চিমের প্রবল চাপের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটির নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা মস্কো পেয়ে এসেছে ইউক্রেনে হামলার পর থেকে। ভারত রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা তো কমায়নি, উল্টে বাড়িয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে রাশিয়ার থেকে সর্বাধিক অশোধিত তেল আমদানি করেছে ভারত গত দেড় বছরে। রাষ্ট্রপুঞ্জে শত চাপ সত্ত্বেও রাশিয়ার নাম করে ইউক্রেন হামলার জন্য আনা কোনও প্রস্তাবে ভোট দেয়নি মোদী সরকার। একবারই প্রধানমন্ত্রী মোদী সরাসরি পুতিনকে বলেছেন “এই সময় যুদ্ধের নয়।” কিন্তু এই আপ্তবাক্যকে কাজে পরিণত করার জন্য মস্কোকে চাপ দিতে ভাতে মারার কোনও চেষ্টা মোদী সরকার করেনি।

সাংবাদিক সম্মেলনে আজ লাভরভ দরাজ ভাবে জানিয়েছেন, ভারতের সামরিক ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন নতুন রাস্তা খোলার যে প্রয়োজন রয়েছে তা রাশিয়া বোঝে। মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতিকে সমর্থন করার পাশাপাশি আধুনিক অস্ত্র তৈরির প্রকল্পগুলিতেও মস্কো যোগ দেবে বলে জানিয়েছেন লাভরভ। দক্ষিণ ভারতে কুড়ানকুলাম পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সইসাবুদও সেরেছেন দু’দেশের এই দুই নেতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন