বিক্ষোভের বলি দুই, ফের হুমকি ইরানের

বিক্ষোভকারীদের একহাত নিতে গিয়ে জাতীয় টেলিভিশনে তোপ দাগলেন ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী আব্দলরহমান রহমানি ফজলি-ও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

তেহরান শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১২
Share:

বিক্ষোভ: লন্ডনে ইরানের দূতাবাসের সামনে। রবিবার। ছবি: রয়টার্স।

রোজকার বাজারে আগুন। যার বিরোধিতায় তিন দিন ধরে জ্বলছে ইরানের একটা বড় অংশ। মিছিল থেকে ধিকি ধিকি স্লোগান উঠছে সরকারের বিরুদ্ধেও। আর আজ এর জেরে দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর খবর মিলতেই সুর চড়াল প্রশাসন। এমন রক্তক্ষয়ী আন্দোলন চলতে থাকলে তা শক্ত হাতে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিল সে দেশের রেভেলিউশনারি গার্ড বাহিনী।

Advertisement

বিক্ষোভকারীদের একহাত নিতে গিয়ে জাতীয় টেলিভিশনে তোপ দাগলেন ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী আব্দলরহমান রহমানি ফজলি-ও। তাঁর কথায়, ‘‘আন্দোলনের নামে এ ভাবে যাঁরা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে দেশের আইনশৃঙ্খলা তছনছ করছে, খেসারত তাঁদের দিতেই হবে।’’ প্রশাসনের দাবি, এই বিক্ষোভ শুধুই মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে নয়। তা হলে, মিছিলে রাজনৈতিক স্লোগান উঠত না!

আরও পড়ুন: আরও এক জনের মৃত্যু গাজায়

Advertisement

অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে ২০০৯-এ ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়েছিল ইরানে। মাঝে আর তেমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি প্রশাসন। এ বারও প্রথমটায় বিক্ষোভের আঁচ তেমন ভাবে আন্দাজ করা যায়নি। বছর শেষের ঠিক মুখে গত শুক্রবার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মাশহাদ শহরে প্রথম শুরু হয় আন্দোলন। ক্রমশ তা ছড়াতে থাকে অন্যত্র। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেও আজ বিক্ষোভ দেখান একাংশ। খোরামাবাদ, আহভাজ থেকে শুরু করে জানজান শহরের মিছিলে এ দিন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খামেনেই-এর পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান ওঠে। সরকার ফেলে দিতেও মরিয়া একাংশ। আজ রাজধানী তেহরানে বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছে। প্রশাসনের দাবি, দোকান-বাজার থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক-অফিস-আবাসনেও আগুন ধরাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

দেশ জুড়ে নানা জায়গার বিক্ষোভ মিছিলের ছবি-ভিডিও কাল থেকেই ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন। সমঝে চলতে বলা হয়েছে সংবাদমাধ্যমকেও। ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দরুদ শহরে আন্দোলনে নেমে দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু সেনা বা পুলিশের গুলিতেই এই প্রাণহানি কি না, এখনও পর্যন্ত তা স্পষ্ট নয়। কাল রাত থেকে মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রেখেছিল প্রশাসন। আজ নেট ফিরলেও স্বস্তি অধরাই। ইরানের জাতীয় টিভিতে কাল ঘোষণা করা হয়, কাল দেশের বিভিন্ন শহরে সরকারে সমর্থনেও হাজার-হাজার মানুষ মিছিলে নামেন।

কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে ফের সিঁদুরে মেঘ দেখছে প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানির সরকার। ২০১৩-য় ক্ষমতায় এসে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন রৌহানি। কিন্তু অভিযোগ, সে সবের কোনওটাই পূরণ হয়নি গত চার বছরে। বরং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য আর বেকারত্ব। বিক্ষোভকারীদের একটা বড় অংশ তাই সমাজের নীচুতলার মানুষ বলে জানাচ্ছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।

২০০৯-এর বিক্ষোভ কড়া হাতে দমন করেছিল ইরান। এ বারও সরকারি তরফে ঠিক তেমনটাই হুঁশিয়ারি মিলেছে। কালও একই রকম বার্তা দিয়েছিল রৌহানির প্রশাসন। কিন্তু অভিযোগ, শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এক অজ্ঞাতপরিচয় পোস্টে ফের বড় আকারে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। তিন দিন পার করেও ইরান তাই অগ্নিগর্ভই। পরিস্থিতি সামলাতে রৌহানি প্রশাসনকে যে ভাবে সুর চড়াতে শোনা গিয়েছে, তার বিরোধিতায় কালই তোপ দাগেন মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘ইরানের জনগণ পরিবর্তন চান। দমনপীড়ন চালিয়ে কোনও সরকার চিরকাল টিকে থাকতে পারে না। গোটা বিশ্ব নজর রাখছে ইরানে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন