আলিঙ্গন: ‘গ্র্যান্ড কলার’ সম্মানে ভূষিত করার পরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। শনিবার রামাল্লায়। ছবি: এপি।
বিশ্ব স্বীকৃত ‘স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র’ হিসেবে প্যালেস্তাইনকে দেখতে চায় ভারত। সে দেশের মাটিতে পা দিয়ে এই বার্তা দিয়ে এলেন নরেন্দ্র মোদী। ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন— দুই দেশের সঙ্গেই ভারত যে সম্পর্ক রেখে চলার পক্ষপাতী সে কথাও স্পষ্ট করেন তিনি।
৩০ বছর আগে প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সে দেশে যাননি। সে অর্থে এ দিন মোদীর রামাল্লা সফর ছিল ঐতিহাসিক। তিন ঘণ্টার জন্য রাজধানী রামাল্লায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জর্ডনের রাজধানী আম্মান থেকে একটি চপারে শনিবার সকালে রামাল্লায় যান মোদী। রয়্যাল জর্ডনিয়ান চপার এবং ইজরায়েলি বায়ুসেনার চপার তাঁকে এসকর্ট করে নিয়ে যায় রামাল্লায়। মোদীকে সেখানে স্বাগত জানান প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আব্বাস।
সেখান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যান রামাল্লায় প্যালেস্তাইন মুক্তি আন্দোলনের (পিএলও) নেতা ইয়াসের আরাফতের স্মারক ভবনে, শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করতে।
তার পর প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দু’দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
প্যালেস্তাইনের মাটিতে পা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর টুইট
দিল্লির বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে ভারতের তরফে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হয়ে উঠলেও, প্যালেস্তাইনের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ দিনের সম্পর্কে তার কোনও প্রভাব পড়বে না। সেই লক্ষ্যেই দু’দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তিও হয়েছে।
অ্যালবাম থেকে: প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আব্বাস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত বছর, দিল্লিতে।
আরও পড়ুন- ভারসাম্যের পথে এ বার প্যালেস্তাইনে মোদী
যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্তাইনে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত করতে বেইট সাহুরে ৩ কোটি ডলারের একটি মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন মোদী। এ ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক একাধিক বিষয়ে চুক্তি হয়েছে এই সফরে। মোদী এ দিন ইয়াসের আরাফতের সমাধিস্থলে যান। সেখানে পুষ্পস্তবক দিয়ে প্রয়াত নেতাকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি আরাফত মিউজিয়ামও ঘুরে দেখেন। রাতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে পৌঁছেছেন মোদী।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমারের টুইট: ইতিহাস! আম্মান থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিয়ে উড়ল চপার। লক্ষ্য প্যালেস্তাইন।
প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রী মোদীকে তিনি বলেছেন- ‘মহান অতিথি’। গত বছর ভারত সফরে এসেছিলেন প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আব্বাস। আরব আমিরশাহি ও ওমান সফর শেষে সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ফিরে আসবেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন- ভারত কি ঝুঁকছে ইজরায়েলের দিকে? বিশেষজ্ঞেরা বললেন...
১৯৪৮ সালে প্যালেস্তাইনের দাবিকে কামান ও বন্দুকে দাবিয়ে ইজরায়েল একতরফা ভাবে নিজেকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার পর থেকেই প্যালেস্তাইনের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে এসেছে ভারত। রাষ্ট্র না হওয়া সত্ত্বেও, ১৯৭৪ সালে প্যালেস্তাইন নির্জোট দেশগুলির জোটের সদস্য হতে পেরেছিল মূলত, ভারতের জোরালো সমর্থনেই।
জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ। ছবি- সংগৃহীত।
তার পর ১৯৮৮ সালে যখন ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্ককে দখলমুক্ত করার জন্য ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম বার ‘ইন্তিফাদা’ শুরু হল পিএলও নেতা ইয়াসের আরাফতের নেতৃত্বে, তখন তাকে পুরোদস্তুর সমর্থন করে গিয়েছে ভারত। ওই সময় দিল্লিতে এলে আরাফতকে সাদর অভ্যর্থনা জানান ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী।
কিন্তু গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ইজরায়েল সফরের পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, প্যালেস্তাইনের প্রতি এত দিনের অবস্থানে কি আর থাকবে ভারত?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেল আভিভ থেকে ইজরায়েলের মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর ভারতের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছিল, গত এক বছরে আমেরিকা ও ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ‘সুমধুর’ হয়ে ওঠায়।
কিন্তু মোদী সরকার ভারতের পুরনো অবস্থান বদলায়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে যে প্রস্তাব গৃহীত হয় রাষ্ট্রপুঞ্জে, তাতে ১২৭টি দেশের সঙ্গে ভারতও ভোট দেয় আমেরিকার বিরুদ্ধে। যা আসলে ইজরায়েলেরও বিপক্ষে যায়। কারণ, পূর্ব জেরুজালেমকে প্যালেস্তাইনের রাজধানী করার দাবি বরাবরই জানিয়ে আসছে আরব দেশগুলি। ইজরায়েল তা মানতে চায়নি বলেই ’৬৭-তে হয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ।
দিল্লি যে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইন, দুই দেশের মধ্যেই ভারসাম্য বজায় রেখে চলবে, তার জোরালো ইঙ্গিত দিতে জানুয়ারিতে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানইয়াহুর ভারত সফরের সময়েই দিল্লির তরফে ঘোষণা করা হয়, ফেব্রুয়ারিতে প্যালেস্তাইন সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
যুগ্ম সচিব বি বালা ভাস্কর শুক্রবার বলেন, ‘‘ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইন দু’টি দেশকেই আমরা স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আমাদের পক্ষে প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। এটাই আমাদের নীতি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেটাই বোঝাতে চাইছেন এ বারের প্যালেস্তাইন সফরে।’’